নবরূপে: নতুন সাজে মন্দির। নিজস্ব চিত্র
মন্দির গড়ে দেওয়ার কথা শুনে গ্রামবাসীরা প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি। কারণ, মন্দির গড়ে তোলার জন্য গ্রামের মানুষ বিভিন্ন জায়গায় হন্যে হয়ে ঘুরেছেন। আশ্বাস যে মেলেনি, তাও নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মন্দির গড়ে ওঠেনি। তাই কয়েক মাস আগে জহিরুল ইসলাম ওরফে মার্ডারের কাছ থেকে মন্দির নির্মাণের আশ্বাস পেয়ে চমকে ওঠেন সুতির বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু যেমন বলা, তেমনি কাজ! পাঁচ মাসের মধ্যেই মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ করার পরে এ বছর সেখানেই গ্রামবাসীরা দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন। গ্রামবাসীদের কথায়, মার্ডার-এর হাত ধরে প্রায় দু’দশক পরে পুজো ফিরে পেল গ্রাম। আর তাতেই উৎসবে মেতে ওঠেন বামুহা গ্রামের বাসিন্দারা। আলোর রোশনাইয়ে সেজে ওঠে মন্দির। ঢাক-ঢোল-কাঁসির আওয়াজ এবং উলুধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে গ্রাম।
প্রায় ২৪ বছর আগে মন্দির গড়তে গ্রামে পাঁচ কাঠা জমি পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে কেনেন গ্রামবাসিরা। সেখানে তিন বছর দুর্গাপুজো করেন গ্রামবাসীরা। মন্দির গড়তে না পারায় সেই পুজো পরে বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামে পুজো না থাকায় গ্রামের মহিলারা ছেলেমেয়েদের নিয়ে ষষ্ঠির দিনই চলে যেতেন বাবার বাড়িতে। সেখানেই পুজো কাটিয়ে গ্রামে ফিরে আসতেন। এ দিকে মন্দির গড়ার ব্যাপারে যখন আশা ছেড়ে দিযেছিলেন গ্রামবাসীরা, ঠিক তখনই গত মে মাসে যোগাযোগ হয় পড়শি গ্রাম সাহাজাদপুরের বাসিন্দা মার্ডারের সঙ্গে। পেশায় ঠিকাদার মার্ডার বর্তমানে দুর্গাপুরে থাকেন। গত মে মাসে বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে গ্রামে দেখা করতে এসে জানতে পারেন— মন্দিরের অভাবে পড়শি বামুহা গ্রামে পুজো বন্ধের কথা। তখনই বামুহা গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের মন্দির গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। গ্রামের স্বাধীন রায় বলছেন, ‘‘টাকার অভাবে কোনও মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না জেনে অর্থ সাহায্য করা থেকে গ্রামের মানুষদের জন্য বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্সও কিনে দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও মসজিদ সংস্কার থেকে মসজিদ নির্মাণেও অর্থ সাহায্য করেছেন। কিন্তু তিনি মন্দির নির্মাণ করে দেবেন, গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করতে পারেননি।” কয়েক লক্ষ টাকা টাকা ব্যয়ে গত পাঁচ মাসে সম্পন্ন হয়েছে মন্দির নির্মাণ। ষষ্ঠীর দিন উদ্বোধনও হয়েছে। পুজো কমিটির সহ-সম্পাদক শঙ্কর রায় বলছেন, ‘‘চারপাশে যখন ধর্ম নিয়ে হানাহানি চলছে। তখনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক জন স্বেচ্ছায় মন্দির গড়ে দিচ্ছেন, এক কথায় নজিরবিহীন।’’ এ ব্যাপারে মার্ডার অবশ্য নির্লিপ্ত। বলছেন, “আল্লা আমাকে দিয়েছেন, তাই দান করছি। আমি মন্দির না মসজিদ গড়ছি বড় কথা নয়, গ্রামের মানুষ খুশি হচ্ছেন, এটাই বড় কথা।” তাঁর নাম মার্ডার কেন? জহিরুল বলছেন, “আমার জন্মের দিন এক জন খুন হন। তাই বাবা নাম রেখেছিলেন মার্ডার। এখন সকলে সেই নামেই ডাকে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy