Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মমতার সঙ্গে রিয়া-রাইমা, উচ্ছ্বসিত ফরাক্কা

কয়েকদিন থেকেই মাইকে প্রচার চলছিল শুক্রবারের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন মিঠুন চক্রবর্তীও। কিন্তু মিঠুনের বদলে মমতার হাত ধরে মঞ্চে এলেন দুই বোন রাইমা সেন ও রিয়া সেন। ফরাক্কা কলেজ মাঠে মিঠুন না আসার ক্ষোভ নিমেষে বদলে গেল উল্লাসে। আট থেকে আশি’র নানা মন্তব্যে মুখর হয়ে উঠল গোটা মাঠ।

মঞ্চে মমতার সঙ্গে দুই বোন। ফরাক্কায় ছবিটি তুলেছেন অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

মঞ্চে মমতার সঙ্গে দুই বোন। ফরাক্কায় ছবিটি তুলেছেন অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

বিমান হাজরা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১২
Share: Save:

কয়েকদিন থেকেই মাইকে প্রচার চলছিল শুক্রবারের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন মিঠুন চক্রবর্তীও। কিন্তু মিঠুনের বদলে মমতার হাত ধরে মঞ্চে এলেন দুই বোন রাইমা সেন ও রিয়া সেন। ফরাক্কা কলেজ মাঠে মিঠুন না আসার ক্ষোভ নিমেষে বদলে গেল উল্লাসে। আট থেকে আশি’র নানা মন্তব্যে মুখর হয়ে উঠল গোটা মাঠ। কেউ বললেন, “ওরে, এরাই তাহলে আমাদের সুচিত্রা সেনের নাতনি! টিভিতে মাঝে মধ্যে দেখেছি বটে। কিন্তু এত কাছ থেকে যে ওদের দেখতে পাব তা কোনওদিন ভাবিইনি।” কেউ বললেন, “দ্যাখ, দ্যাখ, ছোটটির সঙ্গে দিদিমার অনেক মিল আছে।” কেউ আবার পাশ থেকে বলে উঠল, “মুনমুনদি থাকলে আরও ভাল হত।”

জনতার এই উচ্ছ্বাসে বাদ সাধেন নি মমতাও। মঞ্চে উঠে মমতাই প্রথমে রাইমার হাতে ও পরে রিয়ার হাতে তুলে দিয়েছেন মাইক। নিমেষে চুপ গোটা মাঠ। রাইমা মাইক হাতে বললেন, “নমস্কার, আমি রাইমা সেন। বাঁকুড়ায় মা মমতাদির জন্য লড়াই করছেন। আমরা মমতাদিকে খুব বিশ্বাস করি। আপনারাও তাঁকে বিশ্বাস করুন। তাঁকে ভোট দিয়ে জয়ী করুন।” রিয়া বলেলন, “নমস্কার, আমি রিয়া সেন। আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে খুব খুশি হচ্ছি। আজ বাঁকুড়ায় মায়ের জন্য প্রচারে খুব ঘুরেছি। আপনারা ওঁর জন্য ভোট করবেন। যাতে ভোটে উনি জিততে পারেন।” ব্যাস, দুই বোনের কথা বলতে এইটুকুই। দু’জনেই বাংলায় বলেছেন। তবে রিয়ার কথায় একটু হিন্দির টান রয়েছে। কিন্তু তাতে কী? দু’জনের কথা শেষ হতেই হাততালিতে ফেটে পড়ল গোটা মাঠ।

‘গুরু’ মিঠুনকে দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপ যে রিয়া-রাইমা পুষিয়ে দিয়েছে সে কথা অবশ্য খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছেন অনেকেই। বেনিয়াগ্রামের হেনা খাতুন বললেন, “মিঠুনকে দেখতেই এসেছিলাম। কিন্তু এসে যখন শুনলাম মিঠুন আসবে না তখন মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রিয়া-রাইমাকে দেখার পর সব মনখারাপ উধাও হয়ে গিয়েছে। খুব ইচ্ছে ছিল রিয়া-রাইমাকে একেবারে মঞ্চের সামনে থেকে দেখব। কিন্তু ভিড়ের ঠেলায় মঞ্চের কাছে যেতেই তো পারলাম না।”

বাহাদুরপুর থেকে এই রোদ-গরম উপেক্ষা করেই ফরাক্কা কলেজ মাঠে জনা দশেক প্রতিবেশিকে নিয়ে চলে এসেছিলেন শিক্কা মুর্মু। রিয়া, রাইমার মাত্র মিনিট চারেকের বক্তব্যের ঘোর তখনও যেন কাটেনি। চড়া রোদে ঘেমে গিয়েছেন সকলেই। কিন্তু তারপরেও রিয়া, রাইমার গল্প যেন তাদের মুখে ফুরোতেই চাইছে না। শিক্কা বলেন, “মিঠুন আসেনি তো কী হয়েছে? পরেরবার না হয় দেখতে পাব। কিন্তু সুচিত্রার নাতনিদের কী কোনওদিন দেখতে পেতাম? ভোট কাকে দেব আর কাকে দেব না সে তো পরের কথা। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে মমতা দিদির জন্য এদের দেখতে পেলাম।”

মাঠের এই নানা গল্পের মধ্যেই বক্তব্য শুরু করে দেন মমতা। মমতা বলেন, “রাইমা, রিয়ারা আমার খুব প্রিয়। গত পরশু সুতিতে মিঠুনদা এসেছিলেন।” এদিন ফের কংগ্রেসকে এক হাত নিয়ে মমতা বলেন, “আপনাদের জেলা মুর্শিদাবাদ থেকে আমাদের কোনও এমপি নেই। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট থাকার জন্য আগে এখানে আমরা কোনও প্রার্থী দিতে পারতাম না। ফরাক্কায় কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। অথচ ৬৬ বছর কংগ্রেস কিছু করেনি। ৩৫ বছর কিছু করেনি বামেরাও। আমরা কংগ্রেস করতাম। যখন দেখলাম কংগ্রেস সিপিএমের হাতে দলের পতাকাটা বিক্রি করে দিয়েছে তখন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করলাম। কংগ্রেস থাকলে সিপিএমকে হটানো যেত না। ২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছিলাম। কিন্তু এ জেলায় নির্দল দাঁড় করিয়ে হারিয়ে দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল কংগ্রেস। এই বিশ্বাসঘাতক, মিরজাফর কংগ্রেসকে কেউ ক্ষমা করবেন না।” মমতা বলেন, “সিপিএম এ রাজ্যে ছিল কারণ কংগ্রেস ওদের বন্ধু।”

মমতা বলেন, “ফরাক্কার জল শুকিয়ে গিয়েছে প্রায়। হঠাৎ দেখলাম ফরাক্কার গেট ভেঙে জল সব চলে যাচ্ছে। পানীয় জলের সঙ্কট হচ্ছে। শিল্প মার খাচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম তিস্তা ও গঙ্গার এই অবস্থা নিয়ে। বাংলাকে ভাতে মারার চেষ্টা হচ্ছে বারবার। বাংলা এগিয়ে যাক তা কেউ চাই না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

biman hazra farakkariya raima
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE