Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
হাসপাতালে আতঙ্কে চিকিৎসকেরা

রাঙা চোখের সামনে ইস্তফা

রক্ত ঝরেনি, খোলা পিস্তলের ব্যবহারও হয়নি। তবে, আতঙ্কটা ছড়িয়ে গিয়েছিল হাসপাতালের আনাচ কানাচে। নার্স থেকে চিকিৎসক সকলেই জানিয়েছিলেন, রাতের হাসপাতাল অন্য চেহারা নেয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জিয়াগঞ্জ শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৪৬
Share: Save:

হাসপাতালে রোগী ভর্তি করাতে এসে রিভলভার উঁচিয়ে শাসানি ছিল—‘স্যালাইনের সুঁচ ফোটাচ্ছ ফোটাও, তবে এক ফোঁটা রক্ত বেরলে কিন্তু খুলি উড়িয়ে দেব।’

রক্ত ঝরেনি, খোলা পিস্তলের ব্যবহারও হয়নি। তবে, আতঙ্কটা ছড়িয়ে গিয়েছিল হাসপাতালের আনাচ কানাচে। নার্স থেকে চিকিৎসক সকলেই জানিয়েছিলেন, রাতের হাসপাতাল অন্য চেহারা নেয়।

অভিযোগ পেয়েও অবশ্য নড়েচড়ে বসেনি পুলিশ। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছিল, খোলা রিস্তল নিয়ে হই হই করে বেড়ানো সেই যুবকের আর টিঁকি ছোঁয়া যায়নি। আতঙ্ক গ্রাস করা সেই হাসপাতাল থেকে এ বার তাই বদলি চেয়ে আজিমগঞ্জ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসাই বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসক প্রদীপ বিশ্বাস। সোমবার, বদলির তাঁর আবেদন স্বাস্থ্য দফতরে জমা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে।

হাসপাতালে রোগীর বাড়ির লোকের দাপাদাপি অবশ্য তাতে কমেনি। বরং রবিবার রাতে জিয়াগঞ্জ হাসপাতাল দেখেছে প্রায় একইরকমের চিকিৎসক হেনস্থার ঘটনা। বিদ্যুৎপৃষ্ট এক যুবকের মৃতদেহ এনে তাঁর বাড়ির লোকের দাবি ছিল, শুধু স্টেথো নয়, স্যালাইন চালিয়ে ‘ইনজেকশন’ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। জিয়াগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক দেবেন্দ্রনাথ সরকার বোঝাতে চেয়েছিলেন রোগীর দেহে প্রাণ নেই, আর ওই সব চেষ্টা বৃথা। তাতে ফল হয়েছিল উল্টো। বেধড়ক মারধর শুরু হয় তাঁর উপরে। নিরাপত্তা না পেয়ে, সোমবার, তাই সটান চাকরি থেকে ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেবেন্দ্রবাবু।

এ ব্যাপারেও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। তার পরে সোমবার জানিয়েছেন, ‘ঢের হয়েছে এমন নিরাপত্তাহীনতায় চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়।’

বেশ কিছু দিন ধরেই জিয়াগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতাল এবং তার অধীনে থাকা তিনটে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক সঙ্কট চলছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা থেকে সিএমওএইচকে এ ব্যাপারে বার বার জানিয়েও ফল হয়নি। জেলার চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন,, অন্যান্য হাসপাতালেও চেহারাটা একইরকমের। ফলে রোগীদের ভিড় এবং চাহিদা সামাল দিতে না পেরে সর্বত্রই রোগীর বাড়ির লোকজনের চোখ রাঙানির সামনে পড়ছেন তাঁরা। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুজোর সময়ে কর্ণসুবর্ণ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসককে পনেরো দিনের জন্য পাঠানো হয়েছিল আজিমগঞ্জ হাসপাতালে। তবে, সেই অস্থায়ী ব্যবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। সম্প্রতি দু’টি ঘটনা তারই জ্যান্ত প্রমাণ।

জিয়াগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা ৬ জন। কিন্তু রয়েছে বিএমওএইচ-সহ মাত্র দু’জন চিকিৎসক। জিয়াগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌমিক মণ্ডল জানান, বহির্বিভাগে গড়ে ৮০০-১০০০ জন রোগীর ভিড় হয়। ওই ভিড় সামাল দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত জরুরি বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে রোগী দেখার চাপ সামাল দেওয়া এক জন চিকিৎসকের পক্ষে সম্ভব নয়।’’

বাধ্য হয়ে প্রশাসনিক কাজকর্ম ছেড়ে তিনি নিজেই রোগী দেখছেন। সিএমওএইচ নিরুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের পক্ষে বড্ড সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।’’ তিনি জানান, জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২৪ জন, মহকুমা ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ৪০ জন এবং ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও গ্রামীণ হাসপাতাল ১২২টি চিকিৎসক পদ শূন্য পড়ে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE