হাতে হাতে আর নয়, ভোটকর্মীদের পারিশ্রমিক এ বার সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই জমা পড়বে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে ভোটকর্মীদের কাছ থেকে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। গত মাসেই কর্মীদের একটি ফর্ম দেওয়া হয়েছিল। কর্মীরা তা পূরণ করে জমা দিয়েছেন। সেখানেই উল্লেখ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট ভোটকর্মীর অ্যাকাউন্ট নম্বর, কোন ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্ট রয়েছে প্রভৃতি। সার্বিক ভাবে এই প্রথম ভোটকর্মীদের পারিশ্রমিক সরাসরি তাঁদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে। গত লোকসভা-বিধানসভা কিংবা পঞ্চায়েত ভোটেও পারিশ্রমিক বাবদ টাকা কর্মীদের হাতে হাতেই দেওয়া হয়েছে।
এ বার লোকসভা ভোটের জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৫ হাজারেরও বেশি ভোটকর্মী প্রয়োজন। এঁদের একাংশের সমবায় ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। যে ব্যাঙ্ক ‘কোর ব্যাঙ্কিং’-এর আওতায় নেই। এ ক্ষেত্রে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়বে কী ভাবে? জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সামান্য ক’য়েক জনের সমবায় ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।
ভোটকর্মীরা পারিশ্রমিক হিসেবে কত টাকা করে পাবেন, ইতিমধ্যে তাও চূড়ান্ত হয়েছে। গত মাসেই এ সংক্রান্ত নির্দেশনামা আসে জেলায়। লোকসভায় বুথপিছু ৪ জন করে ভোটকর্মী থাকবেন। এর মধ্যে একজন প্রিসাইডিং অফিসার। বাকি ৩ জন পোলিং অফিসার। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রিসাইডিং অফিসারেরা পারিশ্রমিক বাবদ ১,৯০০ টাকা করে পাবেন। এর মধ্যে দু’দফায় প্রশিক্ষণ বাবদ ৭০০ টাকা। অন্য দিকে, পোলিং অফিসারেরা ১,১৫০ টাকা করে পাবেন। এর মধ্যে দু’দফায় প্রশিক্ষণ বাবদ ৫০০টাকা। ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে আগামী ৫ এপ্রিল থেকে। চলবে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কোথায় কোথায় প্রশিক্ষণ হবে, তা চূড়ান্ত হয়েছে। সুষ্ঠু ভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিয়েছেন জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি। সেই মতো জেলার ওসি (ইলেকশন) বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক শম্পা হাজরা প্রমুখ আধিকারিকেরা সব ব্যবস্থা করছেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে ৫,৩৩৭টি বুথ রয়েছে। বুথপিছু ৪ জন করে ভোটকর্মী থাকবেন। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ভোটকর্মী প্রয়োজন ২১,৩৪৮ জন। সঙ্গে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত ভোটকর্মী থাকবেন। অর্থাৎ ৪,২৭০ জন। সেই মতো ২৫, ৬১৮ জন ভোটকর্মীর কাছেই প্রশিক্ষণের চিঠি পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ঘাটালে রয়েছে একটি, ঝাড়গ্রামে রয়েছে ২টি, মেদিনীপুরে রয়েছে ৩টি এবং খড়্গপুরে রয়েছে ২টি কেন্দ্র। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে স্কুল-কলেজকেই নেওয়া হয়েছে। ৮টি কেন্দ্রের ১২২টি ঘরে প্রশিক্ষণ চলবে।
গোড়া থেকেই এ বার প্রশিক্ষণের উপর বেশি জোর দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক-একটি রুমে একসঙ্গে খুব বেশি হলে ৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। থাকবে ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন’। ফলে, প্রিসাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে পোলিং অফিসার সকলেই খুব সহজে বুঝতে পারবেন, তাঁদের কী কী করণীয়। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ভোটকর্মীরা প্রশিক্ষণ নেবেন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “এ বার গোড়া থেকেই প্রশিক্ষণের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ভোটের সময় ছোটখাটো কিছু ভুল হয়। অনেক সময় না-জানার জন্যই এ সব ভুল করে বসেন কর্মীরা।” তাঁর কথায়, “আমরা এমন ভাবে প্রশিক্ষণ শিবির করতে চাইছি, যাতে পরবর্তী সময় কোনও কর্মী বলতে না-পারেন, এটা তো আগে আমাদের জানানো হয়নি। ইত্যাদি। এ ভাবে প্রশিক্ষণ হলে সামান্য ভুলভ্রান্তিও আর হবে না।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে তিনটি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। মেদিনীপুর, ঘাটাল এবং ঝাড়গ্রাম। জেলায় এ বার দু’দফায় ভোট হবে। ৭ মে ঝাড়গ্রাম এবং মেদিনীপুরে। ১২ মে ঘাটালে। গণনা ১৬ মে। তিন কেন্দ্রের গণনা কোথায় হবে, তাও চূড়ান্ত হয়েছে। মেদিনীপুরের গণনা হবে খড়্গপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে (২)। ঝাড়গ্রামের গণনা হবে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে (নবনির্মিত মহিলা বিভাগে)। ঘাটালের গণনা হবে ঘাটাল কলেজে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy