Advertisement
E-Paper

বিয়ে রুখতে শিক্ষিকার কাছে নাবালিকা পড়ুয়া

‘ম্যাডাম, এখন বিয়ে করব না। লেখাপড়া করতে চাই। বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিতে চাইছেন। কোনও ভাবে ওদের আটকান’—এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেছিল বছর ষোলোর মেয়েটি! এই আবেদন নিয়েই সকলের নজর এড়িয়ে সোমবার রাতে প্রধান শিক্ষিকার বাড়িতে সটান হাজির হওয়ার পরপরই হাতেনাতে ফল মিলেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০০:২৩

‘ম্যাডাম, এখন বিয়ে করব না। লেখাপড়া করতে চাই। বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিতে চাইছেন। কোনও ভাবে ওদের আটকান’—এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেছিল বছর ষোলোর মেয়েটি!

এই আবেদন নিয়েই সকলের নজর এড়িয়ে সোমবার রাতে প্রধান শিক্ষিকার বাড়িতে সটান হাজির হওয়ার পরপরই হাতেনাতে ফল মিলেছে। মেয়েটির ইচ্ছে, শিক্ষিকার হস্তক্ষেপ ও প্রশাসনের সহযোগিতা—সকলের তৎপরতায় বন্ধ হয়েছে আরও একটি নাবালিকা বিয়ে।

নদিয়া জেলার তাহেরপুর থানা এলাকার বাসিন্দা মেয়েটির সঙ্গে কৃষ্ণনগরের এক যুবকের বিয়ে ঠিক হয়। আজ, বৃহস্পতিবার ছিল বিয়ের দিন। বাড়ির মেয়ের বিয়ে বলে কথা, ছুটোছুটির অন্ত ছিল না দিন কয়েক। কিন্তু, লুকিয়ে প্রধান শিক্ষিকাকে বিয়ের বিষয়টি জানানোর পরেই তাল কাটে। নাবালিকা বিয়ের খবরে মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে হাজির হয় পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা। বুধবার সকালে আসেন রানাঘাটের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীকান্ত রায়। তাঁরা সকলেই বোঝান, এই বয়েসে মেয়ের বিয়ে দিলে কী কী সমস্যা হতে পারে। সব বুঝে বিয়ে বন্ধ করতে আর দ্বিমত করেননি পরিবারের লোকেরা।

মেয়েটির কথায়, ‘‘পরিবারের সকলে মিলেই বিয়ের ঠিক করেছিল। পড়াশুনোর মাঝে এই বিয়ে মেনে নিতে পারছিলাম না। স্কুলের পড়া শেষ করে কলেজে যেতে চাই।’’ বিয়ে আপাতত বন্ধ হওয়ায় খুশি সে। তাঁর বাবাও এখন বুঝেছেন নিজের ভুল। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়ে চোখ খুলে দিয়েছে। সকলের পরামর্শে বিয়ে ভেঙে দিয়েছি। ছেলের বাড়িতেও জানিয়ে দিয়েছি।’’

বুধবার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে দেখে গেল, প্যান্ডেল তৈরির কাজ শেষ। অন্য আয়োজনও সারা। মেয়েটির মায়ের কথায়, এখন বুঝতে পারছি একটা বড় ভুল হয়ে যাচ্ছিল। তবে অভাবের জন্যেই যে বিয়ে দেওয়া সেটাও মেনেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘বহু কষ্টে সংসার চলে। তার মধ্যেও ওদের পড়ানো হচ্ছে। ভেবেছিলাম বিয়ে হলে শ্বশুরবা়ড়িতে ভাল থাকতে পারবে।’’ সুমিত্রার ‘লড়াইয়ে’ সম্বিত ফিরেছে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। তাঁদেরই একজন বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম মেয়ের বিয়ে দেব। সেটা যে ভুল হত এখন বুঝছি।’’

বিয়ে বন্ধের আর্জি জানিয়ে মেয়েটি যাঁর কাছে ছুটে গিয়েছিল, সেই প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘মেয়েটা যে ভাবে আমাকে বিয়ে বন্ধ করার কথা বলল তাতে কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে চেয়ে থেকেছি। ২২ বছরের চাকরি জীবনে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।’’ তাঁর অভিজ্ঞতা, দশম-একাদশ শ্রেণিতে পড়তে পড়তে অনেক মেয়েই লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়। তাদের অনেকের বিয়েও হয়ে যায়। তবে তাদের কেউ বিয়ে বন্ধ করার জন্য এ ভাবে বলতে আসেনি। এলাকার মানুষকে সচেতন করতে আলোচনা সভা করার কথা জানিয়েছেন তাহেরপুরের একটি মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী বাবলু বিশ্বাস। নাবালিকা বিয়ের কথা শুনলেই পুলিশ-প্রশাসনের কাছে তা জানানোর আর্জি রেখেছেন রানাঘাটের মহকুমাশাসক রাজর্ষি মিত্র।

Ranaghat teacher student Taherpur Nadia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy