Advertisement
E-Paper

রক্তদান শিবির নিয়েও কোন্দল তৃণমূলে

সিন্ডিকেট থেকে কয়লা খাদান— নানা বিষয়ে রাজ্যজুড়ে শাসক দলের একাধিক গোষ্ঠীর কোন্দলের অভিযোগ প্রায় রোজনামচা। সেই তালিকায় এ বার যোগ হল রক্তদান শিবির নিয়েও শাসক দলের কোন্দল। নদিয়ার তেহট্টের বেতাই বি আর অম্বেডকর কলেজে রবিবার ইফতার পার্টির সঙ্গে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিলেন তৃণমূলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস সাহা।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০১:১১
এই রক্তদান শিবির নিয়েই বিতর্ক। বেতাইয়ে কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।

এই রক্তদান শিবির নিয়েই বিতর্ক। বেতাইয়ে কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।

সিন্ডিকেট থেকে কয়লা খাদান— নানা বিষয়ে রাজ্যজুড়ে শাসক দলের একাধিক গোষ্ঠীর কোন্দলের অভিযোগ প্রায় রোজনামচা। সেই তালিকায় এ বার যোগ হল রক্তদান শিবির নিয়েও শাসক দলের কোন্দল।

নদিয়ার তেহট্টের বেতাই বি আর অম্বেডকর কলেজে রবিবার ইফতার পার্টির সঙ্গে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিলেন তৃণমূলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস সাহা। তাপসবাবুর অভিযোগ, তাঁর বিরোধী শিবিরের লোকজন স্থানীয় নেতা, পঞ্চায়েত সদস্য ও কর্মীদের ফোনে হুমকি দিয়ে তাঁর অনুষ্ঠানে না আসার ফতোয়া জারি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এমন সামাজিক অনুষ্ঠানকে পণ্ড করতে যাঁরা উঠেপড়ে লেগেছেন মানুষই তাঁদের বিচার করবেন!’’

কারা করছেন এটা?

রাখঢাক না রেখেই জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপসবাবুর তোপ, ‘‘তেহট্ট ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা ব্লক সভাপতি সঞ্জয় দত্ত এবং পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা ওই ব্লকের যুব তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ পোদ্দার এমনটা করেছেন।’’ বিধানসভা ভোটের আগে তাঁদের নেতা তাপসবাবুকে কোণঠাসা করতেই পরিকল্পিত ভাবে এমনটা করা হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলছেন অনুগামীরা।

প্রতিদিন নানা ঘটনায় শাসক দলের কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু, রক্তদান শিবির নিয়েও কোন্দল! — এমনটা মনে করতে পারেননি ওয়াকিবহল মহলের কেউই।

নদিয়ার জেলা রাজনীতিতে পরিচিত নাম তাপস সাহা। গত বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না পেয়ে বর্তমান নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে প্রচারও সেরেছিলেন। তাপসবাবু নির্দল হয়ে দাঁড়ানোর ফলেই দলের ভরাবাজারে গৌরীবাবু জেতা তো দূর, প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে তৃতীয় হয়েছিলেন। ওই আসনে জিতেছিলেন সিপিএম প্রার্থী। দ্বিতীয় হয়েছিলেন তাপসবাবু। জুটেছিল ‘শাস্তি’ও। বেতাইয়ের প্রকাশ্য জনসভা থেকে তাঁকে বহিষ্কার করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। পরের বছরই আবার তাপসকে দলে ফিরিয়েছিলেন মমতা। কেন? তৃণমূলেরই একটি সূত্রের মত, সাংগঠনিক দক্ষতার জোরেই ফের দলে ফিরতে পেরেছিলেন তাপসবাবু।

তাপস দলে ফিরেছেন, তবে পুরনো বিবাদে দাঁড়ি পড়েনি। তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর, তেহট্ট ১ ব্লকের প্রাক্তন ও বর্তমান পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গে তাঁর কোন্দল দীর্ঘ দিনের। বিধানসভা নির্বাচনের মুখে তা ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। জেলার গোষ্ঠী রাজনীতিতে দিলীপ এবং সঞ্জয় গৌরীশঙ্কর দত্তের শিবিরের অনুগামী বলে পরিচিত। দিন যত গিয়েছে, সম্পর্কে তিক্ততা আরও বেড়েছে। এ দিনের শিবির নিয়ে কোন্দল তারই জের বলে মত ওয়াকিবহল মহলের।

বেতাই ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নারায়ণ সরকার তাপস শিবিরের লোক বলে পরিচিত। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের কাছে নির্দিষ্ট খবর আছে যে, সঞ্জয় দত্ত কিংবা দিলীপ পোদ্দাররা পঞ্চায়েত সদস্য থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীদের রক্তদান শিবিরে না আসার জন্য ধরে ধরে হুমকি দিয়েছেন।’’ বেতাই ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপুরপ্রধান উৎপল বিশ্বাস জানালেন তাঁকে শিবিরে যেতে সরাসরি নিষেধ না করা হলেও তাঁর পরিচিত অনেককেই ফোনে না যাওয়ার ফতোয়া দেওয়া হয়েছে।’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক পঞ্চয়েতের তৃণমূল সদস্য জানালেন, দিলীপবাবু তাঁকে যেতে নিষেধ করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘তবু এসেছি। তাপসদা ডাকলে না এসে কি পারি?’’ অন্য এক সদস্য আবার জানালেন, রক্তদান, ইফতারের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান নিয়ে তাঁরা রাজনীতি করার পক্ষপাতী নন!

গোষ্ঠী রাজনীতির জেরে তাপসবাবু তাঁর এ দিনের কর্মসূচিতে সঞ্জয় দত্ত বা দিলীপ পোদ্দারকে আমন্ত্রণ জানাননি। দিন কয়েক আগে দিলীপবাবুরা যে ইফতার পার্টির আয়োজন করেছিলেন সেখানে আবার আমন্ত্রিত ছিলেন না তাপসবাবুর শিবিরের লোকেরা। রাজ্য নেতৃত্বের বারবার হুঁশিয়ারির পরেও কেন এমন উপদলীয় কোন্দল?

এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি সঞ্জয়বাবু। তিনি বলেন, ‘‘কৈফিয়ত শুধু জেলা নেতৃত্বকে দেব।’’ দিলীপবাবু অবশ্য ফোনে হুমকি কিংবা রক্তদান শিবিরে যেতে নিষেধ করার কথা মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘এ সব বাজে কথা। তবে এটা বলতে পারি যে ওই শিবির তাপসবাবুর ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান।’’ এ দিকে তাপসবাবুর দাবি, তিনি জেলার একাধিক নেতাকে এ দিনের অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, কেউ আসেনি!

কেন জেলায় দলের দ্বন্দ্বে লাগাম টানা যাচ্ছে না? জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রক্তদান ও ইফতার পার্টি ভাল উদ্যোগ। যদি কেউ তাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এবং তেমন অভিযোগ পাই খতিয়ে দেখা হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এমন অনুষ্ঠান ব্লক কমিটির উদ্যোগে, তাপস সাহার নেতৃত্বে হলেই শোভন হত।’’

যে রক্তদান শিবির নিয়ে এত চর্চা সেই শিবির দিনের শেষে সফল বলে দাবি তাপস শিবিরের। তাপসবাবু বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম দু’শো থেকে আড়াইশো লোক হবে। কিন্তু, জেলা নেতাদের একাংশের সৌজন্যে সংখ্যাটা বারোশো ছাড়িয়েছে!’’

Krishnanagar Group clash Trinamool blood donation camp Tapas Saha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy