Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ছেলে কার? মঞ্চে এ বার আরও এক মা, ডিএনএ পরীক্ষার প্রস্তুতি

ভাতজাংলার সরিফা বিবির দাবি, এ তাঁরই হারানিধি শামিম। যাঁর ঘরে সেই ছেলে দুধে-ভাতে বাড়ছিল, ‘মা’ বলে সে চেনে যাঁকে, ভীমপুরের সেই বিজলি দাস আবার বলছেন, ‘‘এ আবার কেমন কথা!

অপেক্ষায়: সরিফা বিবি।

অপেক্ষায়: সরিফা বিবি।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ১৪:৩০
Share: Save:

থানায় বসে নাগাড়ে কেঁদে চলেছে বছর তিনেকের শিশুটি।

সে হারিয়ে যাওয়া শামিম শেখ, নাকি ‘দত্তক’ নেওয়া শুভজিৎ দাস?

ভাতজাংলার সরিফা বিবির দাবি, এ তাঁরই হারানিধি শামিম। যাঁর ঘরে সেই ছেলে দুধে-ভাতে বাড়ছিল, ‘মা’ বলে সে চেনে যাঁকে, ভীমপুরের সেই বিজলি দাস আবার বলছেন, ‘‘এ আবার কেমন কথা! ও তো আমার শুভজিৎ গো!’’

এ নিয়ে পুলিশ যখন হিমশিম, সোমবার নদিয়ার চাপড়া থানায় এসে হাজির আরও এক মা। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বামনঘাটায়। ছেলের বার্থ সার্টিফিকেট হাতে সেই ফুলি দাস সটান বললেন, ‘‘ছেলে আমার! যা বলার তা এই সার্টিফিকেটই বলবে।’’

পুলিশ ঘেঁটে ঘ। তদন্ত মোড় ঘুরে অন্য খাতে। তাহলে উপায়?

নদিয়ার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন রীনা মুখোপাধ্যায় বলছেন, “যা পরিস্থিতি ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কোনও ভাবেই বলার উপায় নেই যে, শিশুর জন্মদাত্রী মা কে। তত দিন ওই শিশুকে হোমে রাখা হবে।”

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘রবিবার রাত পর্যন্ত দু’জন মহিলা দাবি করছিলেন, শিশুটি তাঁদের। আমরাও প্রাথমিক ভাবে একটা সূত্র ধরে এগোচ্ছিলাম। কিন্তু এ দিন আরও এক মহিলা বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে এসে সব কেমন গুলিয়ে দিল।’’

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার। ভীমপুরের পূর্ব ভাতজাংলা গ্রামে মুরগি বিক্রি করতে গিয়েছিলেন হাইবার শেখ। সেখানে একটি বাড়ির উঠোনে খেলছিল বছর তিনেকের শিশুটি। তাকে দেখে সন্দেহ হয় চাপড়ার বাঙালঝির বাসিন্দা হাইবারের। তাঁর মনে হয়, এই ছেলেটি তাঁর গ্রামের হারিয়ে যাওয়া শামিম নয় তো?

শনিবার সন্ধ্যায় গ্রামে ফিরে সরিফা বিবিকে সে কথা বলেন হাইবার। রবিবার সরিফা ও তাঁর স্বামী হাজু শেখ যান পেশায় দিনমজুর সঞ্জিত দাসের বাড়ি। সরিফার দাবি, এই তাঁর হারিয়ে যাওয়া শামিম। সঞ্জিত দাস ও তাঁর স্ত্রী বিজলি দাসের দাবি, তাঁরা শিশুটিকে দত্তক নিয়েছেন বামনঘাটার বাসিন্দা ফুলি দাসের কাছ থেকে। এ দিকে সোমবার থানায় এসে ফুলি দাস আবার বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে এসে দাবি করেন, অভাবের তাড়নায় ছেলেকে তুলে দিয়েছিলেন বিজলির হাতে। আইনি ‘দত্তক’ যদি নাও হয়, এ ছেলে তাঁরই।

এ সব শুনতে নারাজ বাঙালঝির সরিফা। তিনি বলছেন, ‘‘মায়ের কখনও ছেলেকে চিনতে ভুল হয়? চোখের নীচে সেই তিল, সেই মুখ, সেই চোখ।’’ আর হোমে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই কেঁদে-কেটে অস্থির ছেলে! বিজলিকে ছেড়ে যাবে না। দু’বছর ধরে তাকেই যে সে মা বলে চেনে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mothers Claim Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE