ছাত্র আন্দোলনের ‘চাপে’-র মুখে রাজ্যে একের পর এক অধ্যক্ষ-ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদত্যাগের ঘটনা ঘটছে। ঠিক সেই সময়েই পদত্যাগ করলেন শান্তিপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চয়ন ভট্টাচার্য। সোমবার কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি ও রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের হাতে তাঁর পদত্যাগপত্রটি তুলে দেন। তাঁর দাবি, শারীরিক অসুস্থতা ও মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণেই তাঁর এই পদত্যাগ। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষের একাংশের অভিযোগ, ছাত্র সংসদের অনৈতিক দাবি ও চাপের কারণেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, অগস্ট মাসের শুরুতে প্রথম কাউন্সিলিংয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। তারপরও বিভিন্ন বিষয়ে অনার্সে প্রায় ১১৫টি আসন ফাঁকা পড়ে রয়েছে। অভিযোগ, সেই আসনগুলিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয় কলেজ ও ছাত্র সংসদের মধ্যে। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই ফাঁকা আসনগুলিতে মেধাতালিকার বদলে নিজেদের তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিল ছাত্র সংসদ। শুধু তাই নয় তাঁদের দাবি, ১১৫টি আসনে নয় ভর্তি নিতে হবে ২৫০টি আসনে। চয়নবাবু সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। বিষয়টি পার্থবাবুকে জানান। মেধাতালিকা ও কোনও বিষয়ে কত আসন ফাঁকা রয়েছে তার তালিকাও তিনি পার্থবাবুর হাতে তুলে দেন।
কলেজের শিক্ষকদের একাংশ জানিয়েছেন, ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে যে ২৫০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে তা মেধা তালিকা অনুযায়ী নয়। তাঁদের দাবি, ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে সেই তালিকা পরিচালন সমিতির সভাপতির হাতে তুলে দিয়ে সেই মতো ছাত্র ভর্তির আবেদনও করা হয়েছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনোজ সরকার। তিনি বলেন, “আমরা ছাত্র ভর্তি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের উপর কোনও চাপ সৃষ্টি করিনি। ২৫০ জনের কোনও তালিকাও আমরা তৈরি করিনি। উনি অসুস্থার কারণেই পদত্যাগ করেছেন। তাছাড়াও তাঁর মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছিল।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অবসর গ্রহণ করেন কলেজের তত্কালীন অধ্যক্ষ বিমল গোস্বামী। তারপরে পরিচালন সমিতির বৈঠকে ঠিক হয়, ‘সিনিয়রিটি’ অনুযায়ী শিক্ষকরা ন্যুনতম ৬ মাস করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজের দায়িত্ব সামলাবেন। সেই মতো এক সময় দায়িত্ব এসে পড়ে চয়নবাবুর উপর। তিনি প্রায় ১৫ মাস দায়িত্বে ছিলেন। আর মাত্র পাঁচ মাস পরে অবসর নেবেন তিনি। তাই সকলেই ভেবেছিলেন এই ক’মাসও তিনি দায়িত্বে থাকবেন। ফলে আচমকা তাঁর এই সিদ্ধান্তে অবাক কলেজের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। কলেজের এক শিক্ষকের কথায়, “এমনিতেই চয়নবাবু অসুস্থ। তাঁর উপর ছাত্র সংসদের লাগাতার চাপের ফলে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি চাইছেন না যে অনৈতিক ভাবে অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি করতে। সম্ভবত সেই কারণেই তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে পদত্যাগ করলেন।”
ভর্তিসংক্রান্ত বিষয়ে চয়নবাবুও জানান, “১১৫টি আসন ফাঁকা রয়েছে। আমি মেধা তালিকা ও কোনও বিষয়ে কত আসন ফাঁকা পড়ে আছে তার তালিকা সভাপতির হাতে তুলে দিয়েছি। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তিনিই নেবেন।” কিন্তু এসবের মধ্যে দ্বিতীয় কাউন্সিলিং এর ভর্তি কীভাবে হবে, কবে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাকি আসনে কি শেষ পর্যন্ত মেধা তালিকা অনুযায়ী ভর্তি হবে নাকি শেষ পর্যন্ত জয় হবে ছাত্র সংসদের। জবাবে পার্থবাবু বলেন, “মেধা তালিকা অনুযায়ী ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়া হবে। প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। আশা করছি দ্রুত তা শেষ করতে পারব।” তিনিও চয়নবাবুর পদত্যাগের ব্যাপারে মেয়াদ শেষ ও অসুস্থতাকেই কারণ বলে জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy