Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিত্য যানজটে নাকাল বেলডাঙা

প্রাচীন লালবাগ শহরকে পাল্লা দিতে না পারলেও বহরমপুরের সঙ্গে টক্কর দিতেই পারে ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ের শহর বেলডাঙা। এলাকার প্রবীণরা জানাচ্ছেন, বেলডাঙা জনপদ হিসাবে ৫০০ বছরের প্রাচীন। আর স্থানীয় লোকসংস্কৃতি গবেষকদের দাবি, বিভিন্ন সময় মাটি খনন করে এলাকায় যে সমস্ত নিদর্শন মিলেছে তার থেকে জানা যায় এই শহরের বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি।

 এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে কবে, জানে না বেলডাঙা। —নিজস্ব চিত্র

এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে কবে, জানে না বেলডাঙা। —নিজস্ব চিত্র

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০৩
Share: Save:

প্রাচীন লালবাগ শহরকে পাল্লা দিতে না পারলেও বহরমপুরের সঙ্গে টক্কর দিতেই পারে ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ের শহর বেলডাঙা। এলাকার প্রবীণরা জানাচ্ছেন, বেলডাঙা জনপদ হিসাবে ৫০০ বছরের প্রাচীন। আর স্থানীয় লোকসংস্কৃতি গবেষকদের দাবি, বিভিন্ন সময় মাটি খনন করে এলাকায় যে সমস্ত নিদর্শন মিলেছে তার থেকে জানা যায় এই শহরের বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি। রেলপথের দু’দিকে বিছানো ১৭ টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরী হয় এই শহর। প্রথমে সরকার মনোনীত ১৭ জন সদস্য নিয়ে তৈরি হয় বেলডাঙা পুরবোর্ড। তখন শহরের বেশিরভাগ রাস্তা ছিল কাঁচা। সেই রাস্তায় যানবাহন বলতে ছিল গরু অথবা মোষে টানা গাড়ি। হাতে গোনা কিছু মোটরগাড়ি চলত। রাস্তাও ছিল সঙ্কীর্ণ। সেই রাস্তা দিয়ে পাশাপাশি দুটো গাড়ি যাতায়াত করা কার্যত অসম্ভব ছিল।

পরে গ্রামপঞ্চায়েত থেকে বেলডাঙা পুরসভায় উন্নীত হল ঠিকই। কিন্তু সমস্যার সমাধান তেমন হয়নি। প্রধান রাস্তাগুলির দু’পাশে পথচারীদের হাঁটার জন্য কোনও জায়গা না থাকায় পদে পদে দুঘর্টনা বাড়তে থাকল। পরে পিচের রাস্তা হলেও বেশিরভাগ রাস্তার পরিসর বদলায়নি। বেলডাঙা কলেজ রোড, ছাপাখানা চত্ত্বর ও বর্তমানে বিদ্যাসাগরের মূর্তি থেকে জুগি বাড়ির পাশ দিয়ে নেতজি পার্ক মোড় যাওয়ার রাস্তা চওড়া হল। বড়ুয়া কলোনি, সরুলিয়া কলোনি, রেলবাজার ও কলেজ মাঠের কিছু রাস্তার পরিবর্তন হল। কিন্তু রবীন্দ্র মূর্তি থেকে বেলডাঙা সোনাপট্টি দিয়ে যে রাস্তা হরিমতি বালিকা বিদ্যালয় যাচ্ছে সেই রাস্তা সঙ্কীর্ণই থেকে গেল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরে জনসংখ্যার পাশাপাশি বাড়তে থাকল গাড়িঘোড়ার সংখ্যাও। কিন্তু সেই অনুপাতে রাস্তাঘাট বা যান নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা তৈরি হল না। আর তার ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে।

বেলডাঙা শ্রীশচন্দ্র বিদ্যাপীঠের বিজ্ঞানের শিক্ষক আব্দুল হালিম বিশ্বাস বলেন, “যানজট এই শহরের অন্যতম বড় সমস্যা। পরিকল্পনা ছাড়ায় পঞ্চায়েতের রাস্তাগুলিকে শহরের প্রধান রাস্তার স্বীকৃতি দেওয়া হল। ফলে গলির মতো রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাতায়াত করায় যানজট দিনের পর দিন বাড়তেই থাকল।”

একে একে শহরে তৈরি হল নতুন বসতি। কলেজের পিছনের ফাঁকা মাঠে বাড়ি তৈরী হতে শুরু হল। নামে কলেজ মাঠ হলেও সেখানে মাঠ খুঁজে পাওয়া কঠিন। একই ভাবে তৈরি হল নজরুলপল্লি, আবুল কালাম আজাদ পল্লি, নতুন হাসপাতাল রোড, শ্রীশচন্দ্র স্কুলপাড়া। কিন্তু নতুন কোনও বড় রাস্তা তৈরি হল না। উল্টে ওই সব সরু রাস্তার দু’পাশে গজিয়ে উঠল অসংখ্য দোকানপাট। শহরের বাসিন্দারা জানান, যানজটের অন্যতম বড় কারণ বেলডাঙা-পাঁচরাহা রেল গেট। বেলডাঙা শহরের একমাত্র প্রবেশ পথ এই গেট। বহরমপুর-কৃষ্ণনগর রেললাইনে দৈনিক মোট ১৩ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। যত বার ট্রেন যাতায়াত করে তত বার বন্ধ হয় রেলের গেট। ওই রাস্তা দিয়েই বেলডাঙা-আমতলা রোডের বাস লরি যাতায়াত করে। ফলে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারন করে। মঙ্গলবার বেলডাঙায় হাট বসে। সেই দিন সমস্যা আরও বেড়ে যায়। বেলডাঙা হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা আনোয়ারা খাতুন বলেন, “আমার বাড়ি থেকে সেন্টার এক কিলোমিটার দূরে নাথপাড়ায়। সকালে যখন বাড়ি থেকে বেরোয় তখন ভাগীরথী এক্সপ্রেস যায়। আবার যখন বাড়ি ফিরি তখন হাজারদুয়ারী এক্সপ্রেস আসে। ফলে দু’বার ওই রেলগেটে যানজটে আটকে পড়তে হয়।”

বেলডাঙায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে। রয়েছে কলেজ ও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস। ফলে লেখাপড়া ও নানা কাজে বাইরে থেকেও বহু মানুষ আসেন এই শহরে। রাস্তার দু’পাশে গজিয়ে ওঠা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে সাইকেল, মোটরবাইক ছাড়াও টুকটুক, লছিমন, ভানরিকশা।

বেলডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের শেষ প্রধান কমলারঞ্জন ঘোষ বলেন, “আমার সময়েই বেলডাঙা পঞ্চায়েত থেকে পুরসভায় উন্নীত হয়। সেই সময় শহরের প্রধান রাস্তা যা ছিল, এখনও তাই আছে। বলার মধ্যে কয়েকটি সংযোগকারী রাস্তা হয়েছে। সেগুলো বাইপাসের কাজ করলেও বড় গাড়ি ঢোকার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়। নতুন করে কিছু না করলে এ ভাবে কতদিন সামাল দেওয়া যাবে বলা কঠিন। এই যানজটের গেরোয় প্রায়ই দুর্ঘটনা লেগেই আছে।

বেলডাঙা এসআরএফ কলেজের অধ্যাপক দেবর্ষি ভট্টার্চায বলেন, “পরিকল্পনা না থাকার কারণেই এই ভোগান্তি। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে সকলেরই উপকার হয়।” বেলডাঙার পুরপ্রধান অনুপমা সরকার বলেন, “যানজট নিয়ে শহরবাসী সত্যিই নাকাল। আমরা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে যানজট মোকাবিলায় বেশ কয়েকজন কর্মী নিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু তাতে অবস্থার তেমন কোনও কাজ হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amar sohor traffic jam sebabrata mukhopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE