Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দোলের সকালে রং নেই আশাবরীতে

এ বার বারবার মনে পড়বে গত বারের কথা। আশাবরী আবাসনের তাদের ছোট ঘর থেকে বেরিয়ে রং খেলেছিল মেয়েটা। সাত সকালেই রঙীন হয়ে উঠেছিল। মেধাবী ছাত্রী, কিঞ্চিৎ লাজুক। কিন্তু দোলের দিন অন্যদের সঙ্গে রঙিন হয়ে উঠতে বাধা ছিল না তাঁর।

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০১:১৮
Share: Save:

এ বার বারবার মনে পড়বে গত বারের কথা।

আশাবরী আবাসনের তাদের ছোট ঘর থেকে বেরিয়ে রং খেলেছিল মেয়েটা। সাত সকালেই রঙীন হয়ে উঠেছিল। মেধাবী ছাত্রী, কিঞ্চিৎ লাজুক। কিন্তু দোলের দিন অন্যদের সঙ্গে রঙিন হয়ে উঠতে বাধা ছিল না তাঁর।

দোলের সকালে গত বারও আশাবরী আবাসনের সমবয়সীদের সঙ্গে রং খেলার জন্য বেরিয়েছিল। অন্য সকলের সঙ্গে বালতিতে রং গুলে পিচকারির মধ্যে ভরে সেই রং ছিটিয়ে দিয়েছিল। দু-হাতে রং মেখে মুখে মাখিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতাতেও মেতে উঠেছিল। রংয়ের উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল আবাসন চত্বর। গত বারও দোলে রঙিন হয়ে উঠেছিল দ্বাদশ শ্রেণির আত্রেয়ী বসু।

এ বছর আত্রেয়ী-সহ পরিবারের তিন মহিলার অকাল প্রয়াণে আচমকা শূন্যতা সেই আবাসনে। ওই তিন মহিলার স্মরণে দোল উৎসব পালন হবে বলে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশাবরী আবাসনের ‘সি’-‘ডি’ ব্লক সোসাইটি’র সম্পাদক প্রদীপ পুততুণ্ডু বলেন, “ওই পরিবারের সদস্যদের স্মরণ করেই এ বছর দোল খেলবে না বলে আবাসনের বাসিন্দারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে আবাসনে অনেক অল্পবয়সী স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা রয়েছে। তারা যদি

দোল খেলে তাহলে তাদের নিষেধ করা উচিত হবে না। তবে আমরা বড়রা কেউ রঙ খেলব না।”

গত ৬ জানুয়ারি আশাবরী আবাসনের ‘ডি’ ব্লকের নিচের তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে মধ্য চল্লিশের বিজয়া বসু, বিজয়াদেবীর পিসি বৃদ্ধা প্রভা দাস এবং বিজয়াদেবীর তরুণী কন্যা আত্রেয়ী বসুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় নিত্যানন্দ দাস নামে এক জ্যোতিষীকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শিলিগুড়ির হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে পুলিশ। আদালতের নির্দেশে নিত্যানন্দ এখন বহরমপুর জেল হেফাজতে। ওই খুনের প্রতিবাদে এবং খুনীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মোমবাতি মিছিলও বের হয় বহরমপুরে। স্বতঃস্ফূর্ত ওই মিছিলে সামিল হন আশাবরী আবাসনের বিভিন্ন ব্লকের বাসিন্দা থেকে বিভিন্ন আবাসনের বাসিন্দা ও প্রতিবেশীরা। মোমবাতি হাতে ওই মিছিলে পথ হাঁটেন আত্রেয়ীর স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে সহপাঠী সকলেই।

ওই ‘প্রতিবাদ’ মিছিলের অন্য তম উদ্যোক্তা ছিলেন চন্দ্রাণী হাজরা বন্দোপ্যাধ্যায়। তিনি বলেন, “জীবন তো থেমে থাকে না। যখনই আবাসনের নিচে নামি। তখনই ওঁদের ফ্ল্যাটের দিকে চোখে চলে যায়। ভীষণ ভাবে ওদের কথা মনে পড়ে। দোলের দিন আরও বেশি করে ওদের কথা মনে পড়বে।”

‘ই’ ব্লকের বাসিন্দা রত্না দাস বলেন, “আবাসনের সব ছেলেমেয়েরা বালতিতে রং গুলছিল। ঠিক তখনই আত্রেয়ী নিজে থেকেই ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল দোল খেলার জন্য। বালতিতে এক সঙ্গে রঙ গুলে ছড়িয়েছিল বলেও মনে পড়ছে। তবে বড়রা এ বছর রং খেলব না। তবে ছেলেমেয়েরা রঙ খেলবে। আবাসনে বিজয়ার কাছের বন্ধু যারা তারা আমরা ঠিক করেছি এ বছর দোল খেলব না।”

‘ডি’ ব্লকের বাসিন্দা ইসলামপুর গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা কাকলি দাস বলেন, “দোলের দিন ওদের খুব বেশি করে মনে পড়বে। কারণ দোলকে ঘিরে যে উৎসব, সেই উৎসবে ওদের অনুপস্থিতি ভীষণ করে মনে পড়বে।” আবাসনের বাসিন্দা জেএন অ্যাকাডেমি’র মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সংলাপ দাস বলেন, “গত বার আত্রেয়ীদি’র সঙ্গে দোল খেলার স্মৃতি এখনও মনে আছে। আবাসনের নিচে এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে রঙ খেলছিলাম। চোখ বুজলেই দেখতে পাই। পিচকারি দিয়ে রং দেওয়া। রঙ হাতে নিয়ে মুখে মাখানো। আত্রেয়ীদিকে এ বছর ভীষণ ভাবে মিস করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

holi shubhashish saiyad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE