Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সত্যজিতের ছায়াই বিপদ করতে পারে

চোরা হিন্দুত্ব হাওয়া ছিল, তা উসকে দেওয়ার জন্য প্রচারও ছিল তুমুল। কিন্তু বহু জায়গাতেই হাওয়া নয়, বরং তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতার বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বাড়তি জমি দিয়েছে বিরোধীদের। কেন এই ক্ষোভ? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।দল সূত্রেই খবর, গোটা ব্লক এ ভাবে বিনা যুদ্ধে জিতে নেওয়ার রাজনীতি সমর্থন করেননি অনেক বর্ষীয়ান নেতাই। কিন্তু কারও কথা কানে তোলেননি সেই সময়কার ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ নেতা তথা কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস।

সত্যজিৎ বিশ্বাস।

সত্যজিৎ বিশ্বাস।

সুস্মিত হালদার
হাঁসখালি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৯ ০০:৫৭
Share: Save:

গত পঞ্চায়েত ভোটে হাঁসখালি ব্লকের বেশির ভাগ আসনে বিরোধীরা কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। সেই না-পারাটাই কি শেষে তৃণমূলের জন্য মস্ত বড় অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে লোকসভা ভোটে?

ভোট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা ঘুরে-ফিরে উঠছে বিভিন্ন মহলে। দল সূত্রেই খবর, গোটা ব্লক এ ভাবে বিনা যুদ্ধে জিতে নেওয়ার রাজনীতি সমর্থন করেননি অনেক বর্ষীয়ান নেতাই। কিন্তু কারও কথা কানে তোলেননি সেই সময়কার ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ নেতা তথা কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। বিরোধীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে পিটিয়ে বের করে দেওয়া, হুমকি দিয়ে মনোনয়ন তুলতে বাধ্য করা, গণনার কেন্দ্রে বিরোধী এজেন্ট ঢুকতে না দেওয়ার মতো নান ঘটনার সাক্ষী হাঁসখালি ব্লকের মানুষ।

তৃণমূলের নেতারা ভাল করেই জানেন, গত বছর ভোট দিতে না পেরে বহু মানুষ ভিতরে-ভিতরে ফুঁসছিলেন। কিন্তু সত্যজিৎ ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের ভয়ে মুখ খুলতে পারছিলেন না। তাঁরা অপেক্ষা করে ছিলেন পরের ভোটের। এর মধ্যে সত্যজিৎ খুন হওয়ায় রাশ আলগা হয়ে গিয়েছে। দলের অনেকেই মনে করছেন, সত্যজিৎ বেঁচে থাকলে যে কায়দায় ভোট হতো, সেই ভাবে এ বার ভোট হয়নি। ফলে সেই সুযোগে যদি ভোটারদের একাংশ ইভিএমে ক্ষোভ উগরে দিয়ে থাকেন, অবাক হওয়ার কিছু নেই।

২০১৫ সালে কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার পরে হাঁসখালি ব্লকে সত্যজিৎ বিশ্বাসের উত্থান। পরে ব্লক সভাপতি দুলাল বিশ্বাস খুন হওয়ায় গোটা ব্লকই একটু-একটু করে তাঁর হাতের মুঠোয় চলে এসেছিল। পুরনো নেতাদের কোণঠাসা করে সংগঠনে পুরোপুরি নিজের কতৃত্ব কায়েম করেন তিনি। ১৯৯৮ সাল থেকে টানা ব্লক সভাপতি থাকা মন্টু ঘোষকে শুধু সরতে হয়নি, কার্যত বসে যেতে বাধ্য হন তিনি ও তার বড় সংখ্যক অনুগামী। পঞ্চায়েত ভোটে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলেও তাঁকে আটকে দেওয়া হয়।

সব মিলিয়ে দলের একটা অংশ ভিতরে-ভিতরে ফুঁসছিলই। নেতাদের একাংশের আশঙ্কা, লোকসভা ভোটে তারা প্রকাশ্যে না হলেও তলায়-তলায় বিজেপির হয়ে ‘ভোট করেছে’। এই পক্ষের লোকজনের যুক্তি, “দলকেও তো আমাদের শক্তিটা বুঝিয়ে দেওয়া দরকার!” তবে দলের অনেকের মতে, এটা আসলে ‘খাওয়ার’ লড়াই। কারণ অন্যদের বসিয়ে দিয়ে লুটেপুটে খেতে শুরু করেছিলেন এক নেতা ও তাঁর লোকজন। বাকিদের দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার ছিল না। তারা ভাগ পাচ্ছিলেন না। ‘অভুক্ত’ এই নেতারা এখন সুযোগ পেয়ে দলকে শিক্ষা দিতে বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন।

তৃণমূলেরই একাংশের অভিযোগ, মাটি মাফিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে শুরু করে সরকারি খাসজমি বা বিতর্কিত মালিকানার জমি বেআইনি ভাবে দখল করা, চাকরি থেকে শুরু করে ইন্দিরা আবাসনের ঘর বা একশো দিনের কাজ প্রকল্পের টাকার ভাগ দেওয়া নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জড়িয়ে গিয়েছে সত্যজিৎ ও তাঁর সঙ্গীদের নাম। এলাকার মানুষ দেখেছেন, কী ভাবে ২০১৫ সালে বিধায়ক হওয়ার পরে রাস্তার পাশে সত্যজিৎদের ছোট্ট টিনের ঝুপড়ি ঘর রাতারাতি তিনতলা প্রাসাদে পরিণত হয়েছে। কী ভাবে চলে এসেছে দামি গাড়ি।

শুধু সত্যজিৎ নন। তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় থাকা এক শ্রেণির তৃণমূল নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ফুলে ফেঁপে ওঠাটাও সাধারণ মানুষের চোখে লেগেছে। এ সব মানতে পারেননি যাঁরা, তাঁদের একটা বড় অংশই পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। কিন্তু এ বার তাঁরা কী করেছেন, সেই ব্যাপারেই আশঙ্কিত জেলা নেতৃত্ব। ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূলের অনেক নেতাই বলছেন, “রানাঘাট কেন্দ্রের প্রার্থী, সত্যজিৎ-জায়া রূপালীর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী সত্যজিতের ছায়া।”

রূপালী অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘এ সবই অপপ্রচার। আমার স্বামী কোনও রকম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বাড়ি-গাড়ি যা কিছু, সব ওঁর রক্ত জল করা পরিশ্রমের ফসল। উনি যে ভাবে মানুষের পাশে ছিলেন, তাতে মানুষ আমাকেই ভোট দিয়েছে। চিন্তা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 TMC Satyajit Biswas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE