Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নতুন প্রজন্মকে টানতে মুখোশ-টুইটার

নতুন প্রজন্মের ভোটারদের প্রভাবিত করতে মরিয়া সব দল। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে এদের কেউ বা ভোটার তালিকা থেকে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের আলাদা করে চিহ্নিত করছেন। তারপরে নানা ভাবে তাদের কাছে পাঠাচ্ছেন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলির নেতা কর্মীদের।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১৬
Share: Save:

নতুন প্রজন্মের ভোটারদের প্রভাবিত করতে মরিয়া সব দল। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে এদের কেউ বা ভোটার তালিকা থেকে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের আলাদা করে চিহ্নিত করছেন। তারপরে নানা ভাবে তাদের কাছে পাঠাচ্ছেন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলির নেতা কর্মীদের। কেউ সাহায্য নিচ্ছেন ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার। বিজেপি কর্মীরা কলেজের সামনে গিয়ে মরেন্দ্র মোদীর মুখোশ পড়ে লিফলেট বিলি করছেন।

নদিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৫১ শতাংশ। ১৮-১৯ বছর বয়সী ভোটারদের সংখ্যা প্রায় ৩.৫ শতাংশ। যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, আর এই বয়সের ভোটাররাই যে এ বার প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে, তা এক প্রকার নিশ্চিত। এই ভোটারদের বড় অংশ কলেজ ছাত্র। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাবি, এই অংশের ভোটারদের মধ্যে তাদের প্রভাব বেশি, কারণ সংগঠনের জেলা সভাপতি অয়ন দত্ত বলেন, “জেলার ১৭টি কলেজের সবক’টিই আমাদের দখলে। বিরোধীরা কলেজগুলিতে প্রার্থী খুঁজে পায়নি।” তাঁর মতে, “লোকসভা ভোটের আগে জেলার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভোট ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন। যেখানে নতুন ভোটারদের মনোভাব সব থেকে ভাল ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তাই কলেজ নির্বাচনে আমাদের সাফল্য থেকে বুঝতে পারছি, জেলার নতুন ভোটাররা আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।”

কলেজ ভোটের ফলাফলের নিরিখে তৃণমূল আত্মবিশ্বাসী হলেও তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ এসএফআই। সংগঠনের জেলা সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, “কলেজ ভোটের ফলাফলে ছাত্র সমাজের মতামত কখনওই প্রতিফলিত হতে পারে না। যারা সেটা ভাবছেন তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। কারণ এবার নির্বাচনে কলেজগুলোতে সন্ত্রাস করে তৃণমূল বিরোধীদের প্রার্থী দিতেই দেয়নি।” তাঁর দাবি, “দু’টি কলেজে শেষ পর্যন্ত বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারলেও নির্বাচন করতে দেয়নি তৃণমূল। মাজদিয়া কলেজ তার জ্বলন্ত উদাহরণ।” তিনি বলেন, “কলেজগুলিতে ভোট হলে যে অন্য রকম ফল হত, তা সকলের কাছে জলের মতোই পরিষ্কার। আর ভোট না হওয়ায়, চোখের সামনে সন্ত্রাস হতে দেখে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। তাঁরা এবার সেই ক্ষোভ উগরে দিতে আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।”

কলেজ ভোটকে সামনে রেখে যুযুধান দুই পক্ষই যখন আত্মবিশ্বাসী, তখন কিন্তু বসে নেই যুব সংগঠনগুলি। বরং একাধিক কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁরা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছেন। কেন? বামেদের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর জেলা সম্পাদক সুমিত বিশ্বাস যেমন বলেন, “এই বয়সের ভোটাররা সাধারণত খুব ভেবেচিন্তেই ভোট দেন। এঁদের মধ্যে কিছু রয়েছেন, যাঁরা দোলাচলে ভোগেন। কেউ কোনও দলের প্রতি বিশেষ ভাবেই দায়বদ্ধ। তবু তাঁদের মনে হাজারো প্রশ্ন ওঠে। সে সব বিবেচনা করেই ভোট দেন।” তিনি জানান, সেই কারণেই তাঁরা সরাসরি ভোটারদের মুখোমুখি প্রার্থীকে বসিয়ে দিচ্ছি। যাতে এই প্রজন্মের ভোটাররা প্রার্থীর কাছ থেকে তাঁদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যান। পাশাপাশি ছাত্র-যুব আলাদা করে এই প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। আবার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা কমিটির কার্যকরি সভাপতি জয়ন্ত সাহা বলেন, “নতুন ভোটারদের সংখ্যা অনেক। এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন তাঁরা। আমরাও চাইছি এই ভোটারদের নিজেদের দিকে টেনে নিতে। আমরা ব্লক স্তরে ভোটার তালিকা থেকে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের চিহ্নিত করছি। তারপরে তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে আমাদের ছেলেরাই।”

এই প্রজন্মের ভোটাররা মোবাইল, ট্যাবলেট ও সোশ্যাল মিডিয়াতে স্বচ্ছন্দ। সে কথাও মনে রাখছেন রাজনৈতিক দলগুলি। ভোটারদের ফোন নম্বর থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রত্যেকের কাছে আলাদা আলাদা করে পৌঁছে যাওয়ার পাশাপাশি মোবাইলে ফোন করে বা এসএমএস করে দলের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

একই ভাবে বিজেপি-র জেলা কমিটির মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদার বলেন, “একেবারে প্রথম দিকে জেলার কলেজগুলোর সামনে আমাদের দলের যুব সম্প্রদায় নরেন্দ্র মোদীর মুখোশ পড়ে লিফলেট বিলি করে প্রচার করেছে। এ ছাড়া আমাদের দলের কর্মীরা ‘পরিবার চলো’ কর্মসূচির মাধ্যমে যে বিপুল সংখ্যক মানুষের মোবাইল ফোনের নম্বর সংগ্রহ করছেন, সেটাও আমরা কাজে লাগাচ্ছি। সেই সব নম্বরে ফোন করা হচ্ছে। এসএমএস করা হচ্ছে।” তিনি বলেন, “এর পাশাপাশি আমরা ফেসবুক বা টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যুব সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে যাচ্ছি।”

এ বারের নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়া যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে, তা স্বীকার করে নিয়ে কংগ্রেসের নির্বাচন কমিটির সভাপতি সোমনাথ দত্ত বলেন, “আমরা যে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের গুরুত্ব দিচ্ছি, তার সব থেকে বড় প্রমাণ আমাদের প্রার্থী বাছাই। কারণ অন্য দলগুলির থেকে আমাদের প্রার্থীর বয়স অনেক কম। নতুন প্রজন্মের। তাই তিনি নিজেই অনেক সহজে এই প্রজন্মের ভোটারদের কাছে সরাসরি পৌছে যেতে পারছেন। তাই শুধু এই কারণে আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে অনেক বেশি এগিয়ে থাকছি।” পাশাপাশি তিনি বলেন, “আমাদের কর্মীরা ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে যুব সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন। কারণ যুব সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ এখন সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেন।” তাই যে যে ভাবেই হোক, লক্ষ্য কিন্তু একটাই। যুব সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করা।

লোকসভা ভোটের আগে জেলার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভোট ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন। জেলার ১৭টি কলেজই আমাদের দখলে। তাই নতুন ভোটাররা আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।
অয়ন দত্ত, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ

কলেজ ভোটে ছাত্র সমাজের মত প্রতিফলিত হয়েছে বলে যাঁরা ভাবছেন, তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। কারণ, এবার কলেজ ভোটে তৃণমূল বিরোধীদের প্রার্থী দিতেই দেয়নি।
কৌশিক দত্ত, এসএফআই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

susmit halder new generation twitter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE