Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রাবণের সাইকেলে বিড়ি ধরিয়ে সীতা

বড় রাস্তার মোড় থেকে আদুল গায়ে ছেলেটা ছুটে যায় পাড়ার দিকে।—‘বোলানের দল এসেছে গো...’। মুখে মুখে কথাটা ছড়িয়ে পড়ে এক বাড়ি থেকে আর এক বাড়ি। পড়ন্ত বিকেলে ভিড় জমে যায় পাড়ার চণ্ডীমণ্ডপে।

বোলান:বেলডাঙার আণ্ডিরণে। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

বোলান:বেলডাঙার আণ্ডিরণে। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৫০
Share: Save:

বড় রাস্তার মোড় থেকে আদুল গায়ে ছেলেটা ছুটে যায় পাড়ার দিকে।

—‘বোলানের দল এসেছে গো...’

মুখে মুখে কথাটা ছড়িয়ে পড়ে এক বাড়ি থেকে আর এক বাড়ি। পড়ন্ত বিকেলে ভিড় জমে যায় পাড়ার চণ্ডীমণ্ডপে। মহিলারা কেউ ঘরের জানলা খুলে বসেন। কেউ কেউ উঠে পড়েন মণ্ডপ ঘেঁষা কোনও বাড়ির ছাদে। থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন পথচলতি লোকজনও।

হারমোনিয়াম, ঢোল নিয়ে গোল হয়ে বসে পড়েন শিল্পীরা। চৈত্রের শেষে টানটান সেই বিনোদন আজও অটুট। এই ফোর-জির যুগেও। কর্মসূত্রে এখন কলকাতায় থাকেন বিকলনগরের রাজু বিশ্বাস। তাঁর স্মৃতিতে বোলান আজও অমলিন।

রাজু বলছেন, ‘‘তখন আমরা ছোট। বোলানে রাম সীতার পালা হচ্ছে। বনবাস, রাম-রাবণের যুদ্ধ সবই হল। কিন্তু বোলানের শেষে দেখলাম, রাবণের সাইকেলে‌ বসে বিড়ি টানতে টানতে অন্য গ্রামের দিকে যাচ্ছে সীতা। সে দৃশ্য দেখে বড় কষ্ট পেয়েছিলাম।’’

যা শুনে হাসছেন বেলডাঙার নারায়ণ বিশ্বাস। বোলানে তিনি বছরের পর বছর ধরে মহিলা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘সে কথা আর বলবেন না। বার বার তো আর পোশাক পাল্টানো সম্ভব হয় না। দেখা গেল, দ্রৌপদীর পোশাক পরেই গিয়েছি পাশের কোনও দোকানে বিড়ি কিনতে। সঙ্গে টিপ্পনিও জোটে বইকি।’’

আরও পড়ুন:পালকিতে চড়ে মহাদেব আসেন বিয়ে করতে

কান্দির শিক্ষক ও বোলানের গবেষক অপরেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বোলানে কিছু জিনিস এখন পাল্টেছে। তার পরেও বোলানের জনপ্রিয়তা কিন্তু এখন অটুট।’’ নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ, পাবাখালি, কৃষ্ণপুরে চৈত্র সংক্রান্তি মানে শুধুই বোলান। দূর থেকে ভেসে আসে বাংলা ঢোলের গম্ভীর বোল। মুহূর্তের জন্য থমকে যায় গাজনতলার কোলাহল।

ততক্ষণে ভিড়ের নজর মেঠো পথে ধুলো উড়িয়ে আসা জনা দশেকের একটা দলের দিকে। পরনে সাদা ধুতি আর গেরুয়া পাঞ্জাবি। গলায় রঙিন উত্তরীয়। আদুল পায়ে জড়ানো ঘুঙুর। গাজনতলায় উঠেই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন বোলান শিল্পীরা। মাঝখানে আশি ছুঁইছুঁই পুঁটিরাম ঘোষ। তাঁকে ঘিরে নিমাই, তপন, স্বপন, ভীষ্মদেব, প্রাণকৃষ্ণ, অবনী ঘোষেরা। একপাশে ঢোল নিয়ে সুফল বিশ্বাস আর কাঁসর নিয়ে মহাদেব।

মূল গায়েনের সরস্বতী বন্দনা শেষ হতেই ঢোলের বোলে লয়ের মাতন। গর্জে ওঠে গাজনতলা। শুরু হয় বোলান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Poila Boisakh Bolan Theatre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE