Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বৃদ্ধা মাকে তাড়ালেন ছেলে, পুলিশ পাঠাল মেয়ের বাড়ি

মায়ের ভাগে পড়েছিল মাত্র তিন শতক জায়গা। সেটুকুও দখল করতে চাইছিলেন ছেলে। রাজি না হওয়ায় বৃদ্ধা মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ছেলের বিরুদ্ধে। নিরাশ্রয় মা থানায় গিয়ে ছেলের নামে অভিযোগ করলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধাকে পাঠিয়ে দিয়েছে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০০:১১
Share: Save:

মায়ের ভাগে পড়েছিল মাত্র তিন শতক জায়গা। সেটুকুও দখল করতে চাইছিলেন ছেলে। রাজি না হওয়ায় বৃদ্ধা মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ছেলের বিরুদ্ধে। নিরাশ্রয় মা থানায় গিয়ে ছেলের নামে অভিযোগ করলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধাকে পাঠিয়ে দিয়েছে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। পুলিশের এই কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণে ক্ষোভ ছড়িয়েছে মুর্শিদাবাদের সুতির দেবীপুর গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা দিয়েছে, দেবীপুরের বৃদ্ধা রহিমা বেওয়ার সাত মেয়ে ও এক ছেলে। সাত মেয়েরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কয়েকবছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর বাড়ি-সহ ৩১ শতক জমি আট ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী-র মধ্যে সমান ভাবে বাঁটোয়ারা হয়। নিজের ভাগের অংশটুকুতেই থাকছিলেন রহিমা বেওয়া। তাঁর অভিযোগ, “ভাগের ঘর-সহ জমিটি লিখে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু দিন ধরে চাপ দিচ্ছিল ছেলে। লোকলজ্জায় থানা, পুলিশ বা গ্রামের কাউকে প্রথমে জানাতে চাইনি। ছেলের অত্যাচার থেকে বাঁচতে বার কয়েক আমি মেয়েদের বাড়ি পালিয়ে যাই। কিন্তু কতদিন আর মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে থাকব? তাই রবিবার, ৪ মে এক মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরি।” অভিযোগ, ছেলে ও ছেলের বৌ দোর থেকেই তাড়িয়ে দেন বৃদ্ধাকে। গ্রামেরই বাসিন্দা সুতি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কাওসার আলির বাড়িতে দিয়ে তখন আশ্রয় নেন অসহায় বৃদ্ধা। সেদিন তিনি সুতি থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে নিজের ছেলের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগও দায়ের করেন।

ওই বৃদ্ধাকে তত্‌ক্ষণাত্‌ বাড়ি ফেরানো বা নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করেনি পুলিশ। মীমাংসার জন্য দিন দশেক পরে নড়েচড়ে একটা সময় বার করে তারা। অগত্যা বৃদ্ধা মা এক মেয়ের শ্বশুরবাাড়ি গিয়ে ওঠেন। বুধবার সন্ধেয় পুলিশের দেওয়া সময় অনুযায়ী থানায় আসে সব পক্ষ। পঞ্চায়েত প্রতিনিধি কাওসর আলি বলেন, “বৃদ্ধার সঙ্গে আমরা কয়েকজন গ্রামবাসীও গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ বৃদ্ধার প্রতি কোনও সহানুভূতি দেখাচ্ছিল না। উল্টে ওই বৃদ্ধাকে মেয়ের বাড়িতে থাকার জন্য জোর করতে থাকে।”

ছেলে সেলিম কবির একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মী। বুধবার সন্ধেয় তিনি থানায় বসে জানিয়ে দেন, “ওই বাড়িতে মাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।” বৃহস্পতিবার মায়ের খাট-বিছানা বেঁধে থানায় দিয়ে যায় ছেলে। পুলিশ আগ বাড়িয়ে তত্‌পর হয়ে ওই খাট-বিছানা নিয়ে যাওয়ার জন্য মেয়েকে ফোন করে।

মেয়ে তানিজ বেগম বলেন, “বাবার বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না মা। পুলিশ জোর করে আমার বাড়িয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে মাকে। বৃহস্পতিবার আমাকে থানা থেকে ফোন করে জানানো হয়, মায়ের খাট-বিছানা-সহ জিনিসপত্র সুতি থানায় চলে এসেছে। সেগুলো যেন আমি নিয়ে আসি। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে পুলিশ ছেলের পক্ষ নিয়েছে।”

সুতির ওসি সম্রাট ফনির অবশ্য বক্তব্য, “বৈষয়িক ব্যপার বলে আগে কোর্টে যেতে বলেছি। বাড়িতে ফেরালে ছেলের সঙ্গে বৃদ্ধার আবার গোলমাল হত। তখন বৃদ্ধার কিছু হয়ে গেলে কে সামলাত? বৃদ্ধার নিরাপত্তার কারণেই এক মেয়ের সঙ্গে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” কিন্তু নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যই তো আছে পুলিশ। ওই বৃদ্ধাকে তাঁর বাড়িতে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়াই পুলিশের আশু কর্তব্য ছিল। তা না করে মেয়ের বাড়িতে পাঠানোর নামে পুলিশ পরোক্ষ ভাবে বৃদ্ধাকে ভিটেছাড়া করল কেন? উত্তর মেলেনি। ‘ভোটের কাজে ব্যস্ত’ থাকায় পারিবারিক বিবাদে মাথা ঘামাতে চাইছে না জেলা পুলিশও। জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রাজা বলেন, “কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raghunathgunj drive away of mother
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE