শুক্রবারের গেরোয় হাজারদুয়ারি দর্শন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পর্যটকরা! ২৫ ডিসেম্বর ছিল শুক্রবার। বছরের শুরুর দিনও পড়েছে শুক্রবার। প্রতি শুক্রবার হাজারদুয়ারি বন্ধ থাকে। ফলে বড়দিনের ছুটিতে যাঁরা হাজারদুয়ারি দর্শনের পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে। একই ভাবে নতুন বছরের শুরুর দিনে যাঁরা স্রেফ বেড়ানো বা পিকনিকের উদ্দেশ্যে হাজারদুয়ারিতে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁরাও হতাশ। কারণ, নতুন বছরের শুরুও যে হচ্ছে শুক্রবার। বড়দিনের আনন্দে মাটি হওয়ায় হতাশা অবশ্য বছরের শেষ রবিবার সুদে আসলে উসুল করে নিয়েছেন পর্যটকরা। পাশাপাশি অনেকের অনুযোগ, হাজারদুয়ারির ঐতিহ্যপূর্ণ সংগ্রহশালার কিছু গ্যালারি বন্ধ কেন? কেনই বা সংগ্রহশালা দেখে বেরোনোর পর সিঁড়িতে বসে পর্যটকদের গল্প-আড্ডায় বাঁধা দেওয়া হচ্ছে? অনেকের বলছেন, ‘‘সিঁড়িতে ওঠার মুখে বিভিন্ন জায়গায় দড়ির ব্যারিকেড দিয়ে অহেতুক পর্যটকদের স্বাভাবিক যাতায়াতে বাঁধা দেওয়া হয়েছে।’’
এ দিন সকাল থেকেই পর্যটকদের ভিড় জমতে শুরু করে হাজারদুয়ারিতে। হাজারদুয়ারির অদূরেই মোতিঝিল পর্যটন কেন্দ্র ‘প্রকৃতি তীর্থ’। ভ্রমণপিপাসুরা শুধু হাজারদুয়ারির সংগ্রহশালা দেখিয়ে বাড়ির পথ নেননি, দুপুরের পর তাঁরা ভিড় করেছেন মোতিঝিলেও। দুই জায়গাতেই এ দিন ছিল নির্ভেজাল আনন্দের দিন। পিকনিক-হুল্লোড়-সেলফিতে মেতে উঠলেন লোকজন। সব মিলিয়ে বর্ষশেষের রবিবাসরীয় ছুটির সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেটেপুটে উপভোগ করলেন পর্যটকরা। আর ভিড় সামাল দিতে সকাল থেকেই প্রস্তুত ছিল পুলিশ। মুর্শিদাবাদ পুরসভা এলাকার প্রতিটি মোড়ে মোতায়েন ছিল পুলিশ।
কিন্তু নিয়মের ফেরে বড়দিনে হাজারদুয়ারি বন্ধ থাকায় ওই দিনে বেশ ভিড় হয়েছিল ‘প্রকৃতি তীর্থ’ মোতিঝিল পর্যটন কেন্দ্রে। বড়দিনে মোতিঝিলে প্রায় ১০ হাজার পর্যটক যান। মোতিঝিল পর্যটন কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের আশা, বছরের প্রথম দিনেও পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাবে। রবিবার প্রায় সাড়ে বারো হাজার পর্যটক হাজারদুয়ারিতে আসেন। আর মোতিঝিলে আসেন প্রায় ন’হাজার পর্যটক। গত তিন
দিনে মোতিঝিল পর্যটন কেন্দ্র টিকিট বেচে আয় করেছেন প্রায় ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা।
তবে ছুটির দিনে এসে অনেক পর্যটকই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু পরিষেবা দিতে ব্যর্থ বলে পর্যটকেরা অনুযোগ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘এত দিন বহিরাগত পর্যটকরা হাজারদুয়ারির বিভিন্ন গ্যালারি দেখে বার হয়ে সিঁড়িতে বসে গল্প-আড্ডায় মেতে উঠতে পারতেন। কিন্তু এ দিন সিঁড়িতে বসার ব্যাপারে একপ্রকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কর্তৃপক্ষ। সিঁড়ির নাইলনের মোটা দড়ি ঝুলিয়ে পর্যটকদের বসতে বাঁধা দেওয়া হয়। বেলঘরিয়ার বাসিন্দা কণিকা ভট্টাচার্য জানান, পর্যটন মরসুমে উপচে পড়া ভিড় হাজারদুয়ারিতে। কিন্তু দড়ির ব্যারিকেড তৈরি করে পর্যটকদের স্বাভাবিক যাতায়াতে বাঁধা তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। হাজারদুয়ারি সংগ্রহশালার এক ‘গাইড’ রকি শেখ জানান, দড়ি দিয়ে ঘিরে দেওয়ায় ফলে নামার পথ সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। ওই সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে পর্যটকদের ভিড়ে সামান্য ঠেলাঠেলিতেই কয়েকজন পড়ে গিয়ে অল্পবিস্তর চোটও পান। তা সত্ত্বেও মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই।
প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর থেকে বর্ষশুরুর দিন পর্যন্ত হাজারদুয়ারি দেখতে পর্যকদের ভিড়ের কথা কারও অজানা নয়। এই ভিড়ের বিষয়ে অবগত থাকার কথা হাজারদুয়ারি সংগ্রহশালার দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা অ্যাসিন্ট্যান্ট সুপারেন্টেন্ডিং আর্কিওলজিস্ট নয়ন চক্রবর্তীরও। কিন্তু তিনি গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে বাইরে রয়েছেন। তিনি কোথায় গিয়েছেন তা জানাতে পারেননি অধস্তন কর্মীরাও। তাঁর অনুপস্থিতিতে মিউজিয়ামের দায়িত্বভার থাকার কথা অ্যাসিস্ট্যান্ট আর্কিওলজিস্টের উপরে। কিন্তু ওই পদে কেউ নেই। মাস দুয়েক ধরে পদটি শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। মিউজিয়াম সূত্রে জানা গিয়েছে, নয়নবাবু তাঁর অনুপস্থিতিতে মিউজিয়ামের দায়িত্বভার
দিয়ে গিয়েছেন একজন ‘কারপেন্টার’ এবং অন্য জন ‘ইলেকট্রিশিয়ান’ পদে কর্মরত কর্মীর উপর। প্রশ্ন উঠছে, তাঁদের পক্ষে সংগ্রহশালার দেখভাল করা সম্ভব কিনা। ‘ইলেকট্রিশিয়ান’ চন্দন রজক দাস এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি
জানান, ‘‘যা বলার সাহেব বলবেন।’’ বার বার ফোন করেও নয়নবাবুর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy