Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পড়ুয়াদের ভীতির কথা মানছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা

অঙ্ক কী কঠিন!

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, প্রথম থেকে বহু পড়ুয়ার অঙ্কে ভয় ‘ফোবিয়া’র মত কাজ করে। প্রাথমিক স্তর থেকে তাদের অঙ্কের ভিতটা কাঁচা থেকে যায়।

অনুশীলন: আজ অঙ্ক পরীক্ষা। তার আগের দিন, রবিবার ঝালিয়ে নিচ্ছে এক পরীক্ষার্থী। লালবাগে। নিজস্ব

অনুশীলন: আজ অঙ্ক পরীক্ষা। তার আগের দিন, রবিবার ঝালিয়ে নিচ্ছে এক পরীক্ষার্থী। লালবাগে। নিজস্ব

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১৯
Share: Save:

অঙ্ক মানে ভয়। অঙ্ক মানেই পরীক্ষা হলে দরদর করে ঘাম। আজও বহু ছাত্রছাত্রীর মনের কথা, ‘উফ, অঙ্ক কী কঠিন!’ বিশ্ববিখ্যাত গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজনের দেশের পড়ুয়াদের কাছে অঙ্ক এত ভয়ের কেন?

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, প্রথম থেকে বহু পড়ুয়ার অঙ্কে ভয় ‘ফোবিয়া’র মত কাজ করে। প্রাথমিক স্তর থেকে তাদের অঙ্কের ভিতটা কাঁচা থেকে যায়। যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ দূরে থাক, সংখ্যা চিনতে পারে না এমন পড়ুয়াও প্রাথমিকের চৌকাঠ পেরিয়ে হাইস্কুলে আসছে। ফলে উঁচু ক্লাসে গিয়েও অঙ্কে ভয় থেকে যাচ্ছে। আর তারই আঁচ পড়ছে মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও।

আজ, সোমবার মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষা। জেলা শিক্ষা দফতরের কর্তা থেকে অঙ্কের শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের উদ্দেশে বলছেন, ‘‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরীক্ষা হলে যাও। নিশ্চয় সফল হবে।’’

জেলা শিক্ষা দফতরের হিসেব বলছে, গত বছর মুর্শিদাবাদে মাধ্যমিকে পাশের হার ছিল ৮০.৪৭ শতাংশ। প্রায় ২০ শতাংশ পরীক্ষার্থী মাধ্যমিকে অকৃতকার্য হয়েছিল। তাদের একটি বড় অংশ পাশ করতে পারেনি অঙ্ক ও ইংরেজিতে। আবার এমন অনেকে পাশ করেছে কোনও মতে ২৫ পেয়ে। শিক্ষকদের অনেকেই বলছেন, ‘‘এই ২৫ নম্বর পেয়ে পাশ করে যাওয়া মানে এই নয় যে, তারা অঙ্ক শিখছে। স্রেফ মুখস্থ বিদ্যা ও মৌখিক পরীক্ষায় পাশ নম্বর তুলে নিচ্ছে।’’

বহরমপুরের চালতিয়া শ্রীগুরু পাঠশালা হাইস্কুলের অঙ্কের শিক্ষক সঞ্জীব মণ্ডল বলছেন, ‘‘পড়ুয়াদের মধ্যে অঙ্ক শেখার আগ্রহ কমছে। ‘কী ভাবে নম্বর পাওয়া যাবে তা বলে দিন, সাজেশন দিন’ বলে পড়ুয়ারা এগিয়ে আসছে। ফলে তারা স্রেফ নম্বর তোলার জন্য যতটা দরকার তার বেশি কিছু শিখছে না।’’

বেলডাঙার নওপুকুরিয়া জানকীনাথ যদুনাথ উচ্চবিদ্যালয় অঙ্কের শিক্ষক তাপস পাল বলছেন, ‘‘প্রথম থেকে পড়ুয়ারা শুনে আসে, অঙ্ক খুব কঠিন বিষয়। ফলে শুরু থেকেই পড়ুয়াদের মনে ভয়ের সঞ্চার হয়। এর পরে যখন তারা অঙ্কের মুখোমুখি হয় তখন ওই ভীতির জন্য অঙ্কের না বোঝা অংশগুলি না বোঝা থেকে যায়। এ ভাবে পরবর্তীতে না বোঝার জায়গাগুলি আরও কঠিনতর হয়।’’ ওই শিক্ষক জানাচ্ছেন, প্রথমেই পড়ুয়াদের মাথায় ঢোকাতে হবে অঙ্ক কঠিন বিষয় নয়। এ জন্য অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তার ফলে ভীতি অনেকটা কমবে।

লালগোলার লস্করপুর হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মহম্মদ সামিম অঙ্কের শিক্ষক। তিনি বলছেন, ‘‘অঙ্কে ভয় ফোবিয়ার মত কাজ করে। ভুল হলে শূন্য পাবে এই ধারণা থেকে ভাল পড়ুয়ারাও ভয় পায়। তবে গত কয়েক বছর থেকে কিছুটা অঙ্ক কষা হলে তারও নম্বর দেওয়ার রীতি চালু হয়েছে। ফলে ভীতিও কমছে।’’

বহরমপুরের সৈদাবাদ মণীন্দ্রচন্দ্র বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক জসীমউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ‘‘আমাদের বিদ্যালয়ে যারা অকৃতকার্য হয় তাদের একটা বড় অংশ অঙ্কে ফেল করে। আসলে পড়ুয়াদের এখন ধৈর্য কম, অনুশীলনের অভাব রয়েছে। যার ফলে অঙ্ক নিয়ে ভীতি কাজ করে।’’

অভিভাবকদের একাংশ জানাচ্ছেন, তাঁদের অনেকের ছেলেমেয়েই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। ফলে অভিভাবক হিসেবে তাদের বিশেষ কিছু করার নেই। অঙ্ক-ইংরেজিতে তাদের ভিত যাতে শক্ত হয় সেই জন্যই তারা ছেলেমেয়েদের নিয়মিত স্কুলে পাঠান। অভাবের সংসারে কষ্ট করেও তাদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখা হয়। অথচ, এত কিছুর পরেও অঙ্কে ভয় কাটছে না কেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Mathematics Fear
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE