Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঝোপ বুঝে কোপ পড়ে

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের  মাতৃমা বিভাগ থেকে রিকুইজিশন স্লিপ নিয়ে রঘুনাথগঞ্জের মালঞ্চা গ্রামের সাবিরা বেওয়া তড়িঘড়ি নেমে গিয়েছিলেন একতলায় ব্লাড ব্যাঙ্কে। প্রথম ধাক্কাটা সেখানেই— সাবিরাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ডোনার বা রক্তদাতা নিয়ে না এলে রক্ত মিলবে না।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০০:১২
Share: Save:

মাসতেরা বিবি হাসপাতালে ভর্তি। ওটি’তে নিয়ে যাওয়ার আগে, চশমার কাচ মুখে চিকিৎসক জানিয়ে গেলেন, ‘‘বেশি না এক ইউনিট রক্ত রেডি রাখবেন কিন্তু।’’

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মাতৃমা বিভাগ থেকে রিকুইজিশন স্লিপ নিয়ে রঘুনাথগঞ্জের মালঞ্চা গ্রামের সাবিরা বেওয়া তড়িঘড়ি নেমে গিয়েছিলেন একতলায় ব্লাড ব্যাঙ্কে। প্রথম ধাক্কাটা সেখানেই— সাবিরাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ডোনার বা রক্তদাতা নিয়ে না এলে রক্ত মিলবে না। কি করবেন তাহলে? এলোমেলো অসহায় মুখ নিয়ে হাসপাতালের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। পাশ থেকে একটা চাপা স্বর ভেসে এল, ‘‘লাগবে না কি রক্ত!’’

রক্তের জন্যও যে দালাল ঘোরে গ্রামীণ মহিলার পক্ষে তা জানা সম্ভব ছিল না। মেয়ের মুখটা ভেসে উঠতে তাই শাড়ির খুঁট থেকে হাজার টাকা বের করে দিতেই উধাও হয়ে গিয়েছিল সেই যুবক। চিনে রাখুন, হাসপাতালের রক্ত-দালাল। রক্ত মেলে বটে। তবে মেয়ের ফল আর গাড়ি ভাড়ার জন্য কুড়িয়ে বাড়িয়ে আনা টাকাটা ততক্ষণে চলে গিয়েছে দালালের পকেটে।

এমন ঘটনা আকছার। জেলার সব হাসপাতালেই। কান পাতলেই তাদের কথা ঘুরে ফিরে আসে। সুযোগ বুঝলে নিঃশব্দে খসেও যায় হাজার কয়েক টাকা। সম্প্রতি এই দালাল চক্রের বেয়াদপি রুখতে খানিক নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। আর তার জেরে কখনও বহরমপুর কখনও বা জেলার অন্য হাসপাতালের চত্বর থেকে ধরা পড়েছে দালাল। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার দেবদাস সাহা বলেন, ‘‘দালালচক্র বন্ধ করতে পুলিশ প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে। ইতিমধ্যেই কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে।’’ তাঁর দাবি, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে আলাদাভাবে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। হাসপাতালের কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারের কথাতেও সেই সুর, মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘তিন থেকে চার হাজার টাকার বিনিময়ে এ ভাবে রক্তের কারবার চালাচ্ছিল বেশ কয়েকজন। ইতিমধ্যে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাসপাতালগুলিতে আমরা কড়া নজর রেখেছি।’’ মুর্শিদাবাদে রক্তদানের সাথে যুক্ত একটি সংস্থার সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম বলছেন, ‘‘একে রক্ত সঙ্কটে খাবি খাচ্ছে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি, সঙ্গে দোসর হয়েছে
দালাল চক্র।’’

তদন্ত অবশ্য শুরু হয়েছে, আর কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে সাপও। এ ব্যাপারে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সক্রিয় চক্রটিতে যে ব্লাড ব্যাঙ্কের এক শ্রেণির কর্মীর জড়িত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। পুলিশের এক কর্তা জানান, দালালেরা এক ইউনিট রক্তের জন্য ঝোপ বুঝে চার হাজার টাকার কোপও মেরে থাকে। সেই টাকার একটা অংশ ডোনার পায়। বাকি অংশ দালালচক্রে ভাগ হয়ে যায়। জেলা পুলিশের ওই কর্তা বলছেন, ‘‘চক্রে যে অন্য হাতও রয়েছে আঁচ পাওয়া গিয়েছে তা-ও। দেখুন না খেলা এখনও বাকি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Middleman Banks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE