কোথাও অকেজো হয়ে রয়েছে ট্রান্সফর্মার। কোথাও চুরি হয়ে গিয়েছে। বারবার চেয়েও সেই জায়গায় নতুন ট্রান্সফর্মার পাওয়া যায়নি। এর ফলে জলসেচ ব্যাহত হওয়ায় সাগরদিঘি ও নবগ্রাম থানা এলাকার ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০০০ বিঘা জমির আমন ধানের চাষ এখন বিপন্ন। বিকল ট্রান্সফর্মারের কারণে বছর খানেক ধরে অন্ধকারে ডুবে রয়েছে বিপিএল তালিকার শ’দুয়েক পরিবার। বহুবার বিদ্যুৎ দফতর ও বিডিও অফিসে তদ্বির করেও সরকারি কর্তাদের ঘুম ভাঙাতে পারছেন না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার (মুর্শিদাবাদ জেলা) দিলীপকুমার সাহা বলেন, “চাহিদা মতো ট্রান্সফর্মারের জোগান নেই। অগ্রাধিকার তালিকা অনুসারে ট্রান্সফর্মার দেওয়া হয়।”
সাগরদিঘি থানার সীমানা লাগোয়া নবগ্রাম থানার সুকি মৌজায় ৩০০ বিঘা জমিচাষের জন্য রয়েছে একটি সরকারি গভীর নলকূপ। ওই নলকূপ থেকে সাগরদিঘির বারালা গ্রাম পঞ্চায়েতের সামসবাদ ও মিলকি এবং নবগ্রাম থানার নবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সুকি মিলিয়ে মোট ৩টি গ্রামের ৩০০ বিঘা জমিতে জলসেচ দেওয়া হয়। জলসেচের জন্য গভীর নলকূপ থেকে জল তুলতে ব্যবহার করা হয় ২৫ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রান্সফর্মার। গত ১৭ জুলাই ট্রান্সফর্মারটি চুরি হয়ে যায়। গভীর নলকূপ কমিটির সম্পাদক দীনবন্ধু মণ্ডল বলেন, “একে বৃষ্টির জল নেই, তার উপরে ১৭ জুলাই থেকে ট্রান্সফর্মার উধাও। ফলে ৩০০ বিঘার মধ্যে ১০০ বিঘা জমি বর্ষার শেষলগ্নেও পতিত পড়ে রয়েছে। বাকি ২০০ বিঘা জমিতে বৃষ্টির জলের উপর নির্ভর করে কোনও মতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। কিন্তু জলের অভাবে সেই জমি ফুটিফাটা।” কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি অথবা ট্রান্সফর্মারের ব্যবস্থা না হলে আমন জমি ফুটিফাটা হয়ে ধান শেষ হয়ে যাবে। এ কথা জানিয়ে সুকি গ্রামের আমন ধান চাষি নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ধান চাষ ছাড়াও ওই গভীর নলকূপের জলের উপর নির্ভরশীল লাগোয়া রিফিউজিপাড়ার বাসিন্দারা। তাঁরাও জলকষ্টে ভুগছেন।” নবগ্রাম থানার শিবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাইণ্ডা মৌজায় জলসেচের জন্য রয়েছে ব্যক্তিগত মালিকানার ২০টি মিনিডিপ টিউবওয়েল। ওই মিনিডিপ টিউবওয়েলগুলি থেকে প্রায় ৮০০ বিঘা জমিতে আমন চাষ হয়। জল তোলার জন্য সেই মিনিডিপ টিউবওয়েলে ছিল ১০০ কেভি ট্রান্সফর্মার। স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ যাদবের অভিযোগ, “মাস দেড়েক আগে রাইণ্ডার ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে গিয়েছে। এ কথা জানিয়ে বিদ্যুৎ দফতরের নবগ্রাম স্টেশন ম্যানেজার ও বিডিও-র কাছে অনেক বার আবেদন করেও ফল হয়নি।”
বিদ্যুৎ দফতরের নবগ্রাম স্টেশন ম্যানেজারের দায়িত্বে রয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সৌমিক সাহা। তিনি বলেন, “বিকল হওয়া ও চুরি যাওয়া ট্রান্সফর্মারের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে নতুন ট্রান্সফর্মার পাওয়া গেলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।” ট্রান্সফর্মার চেয়ে নবগ্রামের বিডিও-র কাছে কৃষকরা আবেদনপত্র জমা দেন মাসখানেক আগে। বিডিও সৌমিক সাহা বলেন, “সমস্যার দ্রুত সমাধান চেয়ে ওই আবেদনপত্র নবগ্রামের স্টেশন ম্যানেজারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওন্যাল ম্যানেজারকে ফোনে এ বিষয়ে জানিয়েছি। ইতিমধ্যে অমুতকুণ্ডু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাগড় মৌজায় ২৫ কেভির বিকল ট্রান্সফর্মার বদলেও দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলিও পাওয়া যাবে বলে আশ্বাস মিলছে।”
বাগড় মৌজায় আবার বদলে দেওয়া ট্রান্সফর্মারের প্রয়োজন মিটছে না বলে কৃষকদের দাবি। বাগড় মৌজায় ২৫ কেভির ট্রান্সফর্মার বিকল হয় গত ৩০ মার্চ। মাঠ লাগোয়া গ্রামের বিপিএলের মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য বসানো হয় ২৫ কেভির আরও একটি ট্রান্সফর্মার। অমুতকুণ্ডু গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান এসারুদ্দিন শেখ বলেন, “মাঠের বিকল হওয়া ট্রান্সফর্মার গত ২৫ জুলাই বদলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ট্রান্সফর্মারে প্রয়োজনীয় জল তুলতে পারছে না। বিকল হয়ে যাওয়া গ্রামের ২৫ কেভির ট্রান্সফর্মার এক বছরেও বদলানো হয়নি। ফলে বিপিএলের গরিব মানুষগুলোর ঘর এক বছর ধরে ডুবে আছে অন্ধকারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy