রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলির দৈন্য দশা নিয়ে দিনকয়েক আগেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিলেন তৃণমূলেরই শিল্পী সাংসদ যোগেন চৌধুরী। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে পড়েছিল রাজ্যের শাসক দল। সেই ঘটনার দিনকয়েক পরেই শিক্ষকের অভাবে রীতিমতো সভা ডেকে সাগরদিঘির দিয়ার বালাগাছির বাসিন্দারা গ্রামের একমাত্র আপার প্রাইমারি স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেন। সোমবার ওই ঘটনার পরে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ২৩২ জন পড়ুয়ারা আতান্তরে পড়ল।
সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কিনার হোসেন জানান, সবচেয়ে কাছের গৌরীপুর হাই স্কুল গ্রাম থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে। সেই কথা মাথায় রেখেই ২০০৯ সালে গ্রামে এই আপার প্রাইমারি স্কুলটি চালু করা হয়। এতদিন অবসরপ্রাপ্ত ৩ জন হাই স্কুল শিক্ষককে অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে স্কুলটি চলছিল। তাঁদের মধ্যে ২ জন শিক্ষক অবসর নিয়েছেন এ বছর জানুয়ারিতে। তারপর থেকেই একজন শিক্ষক স্কুলের ৪টি ক্লাস চালাচ্ছিলেন। তিনিও জানিয়ে দিয়েছেন, একা একা তিনি আর স্কুল চালাতে পারবেন না। কিনার বলেন, “এই অচলাবস্থার কথা বহু বার শিক্ষা দফতরের কর্তাদের জানিয়েছি। কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তাই স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া গ্রামবাসীদের আর কিছুই করার ছিল না। শাসক দলের লোক হলেও এই বাস্তব অবস্থাকে অস্বীকার করি কী করে!”
ঝাঁ চকচকে দ্বিতল স্কুল ভবনে ৬ টি ঘর, চেয়ার, বেঞ্চ, টেবিল অভাব নেই কোনও কিছুরই। অথচ নেই শুধু শিক্ষক। স্কুলের একমাত্র শিক্ষক মহম্মদ আসাদুল্লা বলেন, “৬৪ বছর বয়সে বাড়ি থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরের এই স্কুলে এসে শিক্ষকতা করা এমনিতেই কষ্টকর। তার উপরে একাই পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৪টি ক্লাসের প্রায় আড়াইশো পড়ুয়াকে নিয়ে স্কুল চালানো আর সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষা দফতর ও গ্রামের লোকজনকেও সে কথা জানিয়ে দিয়েছি।” তারপরেই সোমবারের সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।