চড়া দামে আলু কিনতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ বাসিন্দার। বাজারে আলুর জোগানও কম। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ভিন রাজ্যে আলু রফতানি না করার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু নির্দেশ অমান্য করেই চলছে আলু রফতানি। তাই আলু পাচার রুখতে তত্পর হল পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত খড়্গপুর মহকুমা পুলিশ প্রায় ১৬০টি আলু বোঝাই লরি আটক করেছে। খড়্গপুর টাউন, নারায়ণগড়, দাঁতন, বেলদা, কলাইকুণ্ডা, সাদাতপুর-সহ বিভিন্ন থানা এলাকায় নাকা করে আলু বোঝাই গাড়িতে তল্লাশি চলছে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “বহু লরি বোঝাই আলু অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে। তাই আমাদের কাছে মঙ্গলবার রাতেই একটি নির্দেশিকা এসেছে। সেই গাড়িগুলিকে আটনোর জন্য আমরা কাজ করছি।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের মধ্যে হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আলু চাষ বেশি হয়। অক্টোবর মাস আলু চাষের সঠিক সময়। কিন্তু গত বছর পুজোর আগে ভারী বৃষ্টি ও পরে বন্যা পরিস্থিতি হওয়ায় পশ্চিম মেদিনীপুরে চাষের কাজে বাধা আসে। আলু চাষিরা সঠিক সময়ে চাষ করতে না পারায় ডিসেম্বরের শেষ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে চাষ শুরু হয়। এতেই আসে বিপত্তি। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ঘন কুয়াশায় আলুর ধসা রোগ হতে শুরু করে। গত বছরে যেখানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় আলু উত্পাদনের পরিমাণ ছিল ১৮ লক্ষ মেট্রিক টনের কাছাকাছি, এ বছর সেই পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে এক ধাক্কায় মাত্র সাড়ে দশ লক্ষ মেট্রিক টন। জেলা কৃষি আধিকারিক নিমাই রায় বলেন, “এ বছর ধসা রোগের প্রভাবেই আলু উত্পাদন কম হয়েছে। ফলে রাজ্য জুড়ে আলুর সঙ্কট।”
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বাজারগুলিতে ২০ থেকে ২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, উত্পাদনের ঘাটতির পরিমাণ খুব বেশি নয়। তাঁদের হিসেব অনুযায়ী, গত বছর যেখানে জেলার ৭২টি আলুর হিমঘরে ২ কোটি ৫৫লক্ষ প্যাকেট করা হয়েছিল সেখানে এ বছর ২ কোটি ৪০ লক্ষ প্যাকেট হয়েছে। তবে মার্চ নাগাদ বিপুল পরিমাণ আলু বাইরের রাজ্যে চলে যাওয়াতেই এই সঙ্কট। আর তার জেরেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ভিন রাজ্যে রপ্তানি না করার আবেদন করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় বুধবার পর্যন্ত প্রায় তিনশোটি লরি আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু খড়্গপুর মহকুমাতেই ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের উদ্দেশে যাওয়া প্রায় ১৬০টি লরি আটক করা হয়েছে।
অন্য দিকে, হিমঘর থেকে আলু বেরিয়ে যাওয়ার পরে মাঝ পথে আটকে পড়ায় ক্ষুব্ধ আলু ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, আলু হিমঘর থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক আবহাওয়ায় আসার পরে ত্রিপল মোড়া অবস্থায় লরিতে রাস্তায় পড়ে থাকলে পচন ধরার আশঙ্কা। আবার গাড়িগুলিকে ঘুরিয়ে হিমঘরে পাঠিয়ে দিলেও গরম আবহাওয়া থেকে ফের ঠাণ্ডঘরের আবহাওয়ায় ঢুকলেও পচন ধরবেই। তাই তাঁদের দাবি, হিমঘর থেকে আলু নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া লরিগুলিকে অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে বুধবার একটি স্মারকলিপি দেয় ব্যবসায়ীরা।
পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বরেণ মণ্ডল বলেন, “মঙ্গলবার রাত থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার আলু রাস্তায় পড়ে পচন ধরছে। রাজ্যের শুধুমাত্র পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরেই গাড়ি আটক চলছে। কোন নির্দেশিকায় এ সব হচ্ছে আমরা জানতে পারছি না।” জেলা কৃষি বিপণন আধিকারিক ব্রজেন সরকার বলেন, “আমার দফতরের পক্ষ থেকে কোনও নির্দেশিকা আমার কাছে নেই। শুনছি বিভিন্ন জায়গায় আলুগাড়ি আটক চলছে। পুলিশের কাছে আলাদা করে নির্দেশিকা থাকতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy