Advertisement
৩১ মার্চ ২০২৩
Nadia

কাঁটাতার বসানো নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ নদিয়ায়, গ্রামবাসীদের ও পারে পাঠানোর অভিযোগ

নদিয়া ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এখনও বেশ কিছু অঞ্চল কাঁটাতারবিহীন। তার মধ্যে রয়েছে মলুয়াপাড়া। তাই, সেখানে কাঁটাতার বসানোর কাজ শুরু করেছে বিএসএফ।

বিএসএফ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধে অগ্নিগর্ভ হল নদিয়ার ভীমপুর থানার মলুয়াপাড়া। নিজস্ব ছবি।

বিএসএফ ও গ্রামবাসীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধে অগ্নিগর্ভ হল নদিয়ার ভীমপুর থানার মলুয়াপাড়া। নিজস্ব ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভীমপুর শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:৫৩
Share: Save:

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতার বসানো কেন্দ্র করে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও গ্রামবাসীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধে অগ্নিগর্ভ হল নদিয়ার ভীমপুর থানার মলুয়াপাড়া। অভিযোগ, বিএসএফের লাঠিচার্জে মলুয়াপাড়ার কমপক্ষে ১৫ জন মহিলা, ৪ শিশু-সহ অন্তত ৩০ গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, আহত গ্রামবাসীদের কাঁটাতারের ও পারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্যও এ পারে আসতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও দাবি গ্রামবাসীদের একাংশের। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে বিএসএফের তরফে। তাদের বক্তব্য, আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

Advertisement

নদিয়া ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এখনও বেশ কিছু অঞ্চল কাঁটাতারবিহীন। তার মধ্যে রয়েছে মলুয়াপাড়া। তাই, সেখানে কাঁটাতার বসানোর কাজ শুরু করেছে বিএসএফ। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিএসএফের বিরুদ্ধে নিয়মভাঙার অভিযোগ তুলে শুরু থেকেই আপত্তি করেন গ্রামবাসীরা। সেই গত ২৪ জানুয়ারি কাঁটাতার বসানোর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামবাসীরা অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি রাজস্ব) ও কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও জানান। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়, নতুন করে কাঁটাতার বসানোর কাজ বন্ধই থাকবে। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও বুধবার দুপুর থেকে আবার কাঁটাতার বসানোর কাজ শুরু করে বিএসএফ। গ্রামবাসীরা বাধা দিতে গেলে বাহিনীর সঙ্গে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। সেই সময়েই বিনা প্ররোচনায় মহিলাদের উপরে লাঠিচার্জ শুরু করে বিএসএফ। একাধিক মহিলাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

গ্রামবাসীদের দাবি, বাহিনীর পুরুষরক্ষীরা মহিলাদের উপর লাঠিচার্জ করেছেন। সেখানে কোনও মহিলারক্ষী ছিলেন না। লাঠির ঘায়ে গুরুতর আঘাত পান বেশ কয়েক জন মহিলা ও শিশু। তাঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কা জনক। এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘ভীমপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শক ছিল।’’ এই ঘটনার জেরে মলুয়াপাড়া-সহ চাপরা সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জখম হওয়া ষাটোর্ধ্ব শাহানারা বিবি বলেন, ‘‘গ্রামকে কাঁটাতারের পেপারে রেখে কাজ করতে হবে। এই অনুরোধই জানাতে গিয়েছিলাম। বিএসএফের লোক ছুটে এসে আমাদের চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে বেধড়ক মারধর করল। ওদের হাত পায়ে ধরলেও থামেনি।’’ জরিনা বিশ্বাসের কথায়, ‘‘সংঘর্ষের সময় বিএসফে কোনও মহিলা জওয়ান ছিলেন না। আমাদের পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে।’’

এই ঘটনা প্রসঙ্গে বিএসএফের ডিআইজি এ.কে আর্য বলেন, ‘‘আলোচনা করে কাজ করা হচ্ছে। কিছু সমস্যা হয়েছে। সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

আন্তর্জাতিক সীমান্তে কাঁটাতার বসানোর ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে প্রকৃত সীমান্ত থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ গজ অর্থাৎ, ৪৫০ ফুট ভিতরে কাঁটাতার বসাতে পারবে বিএসএফ। এমনই নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। অভিযোগ, ওই নির্দেশিকা অমান্য করে বিএসএফ এবং সিপিডব্লিউডি কোথাও ১,০০০ ফুট, কোথাও ১,২০০ ফুট, কোথাও সর্বোচ্চ ১,৪৩০ ফুট ভিতরে কাঁটাতার বসানোর কাজ করছে। ওই কাঁটাতার সরিয়ে সর্বোচ্চ ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতার বসানোর দাবি নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে বিবাদে জড়ান গ্রামবাসীরা। তবে এই নিয়ে বিবাদ নতুন নয়। কাঁটাতার বসানোর প্রক্রিয়ায় নিয়ম ভাঙা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে ২০০২ সালে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। সেই মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি একে মাথুরের বেঞ্চ বিএসএফের হলফনামায় সন্তুষ্ট হয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন।

এর পর ২০০৩ সালে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন গ্রামবাসীরা। ২০০৬ সালে সেই মামলার শুনানিতে তৎকালীন বিচারপতি নাদিয়া পাথারিয়া নির্দেশ দেন, কোনও ভাবেই সীমান্ত থেকে ১৫০ গজের বেশি ভিতরে ঢুকে কাঁটাতার বসানো যাবে না। ধর্মীয় স্থান, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালের ক্ষেত্রে এই নির্দিষ্ট সীমানা প্রয়োজনে কমিয়ে দিতে হবে। এখন গ্রামবাসীদের অভিযোগ, আদালতের সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে মলুয়াপাড়া গ্রামের ভিতর কাঁটাতার বসানো হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.