Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

৩৪ নং জাতীয় সড়কে আহতদের জন্য প্রকল্প

গতি আনে মৃত্যু। ‘স্পিড কিলস।’ কথাটা লেখা থাকে বটে ট্রাক-বাসের পিছনে। কিন্তু জাতীয় সড়কের উপর দুর্ঘটনা যাঁরা দেখেছেন, তাঁরাই জানেন কত ভয়ানক সেই মৃত্যু। কেবল নদিয়া জেলাতেই এ বছর এখনও পর্যন্ত পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনশোরও বেশি, জখম ৮৫০। কী করে দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিত্‌সার ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে রানাঘাট পুরসভার প্রেক্ষাগৃহে সম্প্রতি একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘সেভ লাইফ ফাউন্ডেশন।’

গৌরব বিশ্বাস
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪৮
Share: Save:

গতি আনে মৃত্যু। ‘স্পিড কিলস।’ কথাটা লেখা থাকে বটে ট্রাক-বাসের পিছনে। কিন্তু জাতীয় সড়কের উপর দুর্ঘটনা যাঁরা দেখেছেন, তাঁরাই জানেন কত ভয়ানক সেই মৃত্যু। কেবল নদিয়া জেলাতেই এ বছর এখনও পর্যন্ত পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনশোরও বেশি, জখম ৮৫০। কী করে দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিত্‌সার ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে রানাঘাট পুরসভার প্রেক্ষাগৃহে সম্প্রতি একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘সেভ লাইফ ফাউন্ডেশন।’ স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ওই সংস্থাটি গত সাত বছর ধরে এ রাজ্যের পাঁচটি জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় আহতদের সহায়তার কাজ করছে। সম্প্রতি তারা কাজ শুরু করল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কেও।

পথ দুর্ঘটনায় ভারতে প্রতি চার মিনিটে এক জনের মৃত্যু হয়। জাতীয় পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর প্রায় পাঁচ লক্ষ পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রাণ হারান এক লক্ষেরও বেশি ব্যক্তি। গোটা বিশ্বে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যায় ভারত শীর্ষে। দুর্ঘটনায় মৃতদের অধিকাংশেরই বয়স ৩০-৪৪ বছর। অসময়ে এমন মৃত্যু পরিবার, রাষ্ট্রের কাছে অপূরণীয় ক্ষতি। অথচ দুর্ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যে আহতকে হাসপাতালে পৌঁছতে পারলে প্রাণ বাঁচানো সহজ হয়। অতি মূল্যবান ওই এক ঘণ্টাকে তাই বলা হয় ‘গোল্ডেন আওয়ার।’

‘সেভ লাইফ’ সংস্থার সম্পাদক মধুপ্রিয়া বসু দাবি করেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে গত সাত বছরে পাঁচটি প্রধান সড়কে (২, ৬, ৪১, ৬০, ১১৬ বি জাতীয় সড়কে) মোট ২০১৩ জনের প্রাণ বাঁচানো গিয়েছে। সংস্থা একটি টোল ফ্রি নম্বর (১৮০০৩০০২৬২০০) দিয়ে রেখেছে জাতীয় সড়কের পাশে ধাবা, পেট্রোল পাম্প, গ্রামবাসীদের কাছে। ব্যানার লাগিয়ে, লিফলেট বিলি করে নম্বর জানানো হয়। ওই এলাকা-সংলগ্ন জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে ফোন আসে ওই নম্বরে। স্থানীয় মানুষই ফোন করেন, কিছু ফোন থানা থেকেও আসে। পাঁচটি জাতীয় সড়ক মিলিয়ে গড়ে মাসে ৪০-৫০টা ফোন পায় সংস্থাটি।

সহায়তার হাত

• ‘সেভ লাইফ ফাউন্ডেশন’-এর প্রকল্প চলছে ২, ৬, ৩৪, ৪১, ৬০, ১১৬ বি (দিঘা এক্সপ্রেসওয়ে) জাতীয় সড়কে।

• টোল-ফ্রি নম্বর ১৮০০-৩০০-২৬২০০। ফোন করলে সংস্থার কর্মীরা খবর দেবেন অ্যাম্বুল্যান্স, পুলিশ ও নিকটতম হাসপাতালকে।

• অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া দিতে হবে না রোগীকে, সংস্থাই বহন করবে।

• ১৫৯ অ্যাম্বুল্যান্সের মালিকদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে সংস্থার।

• স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে চলছে প্রকল্প।

ফোন পেলেই ‘জিওগ্র্যাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম’-এর মাধ্যমে দুর্ঘটনাস্থলটি শনাক্ত করে সংস্থা থেকে খবর দেওয়া হয় নিকটতম অ্যাম্বুল্যান্স, হাসপাতাল এবং থানাকেও। কতক্ষণে জখম ব্যক্তি দুর্ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতাল পৌঁছল, তার উপরেও নজর রাখা হয়। মধুপ্রিয়ার দাবি, ৯০ শতাংশ রোগীকেই তাঁরা ফোন আসার পরের এক ঘণ্টায় পৌঁছে দিতে পারছেন চিকিত্‌সকের কাছে।

তবে কাজে নানা সমস্যাও আছে। কখনও থানা থেকে বলা হচ্ছে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু পরে জানা যাচ্ছে পুলিশ তখনও পৌঁছয়নি। উঠেছে পুলিশি হয়রানির অভিযোগ।

ট্রাফিকের এডিজি কেএল টামটা নিজেই বলেন, “পুলিশি হেনস্থার ভয়ে আহতকে সাহায্য করতে ভয় পান অনেকেই। দুর্ঘটনায় জখম ব্যক্তিকে সাহায্য করতে আইন কোনও ভাবেই বাধা দিতে বা হয়রান করতে পারে না।” মধুপ্রিয়া জানান, দুর্ঘটনা-প্রবণ এলাকার মানুষকে প্রাথমিক চিকিত্‌সার প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

আহতদের সাহায্যের পাশাপাশি, দুর্ঘটনা কমাতেও পুলিশ নানা উদ্যোগ নিচ্ছে, জানান নদিয়ার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ। চলতি বছর থেকেই চালু হয়েছে ‘সুরক্ষাশ্রী’ পুরস্কার। বছরভর যে চালকরা একটিও দুর্ঘটনা না ঘটিয়ে গাড়ি চালিয়েছেন, তাঁদের জন্য ওই পুরস্কার। আগামী বছর চালু হবে ‘সবুজের সুরক্ষা’, জানান অর্ণববাবু। রাজ্য ও জাতীয় সড়ক লাগোয়া স্কুলগুলির কাছে ক্লাস শুরু ও ছুটির সময়ে ২০ মিনিট যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। নদিয়ার তেহট্ট, তাহেরপুরে পরীক্ষামূলক ভাবে সে কাজ শুরু করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE