ভেবোডাঙার সেই চুল্লি।—নিজস্ব চিত্র
বছর তিনেক আগে জেলা পরিষদের অনুদানে বেশ কয়েক লক্ষ ব্যয়ে তৈরি হয়েছে চুল্লি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নাকাশিপাড়ার ভেবোডাঙার ঘাটের কাঠের চুল্লিতে আগুন জ্বলল না। নদীর পাড়ে পুরনো পদ্ধতিতে দাহ করা যায় বটে। কিন্তু পরিকাঠামোর সুবিধা না থাকায় এক সময়ের ব্যস্ত ভেবোডাঙার শ্মশান ঘাটে এখন আর কেউ আসেন না।
শতাধিক বছরের পুরোনো ভেবোডাঙা শ্মশান এক সময় নদিয়ার তিন ব্লকনাকাশিপাড়া, কৃষ্ণনগর-২ ও চাপড়ার বাসিন্দাদের মৃতদেহ সৎকারের একমাত্র জায়গা ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বছর দশেক আগেও দিনে অন্তত দশটি করে সৎকার হত এই শ্মশানে। কিন্তু বর্তমানে ন্যূনতম পরিকাঠামোটুকুও না থাকায় ঘাট থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বের জনপদের লোকজনও মৃতদেহ নিয়ে আসেন না। শ্মশান-ঘাটে একটা চায়ের দোকান অবধি নেই। শ্মশানযাত্রীর বসার জন্য কোনও জায়গাও নেই। বৃষ্টি বা চড়া রোদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শবযাত্রীদের ছুটতে হয় নদীর পাড় থেকে খানিক দূরের আম বাগানে। এবড়ো-খেবড়ো ঘাট বরাবর লোকজনের হাঁটাচলা করাই দুষ্কর। শ্মশানে সৎকারের দায়িত্বে থাকা সমরেশ চৌধুরীর কথায়, ‘‘আমরা ছয় পুরুষ ধরে এখানে মড়া পোড়াচ্ছি। বাপ-ঠাকুরদার আমলে দিনে পনেরো-কুড়িটা করে মৃতদেহ আসত। এখন সকলে নবদ্বীপে চলে যাচ্ছে।’’
নবদ্বীপ শ্মশানে দোকানপাট, পানীয় জল থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিন চুল্লিসব কিছুই আছে। তাই নাকাশিপাড়ার ধর্মদহ, মুড়াগাছা, বহিরগাছির লোকজনও সৎকারের জন্য নবদ্বীপে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। অথচ ভেবেডাঙার প্রস্তুত চুল্লি অব্যবহৃত অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে দীর্ঘ দিন। অব্যবহৃত অবস্থায় থাকার জন্য চুল্লিতে লাগানো গোটা পাঁচেক বাল্বও খোওয়া গিয়েছে। চুল্লির গা জুড়ে কে বা কারা ভুষো কালি দিয়ে হিজিবিজি লিখেছে। দীর্ঘদিন অব্যবহারের ফলে মড়া পোড়ানোর লোহার পাতে পুরু হয়ে মরচে পড়েছে। চুল্লির নীচে বসার জায়গায় ধুলোর পুরু স্তর।
ধর্মদা এলাকায় প্রাক্তন জেলা পরিষদের সদস্য সিপিমের গায়ত্রী সরকারের আমলে ওই চুল্লি নির্মাণ হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত চুল্লি চালু না হওয়া প্রসঙ্গে গায়ত্রীদেবীর বক্তব্য, “আমরা কাজ প্রায় শেষ করেছিলাম। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর জেলা পরিষদকে আর ওই কাজ সম্পন্ন করতে দেওয়া হয়নি।” নাকাশিপাড়ার বিধায়ক তৃণমূলের কল্লোল খানের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বাম আমলে তৈরি চুল্লি শেষ হয়নি। ওরা ইচ্ছাকৃত ভাবে কাজ শেষ করেনি। আলোর ব্যবস্থা করেনি। জেলাশাসক ও সভাধিপতির সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ওই চুল্লির উদ্বোধন করা হবে।’’ কিন্তু কবে? প্রহর গুনে-গুনে ক্লান্ত ভেবোডাঙা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy