তখনও শুরু হয়নি পুলিশের লাঠি-বর্ষণ। ডোমকলে সাফিউল্লা ইসলামের তোলা ছবি।
পড়শি স্কুলের ছেলেমেয়েরা সাইকেল পেয়েছে। সকাল বিকেল সেই নতুন বাহনে তারা চড়কি পাক দিচ্ছে এ পাড়া সে পাড়া। আর জলঙ্গি সীতানগর হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে সাইকেলের কথা বললেই শুনতে হচ্ছে— ‘এখনও সাইকেল আসেনি। এলে তোরাও পাবি।’
কিন্তু কবে আসবে সেই সাইকেল?
দিনের পর দিন তার সদুত্তর না মেলায় বুধবার সকালে স্কুলের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে স্কুল লাগোয়া বহরমপুর-ধনীরামপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ শুরু করে শ’পাঁচেক পড়ুয়া। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল জলঙ্গির সীতানগর ফকিরাবাদ মোড়ে চলে আসে জলঙ্গি থানার পুলিশ। অভিযোগ, রাস্তা ‘পরিষ্কার’ করতে ছাত্রছাত্রীদের উপর বেধড়ক লাঠি চালায় তারা। পুলিশের লাঠির আঘাতে জখম হয় দ্বাদশ শ্রেণির সাত পড়ুয়া। তারা সাদিখাঁরদেয়াড় গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সহপাঠীরা পুলিশের মার খেয়েছে শোনার পরেই আগুনে ঘি পড়ে। উত্তেজিত হয়ে পড়ুয়াদের একাংশ পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। বেগতিক বুঝে গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায় পুলিশ। ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও পড়ুয়ারা শিক্ষকদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম আলি বলছেন, ‘‘সাইকেলের বিষয়টি আমরা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা জানিয়েছে, এই মুহূর্তে তাদের কাছেও সাইকেল মজুত নেই। পড়ুয়াদেরও সে কথা বলেছি। কিন্তু এ দিন তারা সাইকেল না পেয়ে রাস্তা অবরোধ করে। পুলিশের লাঠিতে জখম পড়ুয়াদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা।’’
সামান্য এই ঘটনায় পড়ুয়াদের উপরে পুলিশ লাঠি চালাল কেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জলঙ্গির বিধায়ক সিপিএমের আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুল পড়ুয়াদের রাস্তা থেকে সরাতে আবার লাঠি লাগে নাকি! একটু বুঝিয়ে বললেই তো ওরা উঠে যেত। কী এমন পরিস্থিতি হল যে পুলিশকে লাঠি চালাতে হল। এই ঘটনার প্রতিবাদের ভাষা নেই। পুলিশের এমন ভূমিকার তীব্র নিন্দা করছি।’’ জলঙ্গি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মোহিত দেবনাথ বলছেন, ‘‘পুলিশের আরও সহনশীল হওয়া উচিত ছিল। গোটা বিষয়টি ঠান্ডা মাথায় নিয়ন্ত্রণ করা যেত। এ ভাবে ছাত্রদের উপরে লাঠি চালানো মোটেই ঠিক কাজ হয়নি।’’
হাসপাতালে জখম পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র
তবে পুলিশের দাবি, মাঝেমধ্যেই সাইকেল না পেয়ে পথে নামছে পড়ুয়ারা। ব্লক ও জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে রা কাড়ছে না। আর পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে পুলিশ। তবে এ দিন পড়ুয়াদের উপরে লাঠি চালানোর অভিযোগ মানতে চায়নি পুলিশ। তাদের দাবি, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি যে লাঠি চালানো হবে। আর তাদের গাড়িও অক্ষত রয়েছে। কেউ ভাঙচুর করেনি।
যা শুনে আকাশ থেকে পড়ছেন ওই স্কুলের পড়ুয়ারা। তাদের কথায়, ‘‘পুলিশ এসেই বলল—‘সরে যা’। আমরা না ওঠায় ওদের একজন বলল, ‘তাহলে রাস্তা পরিষ্কার করে দে।’ তারপরেই লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারতে শুরু করল। তারপরে আমাদেরও কয়েকজন রেগে গিয়ে পুলিশের গাড়ির কাচ ভেঙে দিয়েছে।’’ দ্বাদশ শ্রেণির ইসমাইল মণ্ডলের কথায়, ‘‘পাশের ব্লকের সকলেই সেই কবে নতুন সাইকেল পেয়েছে। আর আমরাই পাচ্ছি না। সেই কারণেই এ দিন পথে নেমেছিলাম। আমাদের বললেই তো সরে যেতাম। এ ভাবে মারধর করাটা কি ঠিক হল?’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, সবুজ সাথী প্রকল্পে ডোমকল ও রানিনগর ১ ও ২ ব্লকের সমস্ত স্কুল সাইকেল পেলেও জলঙ্গির কোনও স্কুল সাইকেল পায়নি। ফলে মাঝেমধ্যেই সাইকেলের দাবিতে পথে নামছে পড়ুয়ারা। গত ১৫ দিনে জলঙ্গি এলাকার ৪টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ৫ দিন রাস্তা অবরোধ করেছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘কেবল জলঙ্গি নয়, জেলার ৭টি ব্লকে এখনও সাইকেল দেওয়া হয়নি। নতুন করে সাইকেল এলেই ওরা সাইকেল পাবে।’’ ডোমকলের মহকুমাশাসক তাহিরুজ্জামান বলেন, ‘‘সে কথা আমরাও স্কুলের শিক্ষক ও পড়ুয়াদের জানিয়েছি। তারপরেও কেন এমনটা ঘটছে বুঝতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy