তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার নদিয়ার ছ’টি পুরসভার পুরপ্রধান নিয়ে সহমতে পৌঁছনো গেলেও হরিণঘাটার পুরপ্রধান কে হবেন তা নিয়ে জট কাটল না এ দিনও!
বিরোধী শূন্য হরিণঘাটা পুরসভার পুরপ্রধান নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই একাধিক গোষ্ঠীর দড়ি টানাটানি চলছে। ওই পদে কানাঘুষো চলছে অন্তত তিন-চারটি নাম নিয়ে। এক দিকে রয়েছে হরিণঘাটার বিধায়ক নীলিমা নাগ ও বর্তমান ব্লক সভাপতি চঞ্চল দেবনাথের প্রার্থী, অন্য দিকে রয়েছেন ব্লক সভাপতির পদ থেকে অপসারিত দিলীপ রায় নিজেই। দৌড়ে রয়েছেন চাকদহের বিধায়ক রত্না ঘোষের প্রার্থীও। তা নিয়েই তৈরি হওয়া জটের মীমাংসা হল না শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতেও। বিষয়টি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কালীঘাটে। এ বার সিদ্ধান্ত নেবেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতি সত্ত্বেও কেন ঐক্যমতে পৌঁছনো গেল না? একটু থমকে জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক পার্থবাবুর জবাব, ‘‘হরিণঘাটা সব কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তাই এ দিন পুরপ্রধান ঠিক করা যায়নি।’’
এ দিন জেলার বাকি ৬টি পুরসভার পুরপ্রধানের নাম ঠিক হয়ে গিয়েছে। তবে কোনও পুরসভাতেই পুরপ্রধান বদলানোর ‘সাহস’ দেখায়নি শাসকদল। নবদ্বীপে বিমানকৃষ্ণ সাহা, শান্তিপুরে অজয় দে, রানাঘাটে পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় এবং বীরনগরে পার্থকুমার চট্টোপাধ্যায় এ বারও পুরপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। বামেদের হারিয়ে দখল করা গয়েশপুর পুরসভাতেও নির্বাচন শান্তিতে মিটেছে। পুরপ্রধান হয়েছেন মরণকুমার দে।
২৫ এপ্রিল নদিয়ার আটটি পুরসভায় নির্বাচন হয়। ফল প্রকাশ হলে দেখা যায় তাহেরপুর তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে! জিতেছে বামেরা। এ দিন ওই সব পুরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে দুপুরে কল্যাণী বিদ্যাসাগর মঞ্চে সভা করে তৃণমূল। ছিলেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, নন্দ সাহা, জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তেরাও। একে একে পুরসভাগুলির কাউন্সিলরদের সঙ্গে চলছিল আলোচনা। কোনও পুরসভার ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত নিতে তেমন সময় লাগেনি। শেষে ডাকা হয় প্রথম পুরভোট হওয়া হরিণঘাটার কাউন্সিলরদের। কেননা নেতৃত্বের কাছে খবর ছিল, হরিণঘাটা নিয়ে বেগ পেতে হতে পারে!
ভিতরে সভা চলছে। বিদ্যাসাগর মঞ্চের বাইরে তখন উৎসাহীদের ভিড়। ভেতর থেকে কেউ বেরিয়ে এলেই তাঁকে ঘিরে চলছে প্রশ্ন—‘‘দাদা কী হচ্ছে ভিতরে? কার নাম উঠল? কে পেল...!’’ প্রশ্নবান থেকে রেহাই পায়নি সংবাদমাধ্যমও।
কিন্তু, কী হল ভিতরে?
তৃণমূল সূত্রে খবর, হরিণঘাটার ১৭ জন কাউন্সিলর তিনটি দলে ভাগ হয়ে যান। তাঁদের আট জন চাকদহের বিধায়ক রত্না ঘোষের কাছের লোক বলে পরিচিত। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মানিক ভট্টের পাশে দাঁড়ান তাঁরা। অন্য আট জন হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূল সভাপতি চঞ্চল দেবনাথের কাছের লোক বলে পরিচিত ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজীব দালালকে সমর্থন করেন। মাঝে ছিলেন পুরপ্রধান পদের অন্যতম দাবিদার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দিলীপকুমার রায়। ভোটাভুটির পরিস্থিতি তৈরি হলে বিবাদমান যে কোনও গোষ্ঠীকে দিলীপবাবুর উপরে নির্ভর করতে হত।
পরিস্থিতি দেখে মুহূর্তে বদলে যায় সমীকরণ। এক সময় দেখা যায়, মানিকবাবুর পক্ষের লোকেরা চঞ্চল-শিবিরকে ঠেকাতে দীলিপবাবুর পাশে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেন। পরতে পরতে তৈরি হওয়া টানটান নাটক এ দিন ‘ক্লাইম্যাক্সে’ পৌঁছয়নি। দলনেত্রীর কোর্টে বল ঠেলে এ দিনের মতো যবনিকা পড়ে!
দলনেত্রীর সিদ্ধান্তে কার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে এখন দেখার সেটাই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy