সকাল থেকেই মদের ঠেকে শুরু হয় লোকজনের আনাগোনা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মদ্যপদের অত্যাচার। সোমবার রাতে তা এতটাই চরমে ওঠে যে চুপ করে আর বাড়িতে বসে থাকতে পারেননি কলেজ শিক্ষক শ্রীজয় মণ্ডল। সটান মদের ঠেকে গিয়ে প্রতিবাদ করেন তিনি। আর সেই ‘অপরাধে’ প্রতিবাদী ওই কলেজ শিক্ষককে বেধড়ক মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দিল মদের ঠেকের কারবারি ও মদ্যপরা। ফরাক্কার অর্জুনপুর কান্তর মোড়ের ওই ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ জানানো হলে দুষ্কৃতীরা বাড়িতে এসে ওই শিক্ষককে শাসিয়ে গিয়েছে, ‘রাস্তায় বেরোলেই গুলি করে মারব। দেখি কোন পুলিশের বাবা তোকে বাঁচায়?’
ফরাক্কার অর্জুনপুর-সহ আশপাশের এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই রমরমিয়ে চলছে একাধিক মদের ঠেক। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত ওই ঠেকগুলোতে চলে দিশি মদের কারবার। পাড়ার মধ্যেই গজিয়ে ওঠা ওই ঠেকগুলোতে সকাল থেকেই ভিড় করে মদ্যপ ও সমাজবিরোধী লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে একাধিকবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ তো কিছুই হয়নি, বরং ঠেকের সংখ্যা আরও কিছু বেড়েছে। বছর কয়েক আগে বেআইনি এইসব ঠেকের দৌরাত্ম্য রুখতে অর্জুনপুরের জনাকয়েক যুবক একটি প্রতিবাদ মঞ্চও তৈরি করেন। ফরাক্কা সৈয়দ নুরুল হাসান কলেজের বাংলার শিক্ষক শ্রীজয়বাবু ছিলেন ওই মঞ্চের অন্যতম প্রধান হোতা। কিন্তু বছর না ঘুরতেই ঝামেলা এড়াতে সেই মঞ্চ থেকে এক এক করে প্রায় সকলেই চলে গেলেও হাল ছাড়েননি শ্রীজয়বাবু।
মদের ঠেকের বিরুদ্ধে কার্যত একাই লড়ছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার লিখিত অভিযোগও জানিয়েছিলেন ওই শিক্ষক। নাম কা ওয়াস্তে পুলিশ এসে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরের দিন সকালে বাড়ি ফিরে নতুন উদ্যোগে ফের তারা মদের ঠেক চালু করে দিয়েছে। শ্রীজয়বাবুর বাড়ির পাশেই রয়েছে একটি মদের ঠেক। সেখানে মদ্যপদের অত্যাচার দিনের পর দিন বেড়েই চলেছিল। সোমবার কলেজ থেকে ফিরে বাড়িতেই ছিলেন শ্রীজয়বাবু। কিন্তু সেই ঠেক থেকে ভেসে আসা চিৎকার, অশ্রাব্য কথাবার্তা শুনে চুপ করে আর বাড়িতে বসে থাকতে পারেননি তিনি। মায়ের নিষেধ অগ্রাহ্য করে একাই তিনি ওই ঠেকে গিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। অভিযোগ, ঠেকের কারবারি সহ বেশ কয়েকজন মদ্যপ দুষ্কৃতী শ্রীজয়বাবুকে বেধড়ক মারধর করে। তাঁর মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় অর্জুনপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলে মাথায় পাঁচটি সেলাই পড়ে। ওই রাতেই খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই ঠেক ভেঙে দিলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ফরাক্কা থানার পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের ধরতে ওই এলাকায় বেশ কয়েকবার হানা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের ধরা যায়নি।