Advertisement
E-Paper

শ্মশানেও ‘শান্তি’ নেই, ক্ষুব্ধ ভায়না

খোলা আকাশের নীচে শবদাহ করতে হয়। মাথার উপর ছাউনিটুকুও নেই। রোদে তাও দাহ কাজ চলে। কিন্তু বৃষ্টি এলে রক্ষে নেই। অধিকাংশ শ্মশানে শবযাত্রীদের বসার জায়গা নেই।

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০২:৩৭
এখানেই দাহ করতে এসেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় শ্মশান-যাত্রীদের। পায়রাডাঙায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

এখানেই দাহ করতে এসেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় শ্মশান-যাত্রীদের। পায়রাডাঙায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

খোলা আকাশের নীচে শবদাহ করতে হয়। মাথার উপর ছাউনিটুকুও নেই। রোদে তাও দাহ কাজ চলে। কিন্তু বৃষ্টি এলে রক্ষে নেই। অধিকাংশ শ্মশানে শবযাত্রীদের বসার জায়গা নেই। রোদ বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নীচে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অথচ প্রায় প্রতিদিনই শ্মশানগুলোতে শবদাহ হয়। এ জন্য গরিব মানুষদের সমস্যায় পড়তে হয়। তাঁরাই এখানে শবদাহ করতে আসেন। তাদের শান্তিপুর, নবদ্বীপ বা হালিশহরে শবদাহ করতে নিয়ে যাওয়ার আর্থিক সঙ্গতি নেই।

রানাঘাট-গেদে শাখার বহিরগাছি ও ভায়না রেল স্টেশনের মাঝে রেললাইনের ধারে বেশ বড় এলাকা নিয়ে রয়েছে ভায়না শ্মশান। পাশে কোনও নদী বা খাল নেই। একমাত্র ভরসা একটি পুকুর। গরমের সময়ে তাতে জল থাকে না। পুকুরের এক পাশে ছোট লোহার থাম্ব দাঁড় করানো রয়েছে। সেখানেই শবদাহ হয়। তবে মাথার উপর কোনও ছাউনি নেই। শবযাত্রীদের বসার জায়গা নেই। পুকুরের উল্টো দিকে রয়েছে একটি কালি মন্দির। কিছুদিন হয়েছে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে স্নানাগার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

একশো বছরের বেশি পুরানো এই শ্মশানের উপর নির্ভর করেন আশপাশ এলাকায় বেশ কয়েকটি গ্রাম। অধিকাংশ দিনই এখানে শবদাহ হয়। দাহ করার জন্য কাঠ মেলে না। বাইরে থেকে কাঠ কিনে নিয়ে এসে এখানে শবদাহ করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা প্রভাত মণ্ডল বলেন, “গরম ও বর্ষায় শবদাহ করতে কষ্ট হয়। কিন্তু এ ছাড়া কোনও উপায়ও নেই। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ কোনও রকমে দিন যাপন করেন। তাদের পক্ষে মোটা খরচ করে শান্তিপুর বা নবদ্বীপে দাহ করতে যাওয়ার মতো ক্ষমতা নেই।” প্রভাতবাবু আরও বলেন, “গরমের সময়ে পুকুরে জল থাকে না। শবদাহ করার পর স্নান করতে হয়। সেটা সম্ভব হয় না। অনেকে বাড়ি ফিরে গিয়ে স্নান করেন। আবার কেউ পাশে একটা কলে স্নান করে বাড়ি ফিরে যায়।’’

একই কথা শুনিয়ে আরও এক বাসিন্দা খোকন মণ্ডল বলেন, “এখানে কোনও আলোর ব্যবস্থা নেই। রাতে দাহ করতে সমস্যায় পড়তে হয়। শবযাত্রীদের বসার কোনও জায়গা নেই, বৃষ্টি এলে খোলা আকাশের নীচেই দাঁড়িয়ে ভিজতে হয়। আবার প্রচণ্ড গরমের সময়ে ঠাঠা রোদে দাঁড়িয়ে দরদর করে ঘামতে হয়। যার কারণে, এই শ্মশানে দাহ করার কথা শুনলে গ্রামের অনেকেই আসতে চান না। অনেকেই মুখের উপর বলে দেন, ওখানে দাহ করলে যাব না।”

সমস্যার কথা স্বীকার করে বগুলা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দুলাল বিশ্বাস বলেন, “ওই শ্মশানে কিছু সমস্যা আছে। যার কারণে শবযাত্রীদের সমস্যার পড়তে হচ্ছে। সেগুলো থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়ায় হয়েছে। পুকুরে জল শুকিয়ে গিয়েছিল। আপাতত স্যালো মেশিনের পুকুরে জল দেওয়া হচ্ছে। সবসময় যাতে সেখানে জল থাকে, সেই ব্যবস্থাও করা হবে।’’ সেখানে দাহ করার জায়গায় ছাউনি, শবযাত্রীদের বসার জায়গা করা হবে তিনি জানান।

রানাঘাটের পায়রাডাঙা রেলস্টেশন থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে ভাগীরথী নদীর ধরে শিবপুর শ্মশানের অবস্থা আরও করুণ। দূর থেকে বোঝাই যাবে না এটা শ্মশান। কাছে গেলে দেখা যাবে বেশ কিছু পোড়া কাঠ কয়লা ও কাঠের টুকরো পড়ে রয়েছে। অথচ, পঞ্চাশ বছরের বেশি পুরনো ওই শ্মশানে গড়ে প্রতিদিন দু’টি শবদেহ দাহ হয়। নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় এখানে জলের কোনও সমস্যা নেই। বাকি সব সমস্যাই রয়েছে। এখানেও খোলা আকাশের নীচে শবদাহ করতে হয়। শবযাত্রীদের বসার কোনও জায়গা নেই। নেই পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা। নেই কোনও আলোর ব্যবস্থা।

স্থানীয় বাসিন্দা সাধন বিশ্বাস বলেন, “শ্মশান নিয়ে আমাদের চরম সমস্যায় পড়তে হয়। পরিষেবা বলতে কিছুই এখানে নেই। প্রচণ্ড রোদ ও বর্ষার সময়ে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়।” তিনি বলেন, “অনেক সময় দেখা যায় ঝড় বৃষ্টি হলে ঠিকমতো দেহ না পুড়িয়ে জলে ফেলে দিয়ে চলে যায়। সব রকমের ব্যবস্থা থাকলে হয়ত এ সব হত না।”

পায়রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মঞ্জু তালুকদার বলেন, ‘‘শ্মশান নিয়ে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু জায়গার অভাবে কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। যে জায়গায় শ্মশান রয়েছে, সেটা একজনের সম্পত্তি। আশপাশ এলাকায় কেউ জমি দিতে চাইছে না। যার কারণে কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।’’

Crematorium People
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy