Advertisement
১০ ডিসেম্বর ২০২৪

মাসুদুরের লড়াইয়ের কথা ফিরছে মুখে মুখে

মাসুদুর রহমানের অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বহরমপুর। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন অনেকেই। মুর্শিদাবাদের সঙ্গে মাসুদুরের সাঁতার-জীবনের ছিল নিবিড় যোগ। ‘মুর্শিদাবাদ জেলা সম্তরণ সংস্থা’-র শংসাপত্র ছাড়া এ রাজ্যের সাঁতারুদের ইংলিশ চ্যানেলে নামার ছাড়পত্র পাওয়া বেশ কঠিন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪১
Share: Save:

মাসুদুর রহমানের অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বহরমপুর। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন অনেকেই।

মুর্শিদাবাদের সঙ্গে মাসুদুরের সাঁতার-জীবনের ছিল নিবিড় যোগ। ‘মুর্শিদাবাদ জেলা সম্তরণ সংস্থা’-র শংসাপত্র ছাড়া এ রাজ্যের সাঁতারুদের ইংলিশ চ্যানেলে নামার ছাড়পত্র পাওয়া বেশ কঠিন। ১৯৯৫ সালে শারীরিক অ-প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে ভাগীরথীতে নেমে দেশের মধ্যে প্রাচীন ও দীর্ঘতম ওই সাঁতার প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে দশম হয়েছিলেন দু’টি পা না থাকা মাসুদুর। জেলায় অনুষ্ঠিত ৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সাঁতার প্রতি়যোগিতা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ৭২ বছরে পড়তে চলেছে।

সেই শংসাপত্রের সুবাদে ইংলিশ চ্যানেল জয়ের লক্ষ্যে সমুদ্রে নামার ছাড়পত্র মিলেছিল তাঁর। ইংলিশ চ‌্যানেল জয় করার পর তিনি আরও এক বার এই প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে বহরমপুরে ‘মুর্শিদাবাদ জেলা সম্তরণ সংস্থা’র উদ্যোগে রাজ্যের সাঁতারুদের কোচিং প্রশিক্ষণ শিবির হয়। সেখানে মাসুদুর প্রশিক্ষণও নেন। প্রতিযোগিতা ছাড়াও তিনি বেশ কয়েকবার ৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই সাঁতার প্রতি়য়োগিতা অনুষ্ঠানের অতিথি হিসাবে বহরমপুরে এসেছিলেন।

সম্তরণ সংস্থা-র সচিব আশিসকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘জঙ্গিপুরের আহিরণ ব্যারাজ ঘাট থেকে বহরমপুর শহরের গোরাবাজার ঘাট পর্যন্ত ৭২তম ৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ সাঁতার প্রতি়যোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে। সংস্থার জঙ্গিপুর শাখার অনুরোধে উদ্বোধক হিসাবে মাসুদুরের থাকার কথা ছিল। তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ারও কথা ছিল। সে সুযোগ তিনি দিলেন না।’’ মৃত্যু সংবাদ পেয়ে গত রবিবার কলকাতায় গিয়ে মাসুদুরের প্রতি শেষশ্রদ্ধা জানিয়েছেন তিনি।

আগামী ৩ মে সংস্থার পক্ষ থেকে বহরমপুরে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ রাজ্যের যাঁরা ইংলিশ চ্যানেল পার হতে চান তাঁদের মাসুদুর পুরীর সমুদ্রে প্রশিক্ষণ দিতেন। আশিসবাবু বলেন, ‘‘জঙ্গিপুরের তপন ঘোষ ইংলিশ চ্যানেল জয় করার জেদ ধরেন। তাঁর প্রতি মাসুদুরের পরামর্শ ছিল শীতের ভোরে দিনে ৮-১২ ঘণ্টা সাঁতার অনুশীলন কর। তারপর এসো। কারণ ইংলিশ চ্যানেলের জল হিমাঙ্কের থেকেও ঠাণ্ডা। তাঁর দৈনিক খাবারের তালিকাও করে দিয়েছিলেন তিনি।’’

হাঁটু থেকে দুটো পা নেই। এমন লোক কি না ভরা বর্ষার উত্তাল ভাগীরথীর ৮১ কিলোমিটার জলপথ পাড়ি দেবেন! বিষ্ময়কর ওই প্রচারের ফলে সেই ‘হি ম্যান’ দেখতে ভাগীরথী দু’ পাড়ে লোকের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

‘মুর্শিদাবাদ জেলা সম্তরণ সংস্থা’র সদস্য অলোক গোস্বামী বলেন, ‘‘নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার আগে সাঁতারুরা নৌকার উপর দাঁড়িয়ে থাকে। বাঁশিতে ফুঁ পড়লেই তাঁরা জলে ঝাঁপ দেন। মাসুদুরের তো পা নেই। ক্রাচ ছাড়া তিনি দাঁড়াতে পারেন না। ফলে অন্য প্রতিযোগীরা দাঁড়িয়ে থাকলেও তিনি নৌকায় বসে ছিলেন। বাঁশি বাজতেই তিনি ঝুপ করে জলে নেমে শুরু করে দিয়েছিলেন অসম যুদ্ধ। কিন্তু তিনি হারেননি। হার মানলেন এ দিন।’’

বয়স অনুসারে এখনই তাঁর জীবন শেষের বাঁশি বাজার কথা ছিন না। তবুও বাঁশি বেজেছে। তিনিও ঝুপ করে কোন সমুদ্রের অতলে তলিয়ে গেলেন! রইল কেবল তাঁর কীর্তি।

অন্য বিষয়গুলি:

Baharampur Homage swim Mashudur Rahman English Channel Alok goswami
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy