Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শৌচাগার ব্যবহারে নজির গড়ল শাকদহ

বিরল এক সাফল্য। তার পুরস্কারও মিলল জবর। কৃষ্ণনগর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে সীমান্তঘেঁষা গ্রাম শাকদহ। তার গরিব-গুর্বো বাসিন্দারাই এখন গোটা দেশের কাছে ‘মডেল।’ কারণ, তাঁদের ১০০ শতাংশের বাড়িতে শৌচাগার আছে তা নয়, ১০০ শতাংশ পরিবারই ব্যবহার করছেন শৌচাগার। যে দেশে প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করেন, সেখানে এই কৃতিত্ব অসামান্য বইকী। তার স্বীকৃতি দিতেই মঙ্গলবার ইউনিসেফের প্রতিনিধিরা ৮৩ বছরের বৃদ্ধা রেণুকা বিশ্বাসের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিলেন। হাততালিতে ফেটে পড়ল গোটা গ্রাম।

শাকদহের আদিবাসীপাড়ায় বাসিন্দাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে ইউনিসেফের প্রতিনিধি দল। —নিজস্ব চিত্র

শাকদহের আদিবাসীপাড়ায় বাসিন্দাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে ইউনিসেফের প্রতিনিধি দল। —নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৩৩
Share: Save:

বিরল এক সাফল্য। তার পুরস্কারও মিলল জবর।

কৃষ্ণনগর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে সীমান্তঘেঁষা গ্রাম শাকদহ। তার গরিব-গুর্বো বাসিন্দারাই এখন গোটা দেশের কাছে ‘মডেল।’ কারণ, তাঁদের ১০০ শতাংশের বাড়িতে শৌচাগার আছে তা নয়, ১০০ শতাংশ পরিবারই ব্যবহার করছেন শৌচাগার। যে দেশে প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করেন, সেখানে এই কৃতিত্ব অসামান্য বইকী। তার স্বীকৃতি দিতেই মঙ্গলবার ইউনিসেফের প্রতিনিধিরা ৮৩ বছরের বৃদ্ধা রেণুকা বিশ্বাসের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিলেন। হাততালিতে ফেটে পড়ল গোটা গ্রাম।

আর হাতেহাতে মিলল পুরস্কার। জেলাশাসক পি বি সালিম ঘোষণা করলেন, উপহার হিসেবে গ্রামের ঢোকার ইঁট-সুরকির তৈরি গর্ত-ভরা রাস্তাটি পাকা করে দেওয়া হবে। ফের উচ্ছ্বাসে উদ্বেল হল গ্রাম।

নদিয়া জেলা গত বছর ‘সবার শৌচাগার’ প্রকল্প চালু করে বছর খানেকের মধ্যে ২ লক্ষ ১৫ হাজার পরিবারে শৌচাগার তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে থাকে, নির্মাণ হলেও, শৌচাগার ব্যবহার হচ্ছে কি? বাস্তব অবস্থা খতিয়ে দেখতে ইউনিসেফের প্রতিনিধি দল নদিয়ায় যায়। জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা চলে যান শাকদহ আদিবাসীপাড়া। জানতে চান, সকলে শৌচাগার ব্যবহার করছেন কি? আলাদা করে কথা বলেন শিশুদের সঙ্গেও। শেষ অবধি সন্তুষ্ট হন ইউনিসেফের প্রতিনিধি এসএন দাভে। তিনি বলেন, ‘‘মানুযে যে শৌচাগার ব্যবহার করছেন, তা আসল সাফল্য। অন্য রাজ্যের জেলাশাসকদের বলব নদিয়ায় এসে প্রকল্পটি দেখে যেতে।’’

এই গ্রামে প্রায় ৩৫০ পরিবারের বাস, তার মধ্যে আদিবাসী প্রায় ১৫০। এত দিন মাঠে যেতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। কী ভাবে এঁরাই শৌচাগারে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেন?

এটা সহজে হয়নি, স্বীকার করে নিয়েছেন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলে। গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সোমাশ্রী সাহা বলেন, “প্রথম দিকে কথাই শুনতে চাইত না কেউ। বারবার গিয়ে মায়েদের সঙ্গে মিটিং করেছি।” প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গৌতর সরকার বলেন, তাঁরা স্কুলপড়ুয়াদের লাগাতার বুঝিয়েছেন। ফলে, বাড়িতে গিয়ে তারাও শৌচাগার দাবি করতে থাকে। গ্রামবাসীরা একশো দিনের কাজ করতে গেলে, সেখানেও শৌচাগার ব্যবহারের সুফল বোঝান পঞ্চায়েত কর্মীরা। শেষমেশ মাসিক ছয় শতাংশ হারে এক হাজার টাকা ঋণ করে শৌচাগার বানিয়েছেন বালিকা সর্দার। দিনমজুর পরিবারে দুই সন্তানের খরচ সামলে সংসার চালানোই দায়। সেখানে ঋণ করে শৌচাগার কেন? বালিকাদেবী বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ করতে গেলে সকলে বলল, যে মাঠে পায়খানা করলে নাকি বাচ্চাদের অসুখ করে। তা ছাড়া মাঠে যেতে লজ্জা করত। বাড়িতে শৌচাগার ছিল না বলে মাঠে যেতাম।”

অভ্যেস যে সহজে হয়নি, মানছেন মধুসূদন সর্দার, সঞ্জয় সর্দাররা। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রথম প্রথম ঘেরা জায়গায় অস্বস্তি হত। এখন কিন্তু অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।’’ সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘আমার বাড়িতে দুটো শিশু আছে। ওদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই আর মাঠে যাই না।’’ গ্রামে যারা এখনও শৌচাগার বানিয়ে নিতে পারেননি, তাঁরা পরিবারের অন্য সদস্যের বাড়ির শৌচাগার ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।

দেখেশুনে জেলাশাসক বললেন, “এরপর যখন ওঁরা রাস্তাটা পাকা করে দেওয়ার কথা বললেন, না বলি কী করে? জেলা পরিষদের মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব পাকা হয়ে যাবে আটশো মিটার রাস্তাটা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE