প্রতীকী ছবি।
দিন সাতেক আগের কথা। কল্যাণী শহরের মাঝেরচরের বাসিন্দা নবম শ্রেণির শিশির দাস সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা করছিল। আচমকা রাস্তার এক কুকুর পায়ে কামড়ে দেয়।
দিন পাঁচেক আগে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগে ঢুকে পড়ে কুকুরের দল। সেখানে তখন কাজ করছিলেন এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। সটান কুকুরেরা এসে তাঁর প্যান্ট ধরে টানাটানি শুরু করে! ফর্দাফাঁই হয়ে যায় প্যান্ট। আতঙ্কিত ও কর্মী কুকুরের দলকে ঠেকাতে গিয়ে পড়ে যান। তাঁর ডান হাত ভেঙে গিয়েছে।
এ ভাবেই প্রতিদিনই শহরের কেউ না কেউ কুকুরের খপ্পরে পড়ছেন। কুকুরের কামড় খাওয়া শহরের প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ। আতঙ্কিত নাগরিকেরা। বছর দেড়েক আগে শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বলরাম মাঝি উদ্যোগী হয়ে পথ কুকুরদের ধরে নির্বীজকরণের কাজ শুরু করিয়েছিলেন। তা পড়ে ঝিমিয়ে পড়ে। রাস্তার কুকুরের বংশবিস্তার বন্ধের আর কোনও পরিকল্পনা তার পরে নেওয়া হয়নি। ফলে পাড়ায়-পাড়ায় পিল পিল করছে কুকুর। রাত হলে তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। একটু রাতে বাড়ি ফিরতে হয়ে সিঁটিয়ে থাকছেন মানুষ। অভিযোগ, মোটরবাইক নিয়ে গেলে তারা চিৎকার করতে-করতে পিছনে তেড়ে যাচ্ছে। অটো বা টোটোতে চেপে মূল রাস্তায় নেমে গলিপথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ে তাড়া করছে কুকুরের দল।
বি-১০ এর বাসিন্দা সঞ্জনা মণ্ডল যেমন জানাচ্ছেন, টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রায়ই কুকুরের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে। প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। এ এবং বি ব্লকের বাসিন্দারা কুকুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। রাতে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়ে অনেকেই হাতে লাঠি রাখছেন কুকুরের হামলার মোকাবিলা করতে।
এর মধ্যে আবার জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক মিলছে না বলে অভিযোগ। ফলে, কুকুরের কামড় খেয়ে চিকিৎসার জন্য মানুষ গেলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি ওষুধের দোকানেও জলাতঙ্কের টিকার প্রবল আকাল। অনেক সময়েই তাদের ভাঁড়ার শূন্য থাকছে। শহরের বাসিন্দা বিশু দাস বলছেন, ‘‘আমার ছেলেকে কুকুরে কামড়েছিল। জেএনএমে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে থেকে জানানো হয়, প্রতিষেধক নেই। ফলে বাধ্য হয়ে ৫০০ টাকা দিয়ে বাইরের দোকান থেকে ইঞ্জেকশন কিনতে হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটা কিনতে হবে।’’
হাসপাতালের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, বুধবার ওই ইঞ্জেকশন স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে। বহু রোগী ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করতে চাননি। পুরসভার চেয়ারম্যান সুশীল তালুকদার বলেছেন, ‘‘আমি বিষয়টি পুরোপুরি অবগত। পশুপ্রেমীরা এ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেকা গাঁধীর দ্বারস্থ হয়েছেন। ওঁরা চান না রাস্তার কুকুরদের ধরে নির্বীজকরণ করা হোক। তবে আলোচনার মাধ্যমে একটা উপায় বার করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ তত দিন অবশ্য কুকুর-আতঙ্ক চলতেই থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy