Advertisement
E-Paper

মুরুটিয়া থানায় তাণ্ডব, ভয়ে লুকোল পুলিশ

থানায় বার বার অভিযোগ জানানো হলেও পুলিশ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে অভিযোগকারীকেই বিপদে পড়তে হয়েছে। নদিয়ার সীমান্তঘেঁষা গ্রাম বালিয়াডাঙায় জমতে থাকা এই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটল বুধবার সকালে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে মুরুটিয়া থানায় চড়াও হল জনতা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৪
মুরুটিয়া থানায় ভাঙচুরের পর ফাইল গোছাতে ব্যস্ত পুলিশ। বুধবার কল্লোল প্রামানিকের তোলা ছবি।

মুরুটিয়া থানায় ভাঙচুরের পর ফাইল গোছাতে ব্যস্ত পুলিশ। বুধবার কল্লোল প্রামানিকের তোলা ছবি।

থানায় বার বার অভিযোগ জানানো হলেও পুলিশ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে অভিযোগকারীকেই বিপদে পড়তে হয়েছে। নদিয়ার সীমান্তঘেঁষা গ্রাম বালিয়াডাঙায় জমতে থাকা এই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটল বুধবার সকালে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে মুরুটিয়া থানায় চড়াও হল জনতা। ভাঙচুর করা হয় থানার সিসিটিভি, সাইনবোর্ড, চেয়ার-টেবিল ও পুলিশের গাড়ি। আগুন লাগানো হয় জেনারেটর রাখার ঘরে। তুলকালাম যখন চলছে, তখন থানার ঘরে খিল তুলে লুকিয়ে পড়েন ওসি-সহ কয়েকজন পুলিশ।

ঘণ্টাখানেকের এই তাণ্ডবের পরে এ দিন সন্ধ্যায় দীর্ঘদিন ওই এলাকায় দাপানো দুষ্কৃতী-দলের দুই চাঁইজহুর শেখ ও বাবু শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। থানায় তাণ্ডব চালানো ছাড়াও এ দিন বালিয়াডাঙা বাজারে সিআই (করিমপুর) গৌতম ভট্টাচার্য-সহ পাঁচ জন পুলিশকর্মীকে মারধর এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পুলিশ ওই দু’টি মামলা রুজু করেছে অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে। যে সূত্র ধরে এলাকার সব রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা প্রায় একই সুরে বলেছেন, “থানায় ভাঙচুর, পুলিশকর্মীদের মারধরের পরেও পুলিশের এ দিনের কার্যকলাপ প্রমাণ করে দিচ্ছে, গ্রামবাসীদের অভিযোগ অমূলক নয়। এ দিন যা হয়েছে, পুলিশ তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না।”

পরিস্থিতির জন্য মুরুটিয়া থানার ওসি বিমান মৃধার দিকে আঙুল তুলেছেন এলাকাবাসীর একটা বড় অংশ। তাঁদের অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ রয়েছে ওই অফিসারের। বিমানবাবু এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। তবে জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “এই ঘটনার পিছনে যদি পুলিশের কারও ভূমিকা রয়েছে বলে প্রমাণ মেলে, তা হলে সেই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, দুষ্কৃৃতীদের উৎপাতের সূত্রপাত বছর দেড়েক আগে। মুরুটিয়া বাজারেই জমি রয়েছে বালিয়াডাঙার বাসিন্দা অরবিন্দ পালের। সেই জমির দখল নেওয়ার চেষ্টা করে জনা তিরিশ দুষ্কৃতীর ওই দল। বাধা দিতে গেলে তারা অরবিন্দবাবুর দু’হাত ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ। সেই সময়েও অভিযোগ দায়ের হয়েছিল মুরুটিয়া থানায়। তাতে নামও ছিল জহুর শেখ, বাবু শেখদের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।

তার পর থেকে ধাপে ধাপে বেড়েছে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য। স্থানীয় সূত্রের খবর, দলটির অনেকেই বালিয়াডাঙা লাগোয়া মাধপুর ও করিমপুরের গোপালেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। সম্প্রতি তাদের সঙ্গে বহিরাগত কয়েকজনকেও দেখা যাচ্ছিল। দোকানে খাবার বা জিনিস কিনে টাকা না দেওয়া, তোলা আদায়ের মতো কাণ্ড তারা হামেশাই করে। গ্রামবাসীর অভিজ্ঞতা, “ওদের কিছু বলার উপায় ছিল না। প্রতিবাদ করলে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে খুনের হুমকি দিত। বলত, স্কুল থেকে ছেলেমেয়েদের তুলে নিয়ে যাবে।” তাঁদের দাবি, গত কয়েক মাসে ওই দুষ্কৃতীদের নাম করে অন্তত পনেরো বার মুরুটিয়া থানায় মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা ধরা পড়েনি।

এরই মধ্যে রবিবার আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অরবিন্দবাবুর আড়াই বিঘা জমির দখল নেয় ওই দুষ্কৃতীরা। সোমবার আট দুষ্কৃতীর নাম করে মুরুটিয়া থানায় অভিযোগ জানান অরবিন্দবাবু। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বালিয়াডাঙার বাসিন্দারা ফের পুলিশের কাছে ওই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান।

murutia baliadanga vandalism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy