সাদিখাঁড়দেয়ার গ্রামীণ হাসপাতালে প্রহৃতরা। ছবি: বিশ্বজিৎ রাউত।
গরু পাচারকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষটা হয়েছিল শনিবার রাতে। রবিবার তারই জেরে সীমান্তের গ্রামে তল্লাশিতে গিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীদের মারধর করার অভিযোগ উঠল বিএসএফের বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি সীমান্তের ঘটনা। বিএসএফের মারে জখম হয়ে হাসপাতাল যেতে হয়েছে দুই গ্রামবাসীকে। প্রতিবাদে এ দিন জলঙ্গি বাজারে বহরমপুর-করিমপুর রাজ্যসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে পুলিশ-প্রশাসনের লোকজন এসে আজ, সোমবার ব্লক অফিসে সমস্ত পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করার প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ ওঠে।
শীতের সময়টা কুয়াশার আড়ালে সীমান্তে পাচারের রমরমা বাড়ে। বিএসএফ তাই এই সময়টা বাড়তি সতর্ক থাকে। শনিবার গভীর রাতে জলঙ্গির ফরাজীপাড়া সীমান্তে এক দল পাচারকারী গরু পাচারের চেষ্টা করছিল বলে বিএসএফের অভিযোগ। সতর্ক জওয়ানরা তাদের ধরতে গেলে পাচারকারীরা বোমা-ইট ছোড়ে। পাল্টা হ্যান্ড গ্রেনেড ছোড়ে বিএসএফ। পাচারকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। ছোটখাটো এই সংঘর্ষের ঘটনায় অবশ্য হতাহত হয়নি কেউ।
রবিবার সকালে ফরাজীপাড়া গ্রামে তল্লাশিতে যায় বিএসএফের চরভদ্রা আউটপোস্টের জনা কুড়ি জওয়ান। বিএসএফ কর্তার বক্তব্য, “বোমা, অস্ত্র বা পাচারের গরু পাওয়া যায় কি না, তা দেখতেই গ্রামে তল্লাশিতে গিয়েছিল জওয়ানরা।” কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তল্লাশির নামে অযথা হেনস্থা করছিল জওয়ানরা। বাড়িঘরে চড়াও হয়ে ভাঙচুর করছিল ইচ্ছেমতো। গ্রামবাসীরা এর প্রতিবাদ করলে বিএসএফ জওয়ানদের সঙ্গে বচসা শুরু হয়। বাকবিতণ্ডা চরমে উঠলে পিছু হটে জওয়ানরা। ক্যাম্পে ফেরার পথে মুরাদপুর-জয়কৃষ্ণপুর এলাকায় ফের কিছু গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয় জওয়ানদের। এরপরেই লাঠি হাতে নিরীহ গ্রামবাসীদের উপরে বিএসএফ জওয়ানরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ। তুজাম্মেল হক ও জব্বার মোল্লা নামে দুই গ্রামবাসী জখম হন। তাঁদের সাদিখাঁড়দেয়ার গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জয়কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের তুজাম্মেল হক হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে বলেন, “আমরা চাষ করে খাই। চরের দিকে কিছু জমি আছে। বাকি তো সব পদ্মার গর্ভে। খেতে যাব বলেই দাঁড়িয়ে ছিলাম রাস্তার ধারে। জওয়ানরা কেন দাঁড়িয়ে আছি এই সব বলে অযথা আমাদের উপরে চড়াও হয়।” ওই দুই গ্রামে বেশ কিছু ঘরবাড়িতেও বিএসএফের জওয়ানেরা চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ। বাধা দেওয়া হয়েছে খেতের কাজেও। তুজাম্মেলের ছেলে কালাম শেখ বলেন, “বিএসএফের সঙ্গে ফরাজীপাড়ার লোকেদের গোলমাল হয়েছে আমরা জানি। রাতে হইচইও শুনেছিলাম। তাই বলে ওদের রাগ আমাদের উপরে ঝাড়ার কোনও কারণ হয় না। ওদের সঙ্গে আমাদের কোনও যোগ নেই।” জলঙ্গির ঘোষপাড়া পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান শুকচাঁদ আলি বলেন, “রাতে পাচারকারীদের সঙ্গে গোলমাল হয়েছে বলে পরদিন জওয়ানরা যার উপর ইচ্ছা চড়া হবে, এমনটা মানা যায় না। এ দিন মোড়ের মাথায় দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে ওরা। ক্ষেতে কাজ করতে দেয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই গ্রামবাসীরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।”
বিএসএফের তরফে কেউ কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। তবে, ফরাজীপাড়া গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের আক্রমণের মুখে পড়ে তাদের দুই জওয়ান জখম হয়েছে বলে জলঙ্গি থানায় একটা অভিযোগ করে রেখেছে বিএসএফ। ডোমকলের এসডিপিও অরিজিৎ সিংহ বলেন, “তল্লাশিতে দিয়ে গ্রামবাসীদের বাধার মুখে পড়ে বিএসএফের কয়েকজন জওয়ান জখম হয়েছে বলে শুনেছি। তল্লাশির নামে নিরীহ গ্রামবাসীদেরও মারধরের অভিযোগ এসেছে। দু’টি অভিযোগই তদন্তে করে দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy