Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সাত মাসের শিশুর দেহ কুয়োয়, গ্রেফতার জেঠিমা

সাত মাসের শিশুপুত্রকে শ্বাসরোধ করে মেরে কুয়োয় ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল জেঠিমার বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা থানার আধোঁয়া গ্রামে সোমবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ মিঠুন মণ্ডল নামে ওই শিশুর দেহ উদ্ধারের পর উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মারমুখী জনতার হাত থেকে জেঠিমা অর্চনা মণ্ডলকে উদ্ধার করে।

উঠোনের সেই কুয়ো।—নিজস্ব চিত্র।

উঠোনের সেই কুয়ো।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

সাত মাসের শিশুপুত্রকে শ্বাসরোধ করে মেরে কুয়োয় ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল জেঠিমার বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা থানার আধোঁয়া গ্রামে সোমবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ মিঠুন মণ্ডল নামে ওই শিশুর দেহ উদ্ধারের পর উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মারমুখী জনতার হাত থেকে জেঠিমা অর্চনা মণ্ডলকে উদ্ধার করে। মৃত শিশুর বাবা জিতেন মণ্ডলের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দুপুরেই অর্চনাদেবীকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, জেরায় অর্চনাদেবী মেনে নিয়েছেন, জায়ের উপর আক্রোশ থেকে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।

ফরাক্কায় এনটিপিসি লাগোয়া আধোঁয়া গ্রামের মণ্ডল পাড়ায় খুড়তুতো, জেঠতুতো মিলে ১৫টি পরিবার পাশাপাশি থাকে। স্থানীয় কৃষ্ণ মণ্ডলের পাশেই থাকেন তাঁর ভাই জিতেন মণ্ডল। কৃষ্ণবাবু স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাজ দেখভাল করেন। জিতেনবাবুর পেশা মাছ ধরা হলেও মাঝে-মধ্যেই দিনমজুরিও করতেন। একই উঠোনে দুই ভাইয়ের মধ্যে কথাবার্তা থাকলেও দুই জা অর্চনা ও কবিতার নিত্য ঝগড়া বাধত। এদিন দুই ভাই সকালেই খেয়ে-দেয়ে কাজে বেড়িয়ে যান। ছোট জা কবিতাদেবী বলেন, “বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ সাত মাসের কোলের ছেলেটাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় দোলনায় শুইয়ে দিই। বছর তিনেকের বড় ছেলেকে নিয়ে পাশেই পুকুর ঘাটে যাই বাসন ধুতে। মিনিট পনেরো পর ফিরে দোলনার দিকে চেয়ে দেখি ছেলে নেই। এরপর খোঁজাখুঁজি শুরু হয়।” কোথাও ছেলেকে না পেয়ে কবিতাদেবী ছুটতে ছুটতে যান মাইলখানেক দূরে এনটিপিসি-র ছাইয়ের গাদায় কর্মরত স্বামীকে ডাকতে। তড়িঘড়ি জিতেনবাবু ও তাঁর খুড়তুতো ভাই সত্যম বাড়িতে ফিরে আসেন। সকলে মিলে মিঠুনের খোঁজ করতে থাকেন। সত্যম বলেন, “বাড়ির উঠোনেই একটা বাঁধানো কুয়ো রয়েছে। পাশেই টিনের একটা ঢাকনা পড়ে থাকলেও কুয়োটা কোনও দিনই ঢাকা থাকে না। হঠাৎ নজরে আসে টিনের ঢাকনা দিয়ে কুয়োটা ঢাকা। ঢাকা তুলে দেখি ভাইপো কুয়োর মধ্যে জলের উপর ভাসছে। সঙ্গে সঙ্গে দড়ি বেঁধে তাকে তোলা হয়। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।”

ততক্ষণে গ্রামের লোক ভেঙে পড়েছে বাড়িতে। সকলেরই সন্দেহ গিয়ে পড়ে বড় জা অর্চনাদেবীর উপর। তাঁকে ঘিরে টানাহ্যাঁচড়া শুরু হয়। প্রতিবেশী স্বপন চৌধুরীর কথায়, “কেউ মারতে যাচ্ছে, কেউ আবার বিশ্বাস করতে পারছে না এমনটা সম্ভব বলে।” অর্চনাদেবীর ২২ বছরের ছেলে প্রকাশ মণ্ডল হতভম্ব গলায় বলেন, “একমাত্র মা ছিল বাড়িতে। তাই সন্দেহ গিয়ে পড়ছে মায়ের উপর। কী ভাবে এমনটা হল, বুঝতে পারছি না।”কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। উত্তেজিত গ্রামবাসীর চড়-থাপ্পড় তখন পড়তে শুরু করেছে অর্চনাদেবীর মাথায়-পিঠে। পড়শি ঊষা মণ্ডল বলেন, “কার পরিবারে ঝগড়াঝাঁটি নেই। তাই বলে জেঠিমা হয়ে নিজের সাত মাসের ভাইপোকে এভাবে কেউ খুন করতে পারে, ভাবাও যায় না। ওর ফাঁসি হওয়া উচিত।”

জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে গাড়িতে তোলা হয় অর্চনাদেবীকে। থানায় নিয়ে যাওয়া হয় মৃত শিশুর মা ও বাবাকেও। থানায় পুলিশের কাছে মৃতের বাবা জিতেন মণ্ডল অভিযোগ দায়ের করলে গ্রেফতার করা হয় অর্চনাদেবীকে। জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “দুই জায়ের মধ্যে ঝগড়ার জেরেই এই নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটেছে। দোলনা থেকে ঘুমন্ত শিশুকে তুলে পাতকুয়োর ফেলে দেওয়ার অভিযোগ হয়েছে জেঠিমার বিরুদ্ধে। তাঁকে আমরা গ্রেফতারও করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

seven month old baby farakka killed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE