Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘মঞ্চ ছাড়ো’, হুঙ্কার সভায় 

দলেরই প্রকাশ্য সভায়  দলেরই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এ ভাবে বিক্ষোভ জঙ্গিপুরে নজিরবিহীন। 

বেপরোয়া কর্মী, সমর্থকেরা। বৃহস্পতিবার রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

বেপরোয়া কর্মী, সমর্থকেরা। বৃহস্পতিবার রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৮
Share: Save:

রানিনগরে সৌমিক হোসেনের পর এ বার জঙ্গিপুরে ‘জাকির হটাও’!

সে দিনের মতোই বৃহস্পতিবার প্রকাশ্য সভায় দলীয় কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন দলের মন্ত্রী জাকির হোসেন।

জঙ্গিপুরে নিজের বিধানসভা এলাকাতেই দলের জেলা সভাপতির উপস্থিতিতেই তৃণমূলের সভামঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠতেই সভার জমায়েত থেকেই উড়ে এল ‘জাকির হটাও!’ দলের মন্ত্রী এ ভাবে বিক্ষোভের মুখে পড়ায় রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়লেন দলের নেতারা। আর সভা চলাকালীন থেকে থেকেই উঠল দাবি, ‘মঞ্চ থেকে নেমে যেতে হবে জাকিরকে।’

ভরা মঞ্চে তখন দলের বহু জেলা নেতা উপস্থিত। গোটা সভা ঘিরে বিশাল সংখ্যায় পুলিশের কড়া নজর। তার মাঝেই দলেরই প্রকাশ্য সভায় দলেরই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এ ভাবে বিক্ষোভ জঙ্গিপুরে নজিরবিহীন।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই মন্ত্রী জাকির হোসেনের সঙ্গে বিরোধ চলছে জঙ্গিপুরের দলীয় নেতাদের। দলের মহকুমা সভাপতি, ব্লক সভাপতি, পুরপ্রধান-সহ বেশির ভাগ নেতাই জঙ্গিপুরে জাকির-বিরোধী বলে পরিচিত। তাঁদের সঙ্গেই পঞ্চায়েতের সমস্ত কর্মকর্তা ও সদস্য। শুভেন্দু অধিকারীর হুঁশিয়ারিতে বিরোধ মেটাতে দু’সপ্তাহ আগে নিজেদের মধ্যে পিকনিক করেন জাকির হোসেন ও তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা। পরে দলের সাত নেতা জঙ্গিপুরের পুরভবনে পারস্পরিক আলোচনাও করেন। তবে তা যে তেমন কাজে আসেনি এ দিনের ওই বিরোধ তা স্পষ্ট করে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রঘুনাথগঞ্জ ম্যাকেঞ্জি স্টেডিয়ামে বিগ্রেডের প্রস্তুতি সভার আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মহকুমা সভাপতি বিকাশ নন্দ ও মন্ত্রী জাকির হোসেনকে। সেই মতো সভা মঞ্চে হাজির ছিলেন সকলেই।

সভায় দলের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী ও সাংসদ দোলা সেন তখনও মঞ্চে এসে পৌঁছননি। জেলা সভাপতি সুব্রত সাহা সবে এসে আসন নিয়েছেন। ঠিক সাড়ে ১২টা নাগাদ সভা শুরু হতে উদ্বোধনী ভাষণ দেওয়ার ডাক পড়ে এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী জাকির হোসেনের। চেয়ার ছেড়ে মন্ত্রী মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াতেই সামনের ভিড় থেকে শতাধিক দলীয় কর্মী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন— “শুনব না জাকিরের কথা, মঞ্চ থেকে নামিয়ে দিতে হবে ওকে।” এমনকি উঠে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন কিছু মহিলা কর্মীও।

ঘটনায় হকচকিয়ে যান জাকিরও। অস্বস্তিতে পড়েন মঞ্চের উপর থাকা দলের নেতারাও। মহকুমা সভাপতি বিকাশ নন্দ, পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম-সহ সমস্ত নেতাই মঞ্চ থেকে চিৎকার করে বিক্ষোভ থামানোর চেষ্টা করেন। বিকাশ বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, “সিপিএম, বিজেপি’র দালালরা এসেছে সভায়। বসে পড়ুন আপনারা। কার পয়সা খেয়ে এ সব করছেন আপনারা, জাকিরদা’কে বক্তব্য রাখতে দিন। ”

উত্তেজিত জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলামও ততক্ষণে বলতে শুরু করেছেন, “আপনারা যারা এ সব দালালি করতে বিক্ষোভ দেখাতে এসেছেন তাঁরা কিন্তু সকলেই চিহ্নিত হয়ে গিয়েছেন। কাউকে ছাড়া হবে না” কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। বরং এই সব হুঁশিয়ারির মধ্যেই বিক্ষোভকারীরা এ বার বসার চেয়ার উঠিয়ে, কেউ ব্যারিকেডের বাঁশের উপর উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকারের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। জাকির অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভের মাঝেই প্রায় ১৩ মিনিট ধরে বক্তৃতা চালিয়ে যেতে থাকেন। বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশকর্মীরাও ছিলেন কার্যত নীরব দর্শক। এ দিনের দলীয় সভায় জাকিরকে ঘিরে এই বিক্ষোভ নিজের চোখেই দেখেন দলের জেলা সভাপতি সুব্রত সাহা। জাকির কোনওরকমে বক্তৃতা শেষ করে চেয়ারে গিয়ে বসতেই উঠে দাঁড়ান সুব্রত। বলেন “সভায় এ সব বিক্ষোভ করবেন না। কোনও অভিযোগ থাকলে দলের নিজস্ব ফোরামে বলবেন।’’

জাকির অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী কংগ্রেস ও সিপিএমের ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। সভা শেষে শুভেন্দু অধিকারীকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “কই আমি তো কোনও বিক্ষোভ দেখিনি, কোনও বিশৃঙ্খলা হয়েছে বলেও আমার জানা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Raghunathgunj Zakir Hossein
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE