এই ভাবেই গুঁড়িয়ে গিয়েছে চায়ের দোকান। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।
শেষ পর্যন্ত রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকা লরিটিকে সরিয়ে দেওয়া হল। স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্ষেপ, এই কাজটা আগে করলে দুর্ঘটনাটি এড়ানো যেত। সোমবার সন্ধ্যায় দাঁড়িয়ে থাকা ওই লরিটিকে পাশ কাটাতে গিয়ে বহরমপুরগামী পণ্যবোঝাই একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি চায়ের দোকানের উপর উল্টে যায়। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর বেলডাঙা বিডিও অফিসের সামনের ওই ঘটনায় মৃত্যু হয় দু’জনের। জখম হন ১৩ জন। ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ কিছু লোকজন বিডিওর আবাসনও ভাঙচুর করে। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে জাতীয় সড়ক। ওই রাতেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১১ জনকে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
তবে ওই ঘটনার পর শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে বেলডাঙার সরুলিয়া গ্রাম। দুর্ঘটনায় মৃৃত খাজারুদ্দিন শেখ ও বাসারুল শেখ সরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন ১০ জনও ওই একই গ্রামের বাসিন্দা। মৃত খাজারুদ্দিনের স্ত্রী সামসুন্নাহার বিবি বলেন, “লরির মাল নামানোর কাজ সেরে প্রতিদিন ওই দোকানেই চা খেত। এদিনও চা খেতে গিয়েই এমন অঘটন ঘটে গেল।” গ্রামের বদরুদ্দিন শেখ বলছেন, “খাজারুদ্দিন আমার কাকার ছেলে। এ ছাড়া যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি তাঁদের মধ্যে ১০ জন আমাদের গ্রামের লোক। ফলে গ্রামের সকলেরই মনখারাপ।” সরুলিয়া থেকে এক কিলোমিটার দূরেই বেলডাঙার ওই চায়ের দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর সরুলিয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বহু মানুষ ভিড় করেন বিডিও অফিসের সামনের ওই চায়ের দোকানে। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার রাত থেকেই ওই লরিটি জাতীয় সড়কের উপরে দাঁড়িয়েছিল। সোমবার সন্ধ্যায় ওই লরিটিকে পাশ কাটাতে গিয়ে বহরমপুরগামী পণ্যবোঝাই আর একটি লরি চায়ের দোকানের উপর উল্টে যায়। তাঁদের মতে, রাস্তায় ওই লরিটিকে আগেই যদি সরিয়ে দেওয়া হত, তাহলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। পুলিশের একাংশও সে কথা কবুল করছে। কিন্তু লরিটিকে কেন সরানো হয়নি? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যান্ত্রিক কিছু গোলমালের জন্যই লরিটিকে সরানো যায়নি। তাহলে এদিন কী করে সরানো হল? সে প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি। রাস্তায় লরি রাখার পাশাপাশি দুর্ঘটনার জন্য বেহাল জাতীয় সড়ককেও দায়ী করছেন অনেকেই। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “অবিলম্বে জাতীয় সড়কের বিষয়েও প্রশাসনের কিছু করার দরকার। নাহলে এরকম দুর্ঘটনা আরও ঘটবে।” কিন্তু বিডিওর আবাসন ভাঙচুর করা হল কেন? বেলডাঙা ১ বিডিও শুভ্রাংশু মণ্ডল বলেন, “হঠাৎ বিকট আওয়াজ পেয়েই মনে হয়েছিল কোনও দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। বাইরে বেরিয়ে ফোন করে বেলডাঙা থানার পুলিশকে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসতে বলি। তিনি বলেন, “বাইরে বেরিয়ে দেখি, লরির তলায় চাপা পড়ে লোকজন কাতরাচ্ছে। তখনই জেসিপি দিয়ে লরি সরানোর নির্দেশ দিই। কিন্তু জেসিপি আসতে তো সময় লাগবে। তার আগেই ক্ষুব্ধ হয়ে লোকজন আমার আবাসনে ভাঙচুর শুরু করে।” ওই অবস্থায় দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে পায়ে চোট লাগে শুভ্রাংশুবাবুরও। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও সোমবার রাতেই চিকিৎসাধীন ওই ১১ জনকে দেখতে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে ছুটে যান শুভ্রাংশুবাবু। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে চায়ের দোকান মালিক মুজিবর রহমান বলেন, “গরম উনুন তখন আমার বাম পায়ের উপরে ভেঙে পড়েছে। কোমরের নিচের অংশ লরির চলায় চাপা পড়ে। কোনও ভাবে ওই অবস্থায় নিজেকে বাঁচাতে পেরেছি। তবে বিডিও সাহেব যে নিজে আমাদের দেখতে আসবেন তা ভাবতেও পারিনি।” তবে বিডিওকে হাসপাতালে দেখে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়ে যান বিডিওর আবাসন ভাঙচুরে জড়িতরা। তাঁদের কয়েক জন এগিয়ে এসে বিডিওকে বলেন, “কিছু মনে করবেন না স্যার, রাগের মাথায় হয়ে গিয়েছে। আমরা লজ্জিত।” মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বিডিও ওই ঘটনায় অবশ্য কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy