সীমান্তের এক কিলোমিটারের মধ্যে গম চাষ করা ঠিক হবে না, প্রচার করছেন কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক ও পঞ্চায়েত প্রধান। শিকারপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
গত বছরের গম চাষের তিক্ত স্মৃতি এখনও দগদগে।
আর সেই কথা মাথায় রেখেই সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় এ বারে গমের পরিবর্তে বিকল্প চাষের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি দফতর। ইতিমধ্যে নদিয়ার শিকারপুর, গান্ধিনার মতো এলাকায় পঞ্চায়েতের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে চাষিদের বোঝানো হচ্ছে। ছড়ানো হচ্ছে লিফলেট।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝলসা রোগের আক্রমণে গত বছর বাংলাদেশে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির গম নষ্ট হয়েছিল। সীমান্ত পেরিয়ে একই রোগ থাবা বসিয়েছিল এ পার বাংলাতেও। বহু চাষি গম ঘরে তুলতে পারেননি। ফলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে এ বার বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে গম চাষ না করার নিদান দিচ্ছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, গমের বিকল্প হিসেবে ওই সব জমিতে তৈলবীজ, ডালশস্য কিংবা সব্জি চাষ করা যেতে পারে।
নদিয়ার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) বুদ্ধদেব ধরের দাবি, “নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমরা মাঠে নেমেছি। সীমান্তের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোকে নিয়ে প্রচারও চলছে জোর কদমে।’’ গম চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি, শেখপাড়া-সহ সীমান্তবর্তী বেশ কিছু এলাকা। কিন্তু সেখানে এখনও কৃষি দফতরের তরফে কোনও প্রচার হয়নি বলেই অভিযোগ।
মুর্শিদাবাদের সহ কৃষি অধিকর্তা (উদ্ভিদ সুরক্ষা) সারওয়ারে জাহান অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরাও বিষয়টি জানতে পেরেই সীমান্তবর্তী ব্লকগুলোকে সচেতন করেছি। খুব শিগ্গির চাষিদের সচেতন করা হবে।’’ তবে দুই জেলার চাষিদের একাংশের অভিযোগ, ইতিমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় গম চাষ শুরু হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া কৃষি দফতর যে বিকল্প চাষের কথা বলছে, সেই চাষেরও সময় পেরিয়ে গিয়েছে।
কৃষি দফতর অবশ্য এমন অভিযোগের কথা মানতে নারাজ। আধিকারিকদের দাবি, গমের বিকল্প হিসেবে তৈলবীজ, ডালশস্য কিংবা সব্জি চাষের সময় এখনও রয়েছে। অনেকেই তাঁদের কথা না শুনেই গম বুনে দিয়েছেন। করিমপুর ১ ব্লকের শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ও কৃষিদফতর শুক্রবার যৌথ ভাবে সীমান্তের গ্রামে প্রচার চালিয়েছে। এ দিন গান্ধিনা গ্রামে গিয়েছিলেন কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক পাভেলকুমার বিশ্বাস ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের কর্তারা। তাঁরা চাষিদের সীমান্ত থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে গম চাষ না করার পরামর্শ দিয়েছেন।
এ দিকে গান্ধিনা গ্রামের কৃষক সুলতান শেখ, জামিরুল শেখেরা জানান, তাঁরা বৃহস্পতিবারেই সীমান্ত থেকে ৩০০ মিটারের মধ্যে জমিতে গম বুনেছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘সপ্তাহখানেক আগেই শুনেছিলাম যে, ও পারের (বাংলাদেশ) বহু চাষিদের এ বার গম বুনতে নিষেধ করেছে ওদের প্রশাসন। কিন্তু আমাদের জন্যও যে এমন বার্তা আসবে, জানতাম না। ক’দিন আগেও জানতে পারলে কিছুতেই এ বার গম চাষ করতাম না।” জামিরুলরা কথা দিয়েছেন, এখনও যাঁরা গম চাষ করেননি তাঁরা তাঁদের সতর্ক করবেন।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ছত্রাক ঘটিত এই রোগ আক্রমণের ফলে গমের শীষ সাদা হয়ে দানা নষ্ট হয়ে যায়। এই রোগের প্রভাব এতটাই মারাত্মক যে, ১৫ দিনের মধ্যে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকেরা রোগ প্রতিরোধের সুযোগ পান না বললেই চলে। নদিয়ার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) বুদ্ধদেব ধর বলছেন, ‘‘সীমান্ত এলাকার এক কিলোমিটারের বাইরে যাঁরা গম চাষ করছেন তাঁরা যেন কোনও ভাবেই বাংলাদেশ থেকে আনা গমের বীজ দিয়ে চাষ না করেন। কেবলমাত্র সরকার অনুমোদিত সার্টিফায়েড বীজ নিয়েই গমের চাষ করা উচিত। বীজের সঙ্গে পরিমাণ মতো থাইরাম অথবা কার্বেনডাজিম ভাল ভাবে মিশিয়ে চাষ করুন। তারপরেও যদি গমে কোনও রোগ পোকার আক্রমণ হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী কৃষি দফতরকে জানান।’’
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুজিত রায় বলছেন, ‘‘জেলা কৃষি দফতর সঠিক পদক্ষেপই করেছে। ঝলসা রোগের জীবাণু বাতাসেও উড়ে আসে। ফলে মাঝে একটা ব্যবধান রাখলে রোগ আক্রমণের সম্ভবনা অনেকটাই কমে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy