বিমল কিশোর, লরি চালক, বিজয়ওয়াড়া
আজ, চার দিন হল। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কটাই দেখছি ঘরবাড়ি হয়ে উঠেছে। এখানেই রান্নাবান্না করে খাচ্ছি, শুচ্ছি। মোরগ্রাম থেকে ৭০ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে শুধু লরি আর লরি। কোনওক্রমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোচ্ছি। কোথাও দু’লেনের মধ্যে লরির তিনটি লাইন। সেই লম্বা লাইনের জড়িয়ে এই ফরাক্কায় পৌঁছলাম চার দিন ধরে। ভাবলেও কান্না পেয়ে যাচ্ছে।
বাপুজির জন্ম দিনে বিকেলে বিজয়ওয়াড়া থেকে রওনা দিয়েছিলাম, লরি বোঝাই মাছ। যাব মেঘালয়। যেতে ১০ দিন, আসতে ১০ দিন লাগে। এ বারে এখানেই দশ দিন লেগে গেল। বুধবার সেতু পার হতে পারলে মেঘালয় পৌঁছতে আরও অন্তত পাঁচ দিন। গাড়িতে ৩০০ বাক্স মাছ আছে। আমি জানি না, সেগুলোর কি অবস্থা। এখনও পচা গন্ধ পাইনি ঠিকই, তবে, দশ দিনের জন্য সংরক্ষিত জিনিস কি পনেরো-ষোলো দিন থাকবে, জানি না। লরি চালাই। রাস্তায় যানজট তো থাকবেই। কিন্তু এটা তো যানজট নয়। পুলিশ আটকে দিয়েছে গাড়ি।
আমরা এক সঙ্গে মাছ নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে রওনা দিয়েছি আটটি গাড়ি। কেউ যাব গুয়াহাটি, কেউ কোচবিহার, কেউ বা মেঘালয়। লরির লাইনে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে আছি। চারিদিকে শুধু জমি। আমরাও হয়রানিতে পড়ি তবে এমন ভাবে থমকে যাইনি কখনও। তার উপর, লরি এমন জায়গায় আটকেছে যে একটা হোটেল পর্যন্ত নেই। এক জামা কাপড়ে রয়েছি। স্নান করব তারও উপায় নেই। শুকনো খাবার রাস্তায় যা পাচ্ছি তাই কিনে খাচ্ছি। মাছের লরি। পচে যেতে পারে। বার বার রাস্তায় পুলিশকে বুঝিয়েছি। কিন্তু কোনও কথা কানে তোলেনি কেউ। রাস্তার উপর ব্যারিকেড। মালিক বার বার ফোন করছেন। মাছ বৃহস্পতিবার পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু রবিবারের আগে যেতে পারব না। বহু রাস্তায় যাতায়াত আছে। কিন্তু ফরাক্কার মত এত দুর্ভোগ কোথাও পোহাতে হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy