Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলে ঠাঁইহারা নন্দীগ্রামের মেয়ে

তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরুটা হয়েছিল নন্দীগ্রামের জমিরক্ষা আন্দোলনের সূত্রে। লোকে তখন তাঁকে চিনতও ‘নন্দীগ্রামের মেয়ে’ হিসেবে। হলদিয়ার বিধায়ক সেই শিউলি সাহাকেই তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড করা হল সোমবার। আর তা নিয়ে উত্তাল নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর।

সুখের দিনে। হলদিয়া বিধানসভা ভোটে জয়ের পর (বাঁ দিকে)। গত বছর হলদিয়াতেই পুজোর উদ্বোধনে মুকুল রায় ও শিউলি সাহা (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

সুখের দিনে। হলদিয়া বিধানসভা ভোটে জয়ের পর (বাঁ দিকে)। গত বছর হলদিয়াতেই পুজোর উদ্বোধনে মুকুল রায় ও শিউলি সাহা (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০০:৩৪
Share: Save:

তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরুটা হয়েছিল নন্দীগ্রামের জমিরক্ষা আন্দোলনের সূত্রে। লোকে তখন তাঁকে চিনতও ‘নন্দীগ্রামের মেয়ে’ হিসেবে। হলদিয়ার বিধায়ক সেই শিউলি সাহাকেই তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড করা হল সোমবার। আর তা নিয়ে উত্তাল নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর।

জেলা রাজনীতিতে শিউলিদেবী বরাবরই অধিকারীদের বিরোধী শিবিরের লোক বলেই পরিচিত ছিলেন। বিশেষ করে তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তাঁর বিবাদ-বিসম্বাদ একাধিক বার প্রকাশ্যে এসেছে। পরে দু’জনকে এক মঞ্চে দেখা গেলেও বিরোধ চিরতরে মেটেনি কখনওই। এ দিন শিউলিদেবীর উপর শাস্তির খাঁড়া নিয়ে মন্তব্য করার ব্যাপারে তাই যথেষ্ট সাবধানী শুনিয়েছে শুভেন্দুর মন্তব্য। তমলুকের সাংসদ বলেন, ‘‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। রাজ্য নেতৃত্ব যা বলার বলবেন। এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’

জেলার রাজনীতিতে অধিকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরিরও। তবে শিউলি প্রশ্নে মুখ খোলার ক্ষেত্রে তিনিও যথেষ্ট সাবধানী। রামনগরের বিধায়ক অখিলবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমি সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। এটা দলের রাজ্য নেতৃত্বের বিষয়। আমি এ নিয়ে মন্তব্য করব না।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী অবশ্য চড়া সুরেই এ দিন বলেন, ‘‘দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণেই শিউলিদেবীকে দল সাসপেন্ড করেছে। দলের হাইকমান্ড (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে জেলায় আমাদের দলের কোনও ক্ষতি হবেনা । কারণ জেলায় ওঁর কোনও রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই।’’

নন্দীগ্রাম কলেজে পড়াকালীন ছাত্র পরিষদ করতেন শিউলি। তৃণমূলের টিকিটে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। সে বার বীরভূমের রাজনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে অবশ্য হেরে গিয়েছিলেন তিনি।

নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনের সময় থেকে শিউলিদেবীর রাজনৈতিক পরিচয় সমৃদ্ধ হয়। তৃণমূল নেত্রীর সুনজের থাকার সুবাদে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছিলেন শিউলিদেবী । কিন্তু সে বারও পরাস্ত হন তিনি। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য হলদিয়া কেন্দ্র থেকে জেতেন। বরাবর মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শিউলিদেবীকে জেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও মুকুলের সঙ্গেই বারবার দেখা গিয়েছে। চলতি বছরেই ১৪ মার্চ শহিদ স্মরণ দিবসে নন্দীগ্রামে গিয়ে তৃণমূলেরই একাংশের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন মুকুল। সে দিনও তাঁর সঙ্গী ছিলেন শিউলিদেবী। তাঁকেও গালিগালাজ ও হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল। বার বার বাধার মুখে পড়ে সে দিন নন্দীগ্রাম থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন মুকুল-শিউলি দু’জনেই।

শিউলিদেবীর আদত বাড়ি পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়ি এলাকায়। বাবা রঞ্জন খাঁড়া কর্মসূত্রে নন্দীগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হন। শিউলিদেবীর মা বনশ্রীদেবী মহিষাদলের গয়েশ্বরী গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পরপরই তৃণমূলের টিকিটে জিতে ২০০৮ সালে নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন বনশ্রীদেবী। রঞ্জনবাবু ও বনশ্রীদেবীর দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে শিউলি মেজ। নন্দীগ্রামের স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করা শিউলিদেবী পরে বিবাহ সূত্রে কলকাতার বাসিন্দা হন। তাঁর স্বামীও তৃণমূলের চিকিৎসক সংগঠনের নেতা। শিউলিদেবীর ভাই সুদীপ খাঁড়া বর্তমানে নন্দীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান। শিউলিদেবীকে সাসপেন্ড করার ব্যাপারে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দিদি দলবিরোধী কোনও কাজ করেছে কিনা আমার জানা নেই। তবে দলের নেতৃত্ব নিশ্চয় সব দিক বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE