Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

চাকার ভিড়ে রাস্তা খুঁজছে পা

পুরসভা চত্বরে সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ধুলিয়ানের পুরপ্রধান সুবল সাহা। নাগরিকদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন বিমান হাজরা। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।পুরসভা চত্বরে সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ধুলিয়ানের পুরপ্রধান সুবল সাহা। নাগরিকদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন বিমান হাজরা। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।

নিত্য দিনের ছবি। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

নিত্য দিনের ছবি। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০১:৪৫
Share: Save:

• শহরের রাস্তাঘাট নিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই। যানজটে জেরবার শহরের বাসিন্দারা। এ নিয়ে বিকল্প ভাবনা কী রয়েছে?

রমেশকুমার জৈন, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড

রাস্তা নির্মাণের জন্য ৫ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচন এসে যাওয়ায় সে কাজ মাঝপথে আটকে গিয়েছে। টেন্ডার হলেও বকেয়া কাজের জন্য অনুমতি দেওয়া যায়নি। নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হলে কাজ ফের শুরু হবে।

• শহরের বয়স ১০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তবুও সব জায়গায় পরিশ্রুত পানীয় জল মেলে না। জল কিনে খেতে হয়। এই সমস্যার সমাধান কী আদৌ হবে?

আসরাফ শেখ, ১ নম্বর ওয়ার্ড

পানীয় জলের সমস্যাও মিটতে চলেছে ধুলিয়ানে। গঙ্গা থেকে তোলা জল সরবরাহ প্রকল্পটি ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করা হয়েছে। ‘জল চার্জ’ করা হয়েছে। ঠিকাদারি সংস্থা দেড় মাস সময় চেয়েছেন শহরের সমস্ত পাইপলাইন পরীক্ষা ও সাফাই করার জন্য। কাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। পুরসভার সঙ্গে নির্মাণকারী সংস্থার ইঞ্জিনিয়রদের যা কথা বার্তা হয়েছে তাতে দু’মাসের মধ্যে তারা এই জল পানীয় হিসেবে ব্যবহারের ছাড়পত্র দেবেন তারা। পুর বাসিন্দারা দু’মাসের মধ্যেই সেই খাবার জল পাবেন।

• শহরের বহু এলাকা কমবেশি সারা বছরই জলে ডুবে থাকে। সেই সব এলাকার বাসিন্দাদের দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে কাটাতে হয়। ডুবে থাকে শহরের একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিও। পাম্প বসিয়ে জল বের করতে হয়। শহরের পরিকল্পিত নিকাশি নালার অভাবের কারণেই এই জলবন্দি অবস্থা। পুরসভা এ নিয়ে কিছু ভাবছে?

মলয় সাহা, ৭ নম্বর ওয়ার্ড

জল বের করার বিষয়টি সত্যিই এক সমস্যা। সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। মাত্র ১১ মাস হল ক্ষমতায় এসেছি। আগামী ৪ বছরেও তার সমাধান করতে পারব কিনা বলতে পারছি না। ধুলিয়ান শহরটা অনেক কচ্ছপের উল্টো পিঠের মতো। চারিদিকটা উঁচু, মাঝখানটা নিচু। কাজেই শহরের জল নিকাশি পরিকল্পনা নিতে গেলে ১০০ কোটি টাকাও কুলোবে না। এর আগেও শহরের নিকাশি নিয়ে একটি প্রকল্প ভেটিং করা হয়েছিল। এ নিয়ে রাজ্যের পুর দফতরের ইঞ্জিনিয়রদের সঙ্গে কয়েকবার দেখা করে কথা বলেছি। তাতে বোঝা গেছে এতবড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার ক্ষমতা রাজ্য সরকারের নেই। তবু তারা বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

• জেলা এবং রাজ্যের বহু পুর শহরকেই প্লাস্টিকমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ধুলিয়ানে প্লাস্টিক দূষণ ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এ ব্যাপারে আগের পুরবোর্ডগুলির কোনও হেলদোল চোখে পড়েনি। ধুলিয়ান শহরকে প্লাস্টিক মুক্ত করার কোনও পরিকল্পনা কী পুরসভার রয়েছে?

জীবন সরকার, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড

এ নিয়ে দিন দশেক আগেই এক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। খুব শীঘ্রই কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ কী ভয়াবহ সমস্যা হয়ে উঠেছে তা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি। শহরে বর্তমানে যে নিকাশি ব্যবস্থা রয়েছে সেটিকেও বানচাল করে দিচ্ছে প্লাস্টিক। নর্দমা পরিস্কার করার পরদিনই প্লাস্টিক জমে আবার তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমরা দিন দশেকের মধ্যেই এ নিয়ে পথে নামব।

• ধুলিয়ান ডাকবাংলো থেকে ধুলিয়ান বাজার পর্যন্ত একটাই প্রধান রাস্তা। কিন্তু সে রাস্তা এত সরু যে রাস্তার পাশে লরি দাঁড়িয়ে মালপত্র ওঠানামানো করলেই রাস্তা যাতায়াত অসম্ভব হয়ে পড়ছে। রাস্তা চওড়া করার ব্যাপারে পুরসভার কোনও ভাবনা চিন্তা রয়েছে?

বিজয় সাম্ফানিয়া, ৫ নম্বর ওয়ার্ড

গত বছর ধুলিয়ান পুরসভায় বর্তমান তৃণমূল বোর্ড গঠনের পর থেকে এই সমস্যা সমাধানে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে। নির্বাচনের আগে তা নিয়ে ঝুট ঝামেলা বাড়বে বলে পুরবোর্ড সে পথে এগোয়নি। গত চার দশক ধরে সিপিএম, কংগ্রেস একাধিক বার বোর্ড গঠন করেছে ধুলিয়ান পুরসভায়। কিন্তু প্রধান রাস্তার দু’পাশে জবরদখল মুক্ত করার ব্যাপারে কোনও ভাবনা চিন্তা করা হয়নি। রাস্তার পরিসর বাড়াতে গেলে দু’পাশের জবরদখল সরাতে হবে। আমরা যখনই এই নিয়ে পথে নামব আমাদের আশঙ্কা বিরোধী দলের নেতারা বিরোধিতা করবে। তবুও চেষ্টা করব সমস্ত মানুষের স্বার্থে সে কাজ করার। তবে বিকল্প একটা রাস্তার কথাও বর্তমান পুরবোর্ড ভেবেছে। চারু সাহার বাড়ি থেকে লালপুর হয়ে কাঁকুড়িয়া পর্যন্ত রাস্তাটিকে চওড়া করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

• শহরের মধ্যে যানবাহনের নো-এন্ট্রি নিয়ে কি নতুন করে কিছু ভাবনা চিন্তা করা যায় না। ধুলিয়ান জেলার মধ্যে বড় বাণিজ্য শহর। সকাল বিকেল নো-এন্ট্রি যখন তুলে নেওয়া হচ্ছে তখন একই সঙ্গে গাড়ি ঢোকা ও বেরনো নিয়ে দীর্ঘক্ষণ যানজটে নাজেহাল হতে হচ্ছে মানুষকে। তাই শহরে যানবাহন ঢোকা ও বেরনোর সময় পরিবর্তন করা হোক। আধঘণ্টা আগেই শহর থেকে গাড়িগুলিকে বের করার সময় বেঁধে দিলে গাড়িগুলি শহর ছেড়ে বেরিয়ে যাবে। খালি রাস্তা দিয়ে পরে সহজেই অন্য গাড়ি ঢুকতে পারবে শহরে। এতে যানজট অনেকটাই কমে যাবে।

ধীরাজ বুদ্ধদেব, ৫ নম্বর ওয়ার্ড

শহরে নো-এন্ট্রির সমস্যাটির কথা শুনলাম। শহরের ব্যবসায়ীদের ডেকে তাদের সঙ্গে একবার বৈঠকে বসব। নো-এন্ট্রির ব্যাপারে কোনটা করলে ঠিক হয় সে সম্পর্কে তাদের কাছ থেকে মতামত নেব। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলব। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেবে পুরসভা।

• স্কুলগুলিতে যাতায়াতের সময়ে শহরের প্রধান রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের যে ব্যবস্থা বর্তমানে চালু রয়েছে তাতেও কিন্তু যানজট এড়ানো যাচ্ছে না। আমার মতো বয়োবৃদ্ধরা রাস্তা দিয়ে চলতে ভয় পাচ্ছি। শহরের রাস্তায় ১০ থেকে ১২ বছর বয়সি ছেলেরা টুকটুক গাড়ি চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে পুর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কোনও নজর দেখছি না। এ বিষয়ে কিছু ভাবছেন।

তেনুলাল ভকত, ৫ নম্বর ওয়ার্ড

শহরে টুকটুক ও ম্যাজিক গাড়ি যা চলছে তার জন্য শহরে যানজট বাড়ছে। এগুলি চলছে লাইসেন্স ছাড়াই পুরসভার বিনা অনুমতিতেই। তাই সেগুলি নিয়ন্ত্রণে পুরসভার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে সেগুলি শহরে চলাচলের জন্য তার প্রতিটি চালককে পুরসভার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। পুরসভা তাদেরই সেই সব গাড়ি চালাতে অনুমতি দেবে যাদের বয়স ১৮ বছরের উপরে। নির্বাচন পর্ব মিটলেই এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে পুরসভা।

• শহরের প্রধান রাস্তা একটাই। তার মধ্যে প্রধান যানজটের উৎস শিবমন্দির সংলগ্ন এলাকা। এর আশপাশে ফুটপাথে হকার বসছে ব্যাপক সংখ্যায়। ওই পথ ধরে একাধিক বালিকা বিদ্যালয়ে যেতে হয় মেয়েদের। ট্রাফিক ব্যবস্থাও তেমন জোরদার নয় বলে নিত্যদিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। যে কোনও মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটনা অসম্ভব নয়। ওই এলাকাকে দখলমুক্ত করে ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করার ব্যাপারে পুরসভা কী কোনও উদ্যোগ নিতে পারে না?

শুভ্র সাহা, ১০ নম্বর ওয়ার্ড

এ ব্যাপারে আমাদের একটু সময় দিতে হবে। শুধুমাত্র ওই একটি জায়গায় জ্যাম হয় তা নয়। যেখান থেকে শহর শুরু হচ্ছে এবং যেখানে শহর শেষ হচ্ছে সর্বত্রই যানজট লেগে রয়েছে। চেষ্টা করছি কী ভাবে এর মোকাবিলা করা যায় তার জন্য কিছু নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গেও বসতে হবে। বাড়াতে হবে ট্রাফিক গার্ডের সংখ্যাও। তার জন্য একটু সময় দিতে হবে।

• শহরে শবদাহ করার একটি মাত্র বৈদ্যুতিক চুল্লি। বছরের বেশির ভাগ সময় তা খারাপ থাকছে। অন্যান্য শহরে তা খারাপ হলেও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সাত দিনের মধ্যেই তা ভাল হয়ে যায়। কিন্তু ধুলিয়ানে তা দীর্ঘদিন ধরে তা অকেজো হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে পুরসভার উদ্যোগ কোথায়?

বীরেন ভাস্কর, ৬ নম্বর ওয়ার্ড

আমার সময়ে বৈদ্যুতিক চুল্লি দু’দুবার সারানো হয়েছে। একবার সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দিয়ে খরচ করেছি। আবার তা অকেজো হয়েছে। তিন মাস ধরে দু’জন ঠিকাদারকে বার বার তাগাদা দিয়েও কিছু করতে পারছি না। আমাকে সময় দিয়েছে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ। তারা জানিয়েছে, চুল্লির কয়েলটি পুড়ে গিয়েছে। সেটি বাজারে নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ সময় দেওয়া হয়েছে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ, সেই কয়েল এনে লাগিয়ে দেওয়ার। চুল্লির সব কাজ সম্পূর্ণ সারানো হয়ে আছে, কয়েলটি লাগিয়ে দিলেই চুল্লিটি সচল করা যাবে।

• ধুলিয়ানে কয়েকটি ওয়ার্ডে এখনও লোটো খেলার রমরমা চলছে। ৬ নম্বর-সহ কয়েকটি ওয়ার্ডে তা বন্ধ হলেও শহরের সর্বত্র তা বন্ধ হচ্ছে না কেন?

গৌরব সরকার, ১০ নম্বর ওয়ার্ড

অনলাইন লটারি বন্ধই ছিল শহরের সর্বত্র। কোথাও কোথাও কিছু বিরোধী রাজনৈতিক নেতার মদতে তা আবার চালু হয়েছে। এ নিয়ে কাউন্সিলরদের সভায় আলোচনাও হয়েছে। কোনও কোনও রাজনৈতিক দল পুরসভার সামনে পথসভা করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। পুরপ্রধান হিসেবে শহরে লোটো বন্ধে উদ্যোগ নিয়ে দু’মাস তা বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু জানতে পারছি কোথাও কোথাও আবার তা চালু হয়েছে। মুখে কিছু রাজনৈতিক দল অনলাইন লটারি বন্ধের দাবি করছেন, কিন্তু যখন সব দল মিলে এর বিরুদ্ধে পথে নেমে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছি তখন বিরোধী কাউন্সিলররা সঙ্গ দিচ্ছেন না। তারা বলছেন এটা পুরপ্রধানের দায়িত্ব। এটা ঠিক নয়। শহর সকলের, তাকে সুস্থ রাখতে সকলের উদ্যোগ দরকার।

• এত বড় বাণিজ্য শহর ধুলিয়ান। পুরপ্রধান এক সময়ের ভাল ফুটবলার ও ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু শহরের কোথাও একটা শিশুপার্ক নেই। একটা স্কুলের খেলার মাঠ আছে যার বেহাল অবস্থা। কিন্তু ব্যাডমিন্টন বা ইন্ডোর খেলাধুলোর কোনও ব্যবস্থা নেই শহরে। এ ব্যাপারে পুরপ্রধানের ভাবনা কি?

সুশান্ত সিংহ, ১০ নম্বর ওয়ার্ড

ধুলিয়ান শহরে দু’টো মাঠ সংস্কারের উদ্যোগে কাজ শুরু করেছে পুরসভা। যত দ্রুত সম্ভব সে মাঠ দু’টি ফুটবল খেলার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হবে। ‘ইলেভেন স্টার’ নামে একটি ক্লাবের পাশের জমিতে দু’টি ইন্ডোর ব্যাডমিন্টন কোর্ট গড়া হচ্ছে। প্রকল্প তৈরি করেছে পুরসভা। এর জন্য রাজ্য সরকার টাকা দিতে রাজিও হয়েছে। আর শিশুদের পার্ক গড়ার জন্য শহরের মধ্যে ভাল পরিবেশে জমি পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত অনুপনগর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনের জমিতে লম্বা একটা জমিতে পার্ক গড়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

• আমরা প্রতিদিন প্রাতঃভ্রমণে যাই। কিন্তু ভ্রমণ শেষে যে সকলে মিলে খোলা মেলা পরিবেশে একটু বসব সে জায়গাও নেই । এমনকী গঙ্গার ধারের পরিবেশটাও স্বাস্থ্যকর নয়। সেখানে প্রস্তাবিত পার্ক গড়ার জমিটা দীর্ঘদিন পড়েই রয়েছে। সেই জমিটি নিয়ে কিছু করুক পুরসভা।

প্রভাত মণ্ডল, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড

গঙ্গার ধারে যে জমিতে পার্ক গড়ার প্রস্তাব ছিল আগে সেখানে পার্ক করা যাবে না। শহরের ওই জমিতে পুরসভা ম্যাজিক গাড়ি ও টুকটুক গাড়ির স্ট্যান্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে ওই সব গাড়ি নিজেরাই রাস্তার উপর স্ট্যান্ড বানিয়ে নিয়ে শহরে আরও দুর্বিসহ যানজট তৈরি করছে। তাই কাঞ্চনতলা স্কুলের পিছনে গঙ্গার ধারের ওই জমিটি ছোট গাড়ির নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড করার জন্য ঠিক করা হয়েছে। আর লালপুরে একটি চর মত জমি রয়েছে, সেখানেই আমরা বেরানোর জন্য গাছপালা লাগিয়ে একটি পার্ক গড়ার চেষ্টা করছি।

• ইলেভেন স্টার ক্লাবের পাশ দিয়ে যে রাস্তা গিয়েছে তার দু’পাশে বাজার বসে। মাংস কাটা হয়। এলাকার যত নোংরা আবর্জনা পড়ছে। ফলে সেখানকার রাস্তাটির পরিবেশ খুব অস্বাস্থ্যকর এবং বেহাল হয়ে উঠেছে। সেই রাস্তার ব্যাপারে পুরসভার কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?

শিবানী সিংহ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড

শিবমন্দির থেকে গরুহাট যাওয়ার যে রাস্তা পুরসভার কাউন্সিলরদের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই রাস্তার পাশের সমস্ত কসাইখানা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে পুরসভার নিজস্ব মার্কেট কমপ্লেক্সে। একই ভাবে মার্কেট কমপ্লেক্সে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ওই এলাকার ফলের দোকানগুলিকেও। সিদ্ধান্ত হয়েছে, কিছু সব্জি, মাছ, চালের দোকানও সরানো হবে সেখানে। মাস তিনেকের মধ্যেই সেগুলি কার্যকরী করা হবে।

• বিকল্প রাস্তা হিসেবে তারবাগান ও লক্ষ্মীনগরের রাস্তাগুলির সংস্কার হলে বহু মানুষ উপকৃত হবে। যাতায়াতেরও একটি যানজট মুক্ত সহজ পথ মিলবে।

আনিকুল শেখ, ৮ নম্বর ওয়ার্ড

ঘোষপাড়া থেকে ধুলিয়ান গঙ্গা রেলস্টেশন পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের যে রাস্তা রয়েছে সেটি সংস্কারে ইতিমধ্যেই টেন্ডার হয়ে রয়েছে। পুরো রাস্তাটাই সিমেন্টর ঢালাই দিয়ে তৈরি করা হবে। কিছুটা কাজ শুরু হয়েছে আগেই। রাস্তা জবরদখল করে যেসব বস্তি ছিল সেগুলিকে পিছনে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাস্তাটিকে বড় করার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে থমকে রয়েছে। সেখানে রাস্তার উপর ৮টি বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। সেগুলিকে সরাতে হবে। এ ব্যাপারে ধুলিয়ানের বিদ্যুৎ দফতরের স্টেশন সুপারিনটেন্ডেন্টের সঙ্গে কথাও হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনী বিধি নিষেধের কারণে এখন সে কাজ করা সম্ভব নয়। নির্বাচন প্রক্রিয়া মিটে গেলেই সবকটি খুঁটিই সরিয়ে নেওয়া হবে। ওই সব বিদ্যুতের খুঁটি সরলেই রাস্তাটি সেখানে চওড়ায় প্রায় ৮ ফুট বেড়ে যাবে। স্টেশন পর্যন্ত অবশিষ্ট বস্তিবাসীদের বলে দেওয়া হয়েছে তারা যেন রাস্তা ছেড়ে সরে যান। দিন পনেরোর মধ্যেই ওই রাস্তার কাজ শুরু করে দিতে পারব বলে আশা করছি।

• মোটর রিকশা, ভ্যান, লছিমন শুধু শহরের পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছে তা নয় শহরের জনবহুল সড়ক পথে তা বিপজ্জনক ভাবে চলাচল করছে। বহু স্কুলে ছাত্র ছাত্রীদের বহন করা হচ্ছে তাতে করে বিপদের ঝুঁকি নিয়ে। শহরে যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে ওই সব বেআইনি গাড়ি।

মোদাশ্বর হোসেন, ২ নম্বর ওয়ার্ড

আমি চূড়ান্ত ভাবে কথা দিতে পারছি না যে ওই সব ভ্যানের চলাচল বন্ধ করে দিতে পারব শহরে। কারণ এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বহু গরিব মানুষের রুজি-রুটি। শহরে আগে ঘোড়ার গাড়ি চলত বহু সংখ্যায়। পরিবেশ দূষণের জন্য তা বহু চেষ্টার পর বন্ধ হয়েছে। অনেক ঘোড়াগাড়ি চালক এখন লছিমন কিনে চালাচ্ছেন। হঠাৎ করে তাদের তা বন্ধ করে দিতে বললে তাতে অন্য সমস্যার সৃষ্টি হবে।

• শহরের মধ্যে বিভিন্ন বাড়ি থেকে রাস্তায় আবর্জনা ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সেই আবর্জনা দিন ভর রাস্তাতেই পড়ে থাকছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে পুরসভা কি কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে না?

ফতেমা বিবি, ৩ নম্বর ওয়ার্ড

পুরসভা ধুলিয়ান শহরের বাইরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ৭ বিঘে জমি দেখেছে। কথাবার্তাও হয়ে গিয়েছে সে জমি কেনার ব্যাপারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে জমি কেনার চেষ্টা হচ্ছে। পরিকল্পনা করা হয়েছে শহরের সমস্ত আবর্জনা নিয়ে গিয়ে সেখানে ফেলা হবে। সেই আবর্জনা থেকে সার ও গ্যাস তৈরি করা হবে। সেটা বিক্রি করে পুরসভার আয় ভাল আয় হবে। এই প্রকল্পের জন্য ২০ কোটি টাকাও পাওয়া যাবে।

বর্ষায় এ ভাবেই জল জমে।—ফাইল চিত্র

• শিবমন্দির মোড় থেকে যে রাস্তা গিয়েছে সেখানে একটা মদের ঠেক চলছে দীর্ঘদিন ধরে। পাশেই গ্যারেজ করে রাখা হচ্ছে সাইকেল থেকে বাইক সব কিছুই। এর পিছনে স্থানীয় দোকানদারদের প্রশ্রয় রয়েছে। মদ্যপদের আড্ডায় ওই পথ দিয়ে চলাচল করতে পারে না কেউ। ইভ-টিজিংয়ের ঘটনা ঘটে। পুরসভা এ ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করলে বাসিন্দারা উপকৃত হবেন।

মাজাহার শেখ, ৪ নম্বর ওয়ার্ড

আমি এ ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। একবার আমি নিজে স্থানীয় থানার ওসিকে সঙ্গে নিয়ে বাস স্ট্যান্ড থেকে বিধান সরণীর রোড পর্যন্ত রাস্তা দখল মুক্ত সচেষ্ট হয়েছিলাম। সেখানে কিছু বাধা এসেছিল বলে সে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর আর সে চেষ্টা হয়নি। তবে আগামী দিনে রাস্তার জবরদখল সরাতে পদক্ষেপ অবশ্যই করব। আর মদের ঠেক যেটা রয়েছে সেটা তুলে ফেলতে যা করার তা করব।

• জেলার প্রতিটি পুরসভায় একটি মঞ্চ ও হল রয়েছে। কিন্তু শতবর্ষ প্রাচীন ধুলিয়ানেকোনও কমিউনিটি হল, মঞ্চ বা অডিটোরিয়াম নেই। শহরে কোনও খোলা জায়গা নেই যেখানে কোনও ক্লাব বা স্কুল কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারবে। হল থাকলে তাতে পুরসভারও আয় বাড়বে। এ ব্যাপারে কোনও পরিকল্পনা আছে?

কল্যাণ গুপ্ত, ৭ নম্বর ওয়ার্ড

এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শহরে একটি নজরুল মঞ্চ বা রবীন্দ্রসদন গড়া হবে। পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছে অর্থ পেতে কোনও সমস্যা হবে না। আমরা খুব তাড়াতাড়ি সেটি রূপায়ণ করব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traffic jam daily problem Dhulian
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE