কখনও জানলা গলে উড়ে আসত গ্রিটিংস কার্ড, চিঠি। কখনও রাস্তায় পথ আটকে দাঁড়াত ছেলেটা। বাড়ির মেয়েটাকে এ ভাবে ‘বিরক্ত’ করায় পড়শির ছেলেটার উপর যারপরনাই ক্ষুব্ধ ছিলেন গৃহকর্তা। ডেকে পাঠান কিশোরকে। সাদা কাগজে লিখতে বলেন দু’চার লাইন। ব্যস, হাতের লেখা ওই চিঠির সঙ্গে মিলে যেতেই শুরু হয় মারধর।
ছেলেটির বাড়ির অভিযোগ, এই ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ বছর চোদ্দোর ওই কিশোর। তার পরিবারের তরফে গৃহকর্তা, কলকাতা পুলিশের ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
তাঁদের অভিযোগ, মারধরের পাশাপাশি নবম শ্রেণির ছাত্র ওই কিশোরকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে শান্তিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ ওই কিশোরকে রাত পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, বুধবার সকালে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ওই কিশোরকে মারধর করেছিল অভিযুক্ত পুলিশকর্মী নিত্যানন্দ দেবনাথ। তারা আরও জানতে পেরেছে, ওই পুলিশকর্মীর ভাইঝিকে কেউ এক জন নববর্ষের গ্রিটিংস কার্ড ও চিঠি দিয়েছিল। দশম শ্রেণির ছাত্রীটির পড়ার ঘরের জানালা দিয়ে ফেলা হয়েছিল চিঠিটি। বুধবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হতেই প্রতিবেশী ওই কিশোরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় কলকাতা পুলিশের পাতিপুকুর রিজার্ভ ফোর্সে কর্মরত ওই পুলিশকর্মী নিত্যানন্দবাবু। হাতের লেখা মিলিয়ে দেখার জন্য তাকে দিয়ে একটা কাগজে লেখানো হয়। আর চিঠির সঙ্গে হাতের লেখা মিলে যেতেই তাকে মারধর করা হয়। কিন্তু সেই সময় ঘটনাস্থলে ওই ছাত্রীও থাকায় হয়তো লজ্জায় বাড়ি ফেরেনি ছেলেটি।
কিন্তু ছেলেটির পরিবার পুলিশের সেই সন্দেহ মানতে নারাজ। ওই কিশোরের মা পূর্ণিমাদেবীর দাবি, ‘‘এ সব একেবারেই মিথ্যা অভিযোগ। আমার ছেলেকে গুম করে দিয়ে এখন এ সব রটানো হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মেয়েটা রাস্তার পাশে জানালার ধারে বসে পড়াশুনো করে। কোন ছেলে সেই ফাঁকে চিঠি ফেলে গিয়েছে, আর এখন আমার ছেলের নামে দোষ দিচ্ছে। আমার ছেলেকে যে নিত্যানন্দ দেবনাথ মারধর করেছে, সেটা সকলেই জানে।’’ পূর্ণিমাদেবীর কথায়, ‘‘এর পর থেকেই ছেলেটা নিরুদ্দেশ। ছেলেটাতো আর হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে না। আমরা নিশ্চিত ওরাই গুম করে রেখেছে।’’
এই অভিযোগ মানতে রাজি নন নিত্যানন্দবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটা বেশ কিছু দিন ধরে আমার ভাইঝিকে রাস্তাঘাটে উত্যক্ত করত। আমরা বারণ করেছি। ওর বাবা-মাকেও জানিয়েছি। কোনও ফল হয়নি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বুধবার সকালে দেখি ভাইঝির পড়ার ঘরে একটা প্রেমপত্র পড়ে আছে। আমি তখন ছেলেটাকে ডেকে এনে লিখতে বলি। ওর হাতের লেখার সঙ্গে ওই চিঠির হাতের লেখা মিলে যাওয়ার পরে আমি ছেলেটাকে মারতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মারিনি। ওর নিখোঁজ থাকার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগ নেই।’’
জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। সেই কারণে আমরা তাড়াহুড়ো করতে চাইছি না। আগে ওই কিশোরকে উদ্ধার করতে হবে।” পুলিশের দাবি, বিষয়টা জানার পরে অভিযুক্ত নিত্যানন্দ দেবনাথকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পরিবার ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy