বাঙালির নিজের সন্তানকে ‘দুধেভাতে’ রাখার আর্তি বহুদিনের। সমস্যা জর্জরিত মধ্যবিত্ত জীবনে কেউ কেউ আবার দুধভাত না হোক ছেলেমেয়েদের যাতে নুনভাতটুকু জোটে তার জন্য আরাধ্য দেবদেবীর কাছে প্রার্থনা করে আসছেন বছর বছর ধরে। কিন্তু মনোহরপুরের মানুষের দাবি একটু অন্যকরম। ‘সারা বছর গোলায় ধান রেখো মা’ এই আর্তি জানিয়ে প্রতিবছরই ধুমধাম করে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর করেন মনোহরপুরের প্রায় ২৪৫টি পরিবার।
সারা বাংলা যখন দুগোর্ৎসবের বোধন-বিসর্জন নিয়ে মাতোয়ারা তখন মনোহরপুরের মানুষজন হা-পিত্যেশ করে বসে থাকেন লক্ষ্মীপুজোর দিনটার জন্য। লক্ষ্মীপুজোর কটা দিন যেন তাঁদের কাছে শারদোৎসব। কবে থেকে ওই পুজোর শুরু হয়েছিল তা জানেন না গ্রামবাসীরা। তবে তাঁদের দাবি, এক শতকেরও বেশি সময় ধরে ওই পুজো হয়ে আসছে। কালে কালে পরিবর্তন ঘটেছে অনেক। কিন্তু ওই পুজো পদ্ধতি বা পরিচালনায় কোনও পরিবর্তন ঘটেনি বলে দাবি বাসিন্দাদের। পুরোনো প্রথা মেনেই পুজোর গতিপ্রকৃতি ঠিক করার জন্য প্রতিবছরই গ্রামের বৈরাগ্যপাড়া, মাঝপাড়া, উপরপাড়া, নামুপাড়া, খামারুপাড়া থেকে দু’জন করে মোড়ল নিয়ে ১২ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির তত্ত্বাবধানে চলে পুজো। মোট তিনদিনের পুজো আয়োজন করা হয়। আলো দিয়ে সাজানো হয় পথঘাট। আয়োজন করা হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এতদিনের মাটির মন্দির ভেঙে গড়ে তোলা হয়েছে পাকা মন্দির। মন্দির যদিও এখনও অসমাপ্ত তবে বাসিন্দাদের স্থির বিশ্বাস লক্ষ্মীর কৃপায় আগামী এক বছরের মধ্যেই তা তৈরি হয়ে যাবে।
কৃষিজীবী গ্রামবাসীদের বিশ্বাস যত বিপদ আসুক না কেন তার হাত থেকে সহজেই উদ্ধার পাওয়া যাবে গোলায় ধান থাকলে। তাই গ্রামের প্রত্যেক পরিবার থেকে একজন করে হলেও লক্ষ্মীর আরাধনার জন্য উপবাস করে থাকেন। মোড়ল উত্তম দাস, অশোক মণ্ডলরা বলেন, “কান্দি এমনিতেই বন্যাপ্রবণ এলাকা বলে চিহ্নিত। বহুবার বন্যা হয়েছে। মাঠের ফসল নষ্ট হয়ছে। গোলাতে ধান ছিল বলেই আমরা প্রত্যেক বার রক্ষা পেয়েছি। মা লক্ষ্মীর কৃপায় আমাদের গোলা কোনও বার খালি হয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy