Advertisement
E-Paper

সঙ্গে আছে বন্দুক, বন্ধুদের টুকতে অভয় দিল ছাত্র

টুকতে গিয়ে ধরা পড়লে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই পরীক্ষার হলে ঢুকেই বন্ধুদের অভয় দিয়েছিল সে। জানিয়েছিল, তার কাছে বন্দুক আছে। কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা টুকলি ধরলেই ভয় দেখাবে। সত্যি সত্যিই এক সহপাঠী ধরা পড়ায় এগিয়ে এসে শিক্ষিকাকে সে বলেছিল, “বন্ধুকে ছেড়ে দিন। আমার কাছে বন্দুক আছে।” নদিয়ার কালীগঞ্জে বল্লভপাড়া জগন্নাথ আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষা চলাকালীন সোমবার এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৪
স্কুলের সামনে বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

স্কুলের সামনে বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

টুকতে গিয়ে ধরা পড়লে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই পরীক্ষার হলে ঢুকেই বন্ধুদের অভয় দিয়েছিল সে। জানিয়েছিল, তার কাছে বন্দুক আছে। কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা টুকলি ধরলেই ভয় দেখাবে।

সত্যি সত্যিই এক সহপাঠী ধরা পড়ায় এগিয়ে এসে শিক্ষিকাকে সে বলেছিল, “বন্ধুকে ছেড়ে দিন। আমার কাছে বন্দুক আছে।”

নদিয়ার কালীগঞ্জে বল্লভপাড়া জগন্নাথ আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষা চলাকালীন সোমবার এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রের ব্যাগ তল্লাশি করে একটি পাখি মারার বন্দুক মিলেছে। ছাত্রটি ক্ষমা চেয়ে নেওয়ায় সে দিন তাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অভিভাবকেরা স্কুলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখানোর পরে বন্দুকটি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। কোথা থেকে সে বন্দুক পেল, কেনই বা স্কুলে নিয়ে গিয়েছিল, পাঁচ দিনের মধ্যে ওই ছাত্রের অভিভাবককে সে সব জানাতে নির্দেশ দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সে দিন দ্বাদশ শ্রেণির সংস্কৃত পরীক্ষা ছিল। পড়ুয়াদের একাংশ জানায়, পরীক্ষা শুরুর আগেই নসিপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই ছাত্রটি বন্ধুদের জানিয়ে দিয়েছিল, ‘আজ কোনও ভয় নেই। আমার সঙ্গে বন্দুক আছে।’ টুকলি ধরতেই সে যখন বন্দুক রয়েছে বলে শিক্ষিকাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে, সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রধান শিক্ষিক ধনরঞ্জন মণ্ডলের কাছে গিয়ে গোটা বিষয়টি জানান।

এরই মধ্যে গোটা স্কুলে বিষয়টি রটে গিয়েছে। স্কুল সূত্রে জানা যায়, আলাপ-আলোচনার পরে কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়ে বন্দুক খুঁজতে একটি ‘টিম’ তৈরি করা হয়। স্কুলের একটি ঘরে পরীক্ষার্থীদের ব্যাগ রাখা ছিল। তাঁরা সেখান থেকে ব্যাগগুলি স্কুলের মাঠে নিয়ে আসেন। তার পরে তল্লাশির সময়ে একটি ব্যাগ থেকে বন্দুক বেরোয়। শিক্ষিকা সংযুক্তা বিশ্বাস বলেন, “আমরা সেটি প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দিই। খুঁজে বের করা হয় ওই ছাত্রকেও।” স্কুল সূত্রে জানা যায়, সে দিন বিকেলেই প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখিত ভাবে ক্ষমা চায় ছাত্রটি। স্কুলে আর কখনও কোনও অন্যায় আচরণ করবে না জানিয়ে চিঠিও দেয়। প্রধান শিক্ষক তাঁকে ক্ষমা করে দেন।

কিন্তু মঙ্গলবার সকালে ফের গোলমাল শুরু হয়। ছাত্র বন্দুক নিয়ে স্কুলে আসা সত্ত্বেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কেন কোনও কড়া ব্যবস্থা নিলেন না, সেই প্রশ্ন তুলে পোস্টার টাঙিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয় স্কুলের গেটে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ভিতরে আটকে থাকেন। খবর পেয়ে কালীগঞ্জ থানার ওসি গৌরীপ্রসন্ন বন্ধু বাহিনী নিয়ে পৌঁছন। পাঁচ জন বাসিন্দা, স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য ও প্রধান শিক্ষককে নিয়ে বৈঠকে বসে পুলিশ। স্কুল সূত্রের খবর, দীর্ঘ বৈঠকের পরে গোটা ঘটনা লিখিত আকারে পুলিশকে জানান প্রধান শিক্ষক। ওসি জানান, পাখি মারার বন্দুকটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

এ দিন ওই ছাত্রের বাবাকেও চিঠি পাঠান প্রধান শিক্ষক। ছাত্রটির বাবা অবশ্য তাঁর ছেলের কাছে পাখি মারার বন্দুক ছিল এ কথা মানতে চাননি। তিনি দাবি করেন, গ্রামের মেলায় খেলনা বন্দুকটি কিনেছিল তাঁর তিন ছেলে। খেলতে গিয়ে সেটি ভেঙেও ফেলেছে। ভাঙা বন্দুক একটি ব্যাগে রাখা ছিল। অজান্তেই ব্যাগটি নিয়ে বড় ছেলে স্কুলে গিয়েছে বলে তাঁর দাবি। স্কুলের কংগ্রেস সমর্থিত পরিচালন সমিতির সম্পাদক গঙ্গারাম মণ্ডলেরও ধারণা, “পরীক্ষার সময় বন্ধুদের ভরসা দিতেই বোধহয় ছেলেটি ভাঙা বন্দুক নিয়ে স্কুলে এসেছিল।”

ওই ছাত্রের বাবা বলেন, “শিক্ষকেরা ধরার পর আমার ছেলে লিখিত ভাবে ক্ষমা চেয়েছে। আমিও ক্ষমা চাইছি। সবার কাছে আমার শুধু একটাই আবেদন, ছেলের জীবনটা যেন নষ্ট না হয়।”

soumen dutta ballabhpara jagannath ashram high school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy