Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সভায় দেরিতে জল-খাবারের আকাল, শিক্ষা নিচ্ছে তৃণমূল

কাঠ ফাটা রোদ্দুর। কিছুক্ষণ বাদে বাদেই গলা শুকিয়ে কাঠ। ছোট্ট বোতলের জলে কতক্ষণই বা কুলোয়। শুধু জলের বোতলই কেন, খাবারেরও আকাল হতে পারে। কারণ, ভোটের মরসুমে সভা তো সময়ে না-ও হতে পারে। সোমবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় যেমনটা হল। কেশিয়াড়িতে দুপুর ১ টায় সভা শুরুর কথা ছিল। তাই স্থানীয় নেতৃত্ব কর্মী সমর্থকদের ২ ঘন্টা আগে আসার কথা বলেন। বাড়ি থেকে বেরোতে হয়েছিল আরও এক ঘণ্টা আগে।

রোদ উপেক্ষা করে জনতার ঢল। সোমবার কেশিয়াড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধা্যায়ের জনসভায়। —নিজস্ব চিত্র।

রোদ উপেক্ষা করে জনতার ঢল। সোমবার কেশিয়াড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধা্যায়ের জনসভায়। —নিজস্ব চিত্র।

সুমন ঘোষ ও অভিজিৎ চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৫১
Share: Save:

কাঠ ফাটা রোদ্দুর। কিছুক্ষণ বাদে বাদেই গলা শুকিয়ে কাঠ। ছোট্ট বোতলের জলে কতক্ষণই বা কুলোয়।

শুধু জলের বোতলই কেন, খাবারেরও আকাল হতে পারে। কারণ, ভোটের মরসুমে সভা তো সময়ে না-ও হতে পারে। সোমবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় যেমনটা হল। কেশিয়াড়িতে দুপুর ১ টায় সভা শুরুর কথা ছিল। তাই স্থানীয় নেতৃত্ব কর্মী সমর্থকদের ২ ঘন্টা আগে আসার কথা বলেন। বাড়ি থেকে বেরোতে হয়েছিল আরও এক ঘণ্টা আগে। সাত তাড়াতাড়ি সকলে বাড়ি থেকে খেয়ে বের হন না। ভেবেছিলেন আড়াইটে তিনটেই বাড়ি ফিরে খেলেই হল। কিন্তু হেলিকপ্টার বিভ্রাটে সভা শুরুই হল বেলা ৩টেয়। ফেরা তো আরও পরে।

আর দীর্ঘক্ষণ চড়া রোদে দাঁড়িয়ে, কাঠফাটা গলা আর পেটে ছুঁচোর ডন সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন অনেকেই। এর থেকে শিক্ষাও নিলেন সকলে। সভায় আসা কর্মী সমর্থকেরা যেমন সাফ জানালেন, “আর নয়। এবার খেয়েই বাড়ি থেকে বেরোতে হবে।” তৃণমূল নেতৃত্বও জানালেন, খাবার ও পানীয়ের ব্যবস্থাটা এবার কড়া নজরে রাখবেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “এরপর যে এলাকায় সভা হবে সেখানে যাতে দোকানপাট খোলা থাকে তার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আবেদন জানাব। যদি সেখানে খাবারের দোকান কম থাকে, তাহলে সাধারণ কর্মী সমর্থকদের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্য পানীয় জল ও খাবারের ব্যবস্থা করারও চেষ্টা করব।”

সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর প্রথম সভাটি ছিল কেশিয়াড়িতে। ঠিক ছিল, সভা শুরু হবে ১২ টায়। মুখ্যমন্ত্রী ঢুকবেন ১ টায়। আধঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিট বক্তব্য রেখেই উড়ে যাবেন গড়বেতায়। অর্থাৎ ২ টোর আগেই সভা শেষ। গ্রামীণ এলাকা থেকে মানুষরা সকাল ১০ টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই কেউ ভাত খেয়ে আসেননি। কিন্তু সভা শুরু হতে হতে প্রায় বেলা ৩টে। পকেটে পয়সা রয়েছে। তবু খাবার নেই। কারণ, সোমবার আবার কেশিয়াড়ি বাজার বন্ধ থাকে। পুলিশ কর্মীদেরও একই অবস্থা। এক পুলিশ ইন্সপেক্টরের কথায়, “আর দু’বছর চাকরি রয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে একটু চা-জলখাবারও না পেলে এই রোদে কি ভাবে কাজ করি বলুন তো?” নয়াগ্রাম থেকে আসা বাদল হাঁসা বলেন, “গ্রামের মানুষ। বেলা আড়াইটে ৩ টেয় খাওয়া অভ্যেস। জানি সভা শেষ হলে বাড়ি গিয়ে খেয়ে নেব। সভাই তো শুরু হল ৩ টেয়।” কেশিয়াড়ির তৃণমূল নেতা জগদীশ দাসের কথায়, “সমস্যা হয়েছে এটা ঠিক। আমরা যতটা সম্ভব পানীয় জল দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সবাইকে দিতে পারিনি।” তবে পুলিশকে দুষে তিনি বলেন, “এমনিতেই বাজার বন্ধ। তবু দু’একজন শসা, সরবতের দোকান করেছিল। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পুলিশ তাঁদেরও হঠিয়ে দিল।”

গড়বেতায় দ্বিতীয় সভাতেও দেরি হয়েছে। ২টোর জায়গায় সভা শুরু হয়েছে ৫টায়। সভায় আসা সবিতা সাহার কথায়, “সারা গড়বেতা ঘুরে কোথাও খাবার পেলাম না। সব হোটেলে খাবার শেষ।” গড়বেতার হোটেল ব্যবসায়ী কৌশিক মিদ্যার কথায়, “সভা হবে জেনে কিছুটা অতিরিক্ত ব্যবস্থা করেছিলাম। তাও নিমেষে শেষ দেখে সব্জি কিনে এনে সব্জি ভাত রান্না করলাম। কিন্তু তাতেও সামাল দিতে পারিনি। অনেককেই ফিরে যেতে হয়েছে।”

কেশপুরের কথা তো বলার নয়। কেশপুর মানেই দেব আসবে তা নিশ্চিত। যে সভা সাড়ে ৪ টেয় শেষ হওয়ার কথা তা শুরু হল ৭ টায়। নিরাপত্তার কারণে সামনের দিক দিয়ে কাউকে বেরোতে দিচ্ছে না পুলিশ। আবার পিছনে জনসমুদ্র। তা টপকে বাইরে যাওয়া কঠিন। সব মিলিয়ে দুঃসহ যন্ত্রণার অন্ত ছিল না। এবার অবশ্য, আগামী সভাগুলির ক্ষেত্রে সব দিক বিবেচনা করেই ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sumon ghosh avijit chakraborty tmc keshiary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE