Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভোট প্রচারে সূর্যোদয় চায় দীপক শিবির

দলের মুখ এখনও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই। তবে এ বার লোকসভা ভোটের প্রচার-পর্বে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের চাহিদা বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। নেতাই-কাণ্ড নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের জেরেই লোকসভা ভোটের আগে দীপক সরকারের জেলা বুদ্ধবাবুকে প্রচারে ডাকতে বিশেষ আগ্রহী নয় বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিধায়ক হলেও দীপকবাবুর শিবিরের সঙ্গে দূরত্বের কারণে সেখানে বিশেষ আমন্ত্রণ পেতেন না সূর্যবাবু।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেদিনীপুরে দলের জেলা সম্মেলনের প্রকাশ্য জনসভায় শেষ এক সঙ্গে দেখা গিয়েছিল সুর্যকান্ত-দীপককে। —ফাইল চিত্র।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেদিনীপুরে দলের জেলা সম্মেলনের প্রকাশ্য জনসভায় শেষ এক সঙ্গে দেখা গিয়েছিল সুর্যকান্ত-দীপককে। —ফাইল চিত্র।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪১
Share: Save:

দলের মুখ এখনও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই। তবে এ বার লোকসভা ভোটের প্রচার-পর্বে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের চাহিদা বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। নেতাই-কাণ্ড নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের জেরেই লোকসভা ভোটের আগে দীপক সরকারের জেলা বুদ্ধবাবুকে প্রচারে ডাকতে বিশেষ আগ্রহী নয় বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিধায়ক হলেও দীপকবাবুর শিবিরের সঙ্গে দূরত্বের কারণে সেখানে বিশেষ আমন্ত্রণ পেতেন না সূর্যবাবু। নেতাই-বিড়ম্বনার জেরে সেই সূর্যবাবুই লোকসভা ভোটে প্রচারের চাহিদায় এই জেলায় এগিয়ে থাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে বাম মহলে।

সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপকবাবু এবং রাজ্যের নেতা সূর্যবাবুর ‘দূরত্বে’র কথা জেলা সিপিএমে সুবিদিত। সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য মুখে এ কথা স্বীকার করেন না। তবে নানা ঘটনায় বারবার এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে। ফলে, দীপক-শিবিরের লোকজন সূর্যবাবুকে প্রচারে প্রধান মুখ হিসাবে চাওয়ায় দলে আলোড়ন পড়েছে। এ প্রসঙ্গে অবশ্য খোলসা করে কিছু বলতে চাননি দীপকবাবু। তিনি শুধু বলেন, “সভার ব্যাপারটি আলোচনা স্তরে রয়েছে। এটা সাংগঠনিক ব্যাপার।” তবে বুদ্ধবাবুর আসার সম্ভাবনা যে ক্ষীণ, প্রকারান্তরে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক। তাঁর বক্তব্য, “বুদ্ধবাবু তো এই সে দিন সভা করে গেলেন!”

সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সমীকরণে দীপকবাবুর সঙ্গে সূর্যবাবুর দূরত্ব থাকলেও বিরোধী দলনেতা এখন দলের পলিটব্যুরো সদস্য। ফলে, তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব আগের চেয়ে বেশি। দলের রাজ্য সম্পাদকমমণ্ডলীতেও সূর্যবাবুর সঙ্গেই একত্রে কাজ করছেন দীপকবাবু। আবার শারীরিক কারণে বুদ্ধবাবু যে হেতু কলকাতার বাইরে বেশি প্রচারে যেতে পারছেন না, তাঁর জায়গায় অনেকটাই পরিশ্রম করতে হচ্ছে সূর্যবাবুকে। এই ‘বাস্তব’ মেনে নিয়েই পুরনো আপত্তি সরিয়ে সূর্যবাবুকে এ বার প্রচারে চাইছে পশ্চিম মেদিনীপুর সিপিএম-ও। তা ছাড়া, গত ফেব্রুয়ারিতে মেদিনীপুরের সমাবেশে এসে নেতাই নিয়ে বুদ্ধবাবুর ভুল স্বীকারও জেলা নেতৃত্বের চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলেছে বলে সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত। দীপকবাবুরা বরাবর বলে এসেছেন, তৃণমূল-মাওবাদী ‘আঁতাঁতে’র জেরেই ঘটেছিল নেতাইয়ের ঘটনা। বুদ্ধবাবুর ভুল স্বীকারকে শেষ পর্যন্ত সমর্থন করেনি আলিমুদ্দিনও। রাজ্য কমিটির বৈঠকে দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু জানিয়ে দেন, নেতাই নিয়ে ওই মন্তব্য না করলেই ভাল হত। জেলা সিপিএমের অন্দরের খবর, ওই ঘটনার পরে এ বার প্রধান বক্তা হিসাবে সূর্যবাবুর নাম প্রস্তাব করেছেন দীপক অনুগামীরাও।

প্রবীণ এক বাম নেতার কথায়, “নির্বাচনী সভার প্রধান বক্তা হিসেবে সূর্যকান্ত মিশ্রকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা শুনে কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম! বৈঠকে আরও কয়েক জনের নাম উঠে আসে। কিন্তু সিপিএম নেতৃত্ব বিরোধী দলনেতার কথাই বলছিলেন। আমরা আর আপত্তি করিনি। সূর্যবাবুর ভাল ভাবমূর্তি রয়েছে। শুধু কর্মী-সমর্থকেরা নন, সাধারণ মানুষও তাঁর কথা শুনতে চান।” ফেব্রুয়ারির সভাতেও সূর্যবাবুর উপস্থিতি চেয়েছিল সিপিএমের একাংশ। তবে দলীয় সূত্রে খবর, দীপক অনুগামীদের বিরোধিতায় শেষমেশ আর তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

তিনটি সভা করে পশ্চিম মেদিনীপুরে ভোট-প্রচার শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের কথা মাথায় রেখে তিন প্রান্তে সভা করতে চলেছে বামেরাও। দলীয় সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে সভা হবে ঝাড়গ্রাম (ঝাড়গ্রাম লোকসভা), বেলদা (মেদিনীপুর লোকসভা) এবং ডেবরায় (ঘাটাল লোকসভা)। আগামী ২৫ এপ্রিল ঝাড়গ্রাম এবং বেলদায় সভা হবে বলে ঠিক হয়েছে। ২৬ এপ্রিল সভা হওয়ার কথা ডেবরায়। তার জন্য পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অনুমতিও চাওয়া হচ্ছে। তিনটি সভাতেই সূর্যবাবুকে প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব আসে দীপক-অনুগামীদের কাছ থেকেই।

নারায়ণগড়ের বিধায়ক সূর্যবাবু মন্ত্রী হয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে পা রাখার আগে থেকেই দীপক-শিবিরের সঙ্গে তাঁর ‘বিরোধ’ ছিল। জেলায় দলের কর্মসূচিতে এই দুই নেতাকে শেষ পাশাপাশি দেখা গিয়েছে ২০১২-র ফেব্রুয়ারিতে সিপিএমের জেলা সম্মেলনের সমাবেশে। ওই বছরের ডিসেম্বরেও কেশিয়াড়িতে এক সমাবেশে দুই নেতাকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। সেটা অবশ্য ছিল কৃষক সভার জেলা সম্মেলনের সমাবেশ। তা-ও বিরোধী দলনেতার পাশে জেলা সম্পাদককে বেশি ক্ষণ দেখা যায়নি। সূর্যবাবু পৌঁছনোর কিছু ক্ষণ পরই মঞ্চ ছাড়েন দীপকবাবু। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বার অবশ্য এই দূরত্ব মোছার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বামেদের প্রচার-সভা ঘিরে। জেলা সিপিএমের এক নেতা রসিকতা করে বলছিলেন, “ঠেলায় পড়লে বাঘে-গরুতেও এক ঘাটে জল খায়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

barun dey election campaign dipak adhikary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE