Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পরীক্ষার্থী কমেছে দুই জেলাতেই

রাজ্যে যখন বেড়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, তখন নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ দুই জেলাতেই ছবিটা অন্য রকম। দু’জেলাতেই কমেছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। শিক্ষকরা মনে করছেন, পড়ুয়াদের পরিবারের অর্থনৈতিক দুরবস্থা এর একটা বড় কারণ। পাশাপাশি মূল ধারার পড়াশোনায় ডিগ্রি নিয়ে তেমন কোনও কাজ জুটছে না। তাই অনেকেই চাইছে পেশাগত শিক্ষায় প্রশিক্ষিত হতে।

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

রাজ্যে যখন বেড়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, তখন নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ দুই জেলাতেই ছবিটা অন্য রকম। দু’জেলাতেই কমেছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা।

শিক্ষকরা মনে করছেন, পড়ুয়াদের পরিবারের অর্থনৈতিক দুরবস্থা এর একটা বড় কারণ। পাশাপাশি মূল ধারার পড়াশোনায় ডিগ্রি নিয়ে তেমন কোনও কাজ জুটছে না। তাই অনেকেই চাইছে পেশাগত শিক্ষায় প্রশিক্ষিত হতে। সেই কারণে মাধ্যমিক পাশ করার পরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি না হয়ে ছাত্রছাত্রীরা নানা প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করছে।

সারা রাজ্যে এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে গত বারের তুলনায় পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৪৬,০৮২ জন। কিন্তু এই দুই জেলায় চিত্রটা ভিন্ন। মুর্শিদাবাদে ছাত্রীর সংখ্যা তেমন ভাবে না কমলেও ছাত্র কমেছে প্রায় হাজার পাঁচেক। অন্য দিকে, নদিয়ায় প্রায় ছ’হাজার ছাত্রী কমেছে। ছাত্র সংখ্যা কমেছে এক হাজারের কাছাকাছি। শিক্ষক সংগঠনগুলি মনে করছে, মূলত অর্থনৈতিক কারণেই মাধ্যমিকের পর এই দুই জেলায় কমছে পড়ুয়ার সংখ্যা। তাছাড়া, যারা মাধ্যমিকে ভাল ফল করছে, তাদের অনেকেই চাইছে কলকাতা বা অন্য শহরের নামী স্কুলগুলোতে পড়তে। সে ক্ষেত্রে বিজ্ঞান পড়ার চাহিদাও একটা কারণ। এই দুই জেলার প্রত্যন্ত স্কুলগুলোতে বিজ্ঞান পড়ানোর পরিকাঠামো প্রায় নেই বললেই চলে। কোনও কোনও স্কুলে বিজ্ঞান পড়ানোও হয় না। পাশাপাশি পলিটেকনিক, কম্পিউটার-সহ নানা বৃত্তি মূলক প্রশিক্ষণের দিকে ঝোঁক বাড়ছে পড়ুয়াদের মধ্যে। যাতে খুব সহজেই একটা রোজগারে পথ পাওয়া যায়।

দুই জেলায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমায় কমেছে পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যাও। মুর্শিদাবাদে এ বারে পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৯ থেকে কমিয়ে ১৩০ করা হয়েছে। অন্য দিকে, নদিয়ায় ২০১৪ সালে যেখানে পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল ১৪৩টি , এ বারে সেখানে পরীক্ষা নেওয়া হবে ১৩৩টি স্কুলে। মুর্শিদাবাদ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী দে বিশ্বাস বলেন, “মুর্শিদাবাদ সারা দেশের মধ্যে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির অন্যতম। স্বাভাবিক ভাবেই মাধ্যমিকের পরে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণেই।” নদিয়ার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) কৌশিক রায় অবশ্য বলছেন, “পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ার কারণ এককথায় বলা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি সর্ম্পূণ খতিয়ে না দেখে মন্তব্য করা উচিত নয়।”

উচ্চমাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এ ভাবে কমে যাওয়া উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুই জেলার বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কেন এমনটা ঘটছে? বেশ কয়েকজন প্রধানশিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে বেশ কিছু মতামত। সাগরদিঘি হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষক তামিজুদ্দিন মণ্ডল মনে করেন, এলাকা ছেড়ে বাইরে কাজে চলে যাওয়ার কারণে একাদশ শ্রেণি থেকেই ছাত্রের সংখ্যা কমছে। ছাত্রীদের যতদিন না বিয়ে হচ্ছে ততদিন তারা স্কুলে যাচ্ছে। তারপর অনেকেই পরীক্ষা দিতে পারছে না। ধুলিয়ানের কাঞ্চনতলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোজাফ্‌ফর হোসেন জানান, তাঁর স্কুলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা না কমলেও আশপাশের প্রায় সব স্কুলেই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। বিড়ি শ্রমিক এলাকায় পরীক্ষার্থী কমার জন্য তিনিও আর্থিক সমস্যাকেই দায়ী করেছেন। ফরাক্কার অর্জুনপুর স্কুলের প্রধানশিক্ষক রফিকুল ওয়ারার মতে, মাধ্যমিকের পর কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করতে ছাত্ররা এখন বিভিন্ন রকম কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। ফলে সাধারণ স্কুলগুলিতে উঁচু শ্রেণিতে ছাত্র সংখ্যা কমছে। শ্রীকান্তবাটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্‌পল মণ্ডলের বক্তব্য, “উঁচু ক্লাসে পড়াশোনার বাড়তি খরচের বোঝা নিম্নবিত্ত পরিবারগুলির পক্ষে অনেকটাই ব্যয়সাধ্য হয়ে পড়ছে। ফলে পরীক্ষার্থী কমছে।”

এবিটিএ-র মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক দুলাল দত্ত জানান, গতানুগতিক শিক্ষায় কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ক্রমশ কমছে। মাধ্যমিকের পরে ভাল ছাত্রছাত্রীরা বাইরে চলে যাচ্ছে। নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেরা লেগে পড়ছে কাজে। ফলে মফস্‌সলের স্কুলগুলিতে পরীক্ষার্থী কমছে। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির মুর্শিদাবাদ জেলার সহ-সভাপতি আশিস তেওয়ারি বলেন, “সুতি ও সামশেরগঞ্জ এলাকায় উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলিতে বিজ্ঞান শিক্ষকের অভাব রয়েছে। তাই মাধ্যমিকের কৃতীরা চলে যাচ্ছে শহরের নামী স্কুলে। তাছাড়া উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরোতেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা এখনও রয়েছে মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এলাকায়।

মুর্শিদাবাদের তৃণমূলের শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান শেখ ফুরকান মনে করেন, সংখ্যালঘু জেলায় আর্থ সামাজিক অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। তাই এই বয়সে এ জেলা থেকে বাইরে খাটতে যাওয়ার পারিবারিক চাপ থাকেই। ফলে মাধ্যমিকের পর ছাত্র কমছে। আর নদিয়ায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার যুগ্ম আহ্বায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়ের ব্যাখ্যা, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নো-ডিটেনসন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা সহজেই নবম শ্রেণিতে উঠে যাচ্ছে। তারপর পাশ-ফেলের ব্যাপারে স্কুলের সুনামের স্বার্থে সব স্কুলই একটু কড়া হচ্ছে। ফলে সে ভাবে ভাল ফল করতে পারছে না অনেকেই। তাই মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েও একাদশে গিয়ে আটকে পড়ছে তারা।

বৃহস্পতিবার থেকে এ রাজ্যে শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারে পরীক্ষার্থীদের দুটি পৃথক খাতায় উত্তর লিখতে হবে। সেই দু’টি খাতা একসঙ্গে জুড়ে জমা দিতে হবে পরীক্ষা শেষে। ‘নন-প্রোগ্রামিং ক্যালকুলেটর’ পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারবে পরীক্ষার্থীরা। মোবাইলের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। একাদশ শ্রেণির পরীক্ষাও শুরু হবে একই সঙ্গে। সারা রাজ্যে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৮২, ৪২৫ জন। ২০টি জেলার মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদ-সহ ১১টি জেলায় ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

biman hazra raghunathganj higher secondary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE