মেয়েকে নিয়ে মিতা। নিজস্ব চিত্র
উৎসবের মেজাজে দিল্লি গেলেন ওঁরা!
আজ, বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। সেই অনুষ্ঠান স্বচক্ষে দেখার আমন্ত্রণ পেয়ে এ রাজ্য থেকে গেলেন ওঁরা। কারও বাড়ির ছেলে সেনাবাহিনীতে কাজে গিয়ে জঙ্গি হানায় প্রাণ হারিয়েছেন। কারও ছেলে আবার বিজেপি নেতা বা কর্মী ছিলেন। রাজনৈতিক অশান্তিতে প্রাণ দিয়েছেন। ২২ বছর আগে দুর্ঘটনায় মৃত উলুবেড়িয়ার এক বিজেপি নেতার পরিবারও সেই দলে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে ওই অনুষ্ঠানে যেতে রাজি থাকলেও পরে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন। তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠানকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
পুলওয়ামা-কাণ্ডে নিহত এ রাজ্যের দুই জওয়ানের পরিবার রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লি পাড়ি দেন। হাওড়ার বাউড়িয়ার চককাশীর বাসিন্দা, নিহত সিআরপিএফ জওয়ান বাবলু সাঁতরার স্ত্রী মিতা এবং তাঁর শাশুড়ি বনমালাদেবীকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আসেন বিজেপি নেতারা। মিতা বলেন, ‘‘একটি শর্তেই রাজি হয়েছি। ওই অনুষ্ঠানে থাকা নিয়ে পরে কোনও রাজনীতি করা যাবে না। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ, তাই সেখানে হাজির থাকার বিষয়ে আমাদের অন্য কোনও আপত্তির কারণ নেই। বিজেপি নেতারা আমাদের সেই আশ্বাস দিয়েছেন।’’
দিল্লির পথে: নরেন্দ্র মোদীর শপথে যাচ্ছেন পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহতদের পরিজনেরা। সঙ্গী বাংলায় রাজনৈতিক হিংসায় প্রাণ হারানো বিজেপি নেতা-কর্মীদের স্বজনেরা। বুধবার হাওড়া স্টেশনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
ওই জঙ্গি-হানা মৃত্যু হয়েছিল নদিয়ার তেহট্টের সিআরপিএফ জওয়ান সুদীপ বিশ্বাসের। তাঁর ভগ্নিপতি সমাপ্ত বিশ্বাস জানান, বুধবার সকালে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে ফোন করে তাঁদের দিল্লি যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। তাঁরা তা গ্রহণ করেন। তবে, দু’বছর আগে কাশ্মীরের উরিতে সেনা-ছাউনিতে
জঙ্গি হানায় নিহত হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের জওয়ান গঙ্গাধর দলুইয়ের পরিবার ওই অনুষ্ঠান ডাক পাননি। এ নিয়ে গঙ্গাধরের বাবা-মা কিছুটা আক্ষেপও প্রকাশ করেন।
গঙ্গাধরের বাবা ওঙ্কারনাথবাবু বলেন, ‘‘আমার ছেলে যখন মারা যায়, তখনও মোদীজিই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। উরির সব ঘটনা তিনি জানেন। ফের তিনি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, আমরা খুশি। কিন্তু যে হেতু জেলারই আর এক নিহত জওয়ানের পরিবার তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন, তাই আমরাও পেলে ভাল লাগত।’’
গত কয়েক বছরে এ রাজ্যের কয়েক জন বিজেপি নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। তাঁদের অনেকের পরিবারও শপথে হাজির হওয়ার ডাক পেয়েছে। তার মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের তিনটি করে পরিবার রয়েছে। পুরুলিয়া থেকে ডাক পেয়েছে পাঁচটি পরিবার। কোচবিহার থেকে গিয়েছে একটি পরিবার। গত সেপ্টেম্বরে দাড়িভিটের স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে গোলমালে গুলি চলে। মারা যান রাজেশ সরকার আর তাপস বর্মণ নামে দুই যুবক। তাঁদের পরিবারও দিল্লিতে হাজির থাকছে। তাঁদের সঙ্গে যাচ্ছেন বছর খানেক আগে চোপড়ার মাঝিয়ালি এলাকাতে নিহত অরেন সিংহের স্ত্রী শকুন্তলা সিংহও। দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে গিয়েছে তিনটি পরিবার। নদিয়া থেকে যে চারটি পরিবার দিল্লি গিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে কয়েক দিন আগে চাকদহে নিহত সন্তু ষোষের বাড়ির লোকেরাও।
এই আমন্ত্রণে পেয়ে অবাক উলুবেড়িয়া গোয়ালবেড়িয়া গ্রামের বিজেপি নেতা অরুণ প্রামাণিকের পরিবার। ২২ বছর আগে দুর্ঘটনায় মারা যান অরুণবাবু। জরুরি অবস্থায় মাসতিনেক জেলেও ছিলেন। ওই নেতার স্ত্রী সন্ধ্যাদেবী শপথের আমন্ত্রণ পেয়ে আপ্লুত। বলেন,
‘‘দলের জন্য উনি অনেক ত্যাগ করেছেন। তখন প্রকাশ্যে কেউ আরএসএস করতে পারত না। ভেবেছিলাম স্বামীর অবদানের কথা দল ভুলে গিয়েছে। কিন্তু এত দিন পরেও যে তাঁকে মনে রেখে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তার জন্য আমরা গর্বিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy