Advertisement
E-Paper

হারিয়ে যাওয়া রুখতে শিকলে বাঁধা কাদির

একই ভাবে আবদুল কাদিরের পায়ে শিকলের বেড়ি পরিয়ে রেখেছেন মা মাসেদা বিবি। তিনি বলছেন, “জন্ম থেকেই ভারসাম্যহীন কাদির। দুরন্ত নয় কোনও দিনও। বাড়ির আশপাশে, বড়জোর গ্রামেই ঘুরে বেড়াত আর খিদে পেলেই বাড়িতে এসে খেত। কিন্তু এখন বড় হচ্ছে। 

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৩
শিকলবন্দি কাদির। ধুলিয়ানে। নিজস্ব চিত্র

শিকলবন্দি কাদির। ধুলিয়ানে। নিজস্ব চিত্র

আরমান শেখ চেনে না আব্দুর কাদিরকে। জলঙ্গির সাদিখাঁরদিয়াড় থেকে শমসেরগ়ঞ্জের লোহরপুর গ্রামের দূরত্ব দুজনেই জানে না!

অথচ ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে কোথাও আরমানের দুঃখ মিশে যায় কাদিরের কষ্টের সঙ্গে। পৃথক নাম হলেও আরমান ও কাদির কোথাও মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে!

‘দস্যি’, তাই জলঙ্গির সাদিখাঁরদিয়াড়ের আরমানকে পায়ে শিকল বেঁধে বাড়ির উঠোনে রেখে দিতেন তার দাদু ও দিদিমা। আরমানের বাবা-মা কাজের সন্ধানে বাইরে রয়েছেন। ফলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যেত আরমান। বাড়ি থেকে য়াতে পালিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য তার দাদু-দিদিমা একরত্তি আরমানের পায়ে শিকল বেঁধে রেখে দিতেন। সম্প্রতি ওই ঘটনা জানাজানি হতেই জলঙ্গির বিডিও ওই বাড়িতে পৌঁছে পায়ের বেড়ি খুলে শিকল মুক্ত করে দেন আরমানকে।

একই ভাবে আবদুল কাদিরের পায়ে শিকলের বেড়ি পরিয়ে রেখেছেন মা মাসেদা বিবি। তিনি বলছেন, “জন্ম থেকেই ভারসাম্যহীন কাদির। দুরন্ত নয় কোনও দিনও। বাড়ির আশপাশে, বড়জোর গ্রামেই ঘুরে বেড়াত আর খিদে পেলেই বাড়িতে এসে খেত। কিন্তু এখন বড় হচ্ছে।

বাড়ির পাশেই জাতীয় সড়ক। বাসে উঠে যেখানে সেখানে চলে যায়। চার বার পালিয়ে গিয়েছিল। খুঁজে আনতে হয়েছে।’’ গত বছর প্রায় ১৫ দিন ধরে তার কোনও খোঁজ ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজি করে ছেলের হদিশ পান ওই পরিবার। তার পর থেকেই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার শুরু! মাসেদা বলছেন, “নিজের ছেলেকে বেঁধে রাখতে কষ্টে হয়। কিন্তু ভয় হয়, যদি ফের পালিয়ে যায়।’’

ওই কিশোরের চিকিৎসা করানো প্রসঙ্গে মা বলছেন, “কেউ যদি চিকিৎসা করানোর ব্যাপারে সাহায্য করেন, তাহলে ভাল হয়। কিন্তু চিকিৎসা করানোর মত টাকা পাবো কোথায়!” পড়শি রামিজ শেখ বলছেন, “কে চিকিৎসার ভার নেবে! বাবা, দাদা ভিন রাজ্যে কাজে রয়েছে। মাজেদা বিবি যতক্ষণে বিড়ি বাঁধবেন, ততক্ষণে খেতে পাবে ছেলেমেয়েরা। তাই চিকিৎসা করানোর মত আর্থিক সামর্থ্য ওই পরিবারের নেই।’’

রামিজ জানাচ্ছেন, আগে দিব্যি ঘুরে বেড়াত কাদির আশপাশের গ্রামে। সবাই চিনত। তাই খুঁজে না পেলে বাড়ি বয়ে পৌঁছে দিত। বছর খানেক আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরেই খুঁজে নিয়ে আসার পরে এ ভাবে বেড়ি দিতে হয়েছে পায়ে।”

তবে আশার কথা, আরমানের পায়ে শিকল বেঁধে রাখার খবর প্রশাসনিক কর্তাদের কানে পৌঁছালেও প্রশাসন এখনও জানে না কাদিরের কথা! এখন প্রতি দিন সকাল হলেই কাদিরের পায়ে শিকলের বেড়ি পরিয়ে মা ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিড়ি বাঁধতে। দু’পায়ের গোড়ালির কাছটা শিকলের ঘষা লেগে কোথাও যেন কালচে হয়ে গিয়েছে! দুর থেকেও চোকে পড়ে মায়ের। অজান্তেই চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। বিড়ি বাঁধা শিকেয় ওঠে মায়ের।

Samserganj
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy