Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ঘর থাকতেও টাকা মিলেছে

বিক্রমপুর পঞ্চায়েতের অধীন বড়গাছি গ্রামে ইমাম শেখ ও মিনারুল শেখদের পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তাঁরা দু’জনেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর করার জন্য দুই কিস্তিতে টাকা পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম কিস্তিতে ৪০ হাজার করে দু’ জনের নামে মোট ৮০ হাজার টাকা আসার পরেই আমি দুর্নীতির কথা জানিয়ে বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। তার পরেও ওঁরা প্রথম কিস্তির টাকা আসার ৯ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তির মোট ৬০ হাজার টাকা (৩০ হাজার করে) পেয়ে যান। কেউ কোনও পদক্ষেপ করে না। কেউ বাধা দেয় না।’’

বাড়ি তো আছেই। নিজস্ব চিত্র

বাড়ি তো আছেই। নিজস্ব চিত্র

সন্দীপ পাল
নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৮ ০৭:৩০
Share: Save:

গ্রামের ভিতর কংক্রিটের ছাদযুক্ত প্রায় ২৩০০ বর্গফুটের পাকা বাড়ি শেখ পরিবারের। তাতে বড়-বড় পাঁচ-ছ’টি ঘর, উঠোন। সেই বাড়িতেই পরিজনদের সঙ্গে বাস করেন ইমাম শেখ ও তাঁর ছেলেরা। তা সত্ত্বেও তিনি এবং তাঁর এক ছেলে মিনারুল শেখ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর পেয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু এই একটি ঘটনা নয়, নাকাশিপাড়া ব্লকে তৃণমূল-পরিচালিত বিক্রমপুর পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় আবাস যোজনায় ঘর-বন্টন নিয়ে দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে প্রথিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খোদ ওই বিদায়ী পঞ্চায়েতেরই সদস্য আব্দুল কালাম।

তিনি যে দলের সমর্থক সেই দলের পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধেই হঠাৎ মুখ খুলছেন কেন এই প্রশ্নে আব্দুল কালাম বলেন, ‘‘আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ মেনে চলি। অন্যায়ের সঙ্গে আপস করব না। তাই এই দুর্নীতি দেখে চুপ করে থাকতে পারিনি। লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।’’ তিনি জানান, বিক্রমপুর পঞ্চায়েতের অধীন বড়গাছি গ্রামে ইমাম শেখ ও মিনারুল শেখদের পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তাঁরা দু’জনেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর করার জন্য দুই কিস্তিতে টাকা পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম কিস্তিতে ৪০ হাজার করে দু’ জনের নামে মোট ৮০ হাজার টাকা আসার পরেই আমি দুর্নীতির কথা জানিয়ে বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। তার পরেও ওঁরা প্রথম কিস্তির টাকা আসার ৯ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তির মোট ৬০ হাজার টাকা (৩০ হাজার করে) পেয়ে যান। কেউ কোনও পদক্ষেপ করে না। কেউ বাধা দেয় না।’’

ক্ষুব্ধ সদস্যের কথায়, ‘‘সরকারি আবাস যোজনার টাকা পাওয়ার প্রকৃত যোগ্যতা কাদের রয়েছে যাচাই করা হচ্ছে না। স্বজনপোষণ চলছে।’’ এর বিরুদ্ধে কয়েক দিন আগে ফের নাকাশিপাড়ার বিডিও সমর দত্তের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ইমাম শেখের পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও উনি কোন আইনে আবার বাড়ি করার টাকা পান? আমাদের অনেকের পাটকাঠির বেড়ার ঘর। অনেকের টালির চালা দেওয়া ঘর। আমাদের আগে ঘর পাওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের নাম তালিকায় তোলা হয়নি।’’ আরেক বাসিন্দা দীন মহম্মদ শেখ বলেন," আমার ও আমার বাবার নাম তালিকায় থাকলেও আমরা ঘরের টাকা পাইনি। অথচ, ওঁদের বড় বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবার দু’দফায় বাড়ির টাকা পেল!’’

দুর্নীতি সম্পর্কে বিক্রমপুর পঞ্চায়েত বিদায়ী প্রধান ধুলো রাজবংশীর জবাব, "এই বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’’

আর নাকাশিপাড়ার বিডিও সমর দত্ত ব্যাখ্যা করেন, আব্দুল কালাম প্রথমে এক বার লিখিত অভিযোগ করার পরে আমরা তদন্ত করেছিলাম, তাতে দেখা গিয়েছিল, ওই বাড়ির একটি ঘরে ইমাম শেখ ও মিনারুল শেখ থাকলেও বাড়ি তাঁদের নয়। বাড়ি আসলে ইমাম শেখের ভাইদের। তাই ইমাম ও মিনারুল বাড়ির টাকা পেতেই পারেন। তবে আব্দুল যখন আবার লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন, আমরাও আবার বিষয়টি তদন্ত করব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

House Money PMAY TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE