অনুমোদন ছিল না, ছিল না নজরদারিও।
প্যারাসেলিং, ওয়াটার স্কুটার কিংবা বিচ-বাইকিংয়ের উচ্ছ্বাসে, গত কয়েক বছর ধরে দিঘা, মন্দারমণি কিংবা তাজপুরের সমুদ্র সৈকত গমগম করে উঠলেও তার বৈধতা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তোলেনি স্থানীয় প্রশাসন।
এই ধরনের ওয়াটার স্পোর্টস বা জলক্রীড়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলি আদৌ মেনে চলা হচ্ছে কি না, যাচাই করার প্রয়োজন মনে করেনি ক্রীড়া দফতরও।
তার খেসারত ইতিমধ্যেই গুনতে হয়েছে বেশ কয়েক জন পর্যটককে।
বছর খানেক আগে দিঘার সমুদ্রে স্পিড বোটের ধাক্কায় গুরুতর জখম হয়েছিলেন এক পর্যটক। বেসরকারি এক হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন তিনি। মন্দারমণির সৈকতে হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ি ছোটানোও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হালে। তা করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় দুই পর্যটক মারা যাওয়ার পরেও হেলদোল ছিল না পুলিশ-প্রশাসনের।
রবিবার বিকেলে প্যারাসেলিং করতে গিয়ে সৈকতের হাইমাস্ট-এ প্যারাশ্যুটের কাপড় জড়িয়ে বেলডাঙার তরুণ ঘোষের মৃত্যু সেই তালিকায় শেষ সংযোজন।
তবে এ বার আর দায় এড়াতে পারেনি প্রশাসন। মন্দারমণি এবং তার লাগোয়া সৈকতে প্যারাসেলিং-সহ অন্য ওয়াটার স্পোর্টসের উপরে ফতোয়া জারি করেছে তারা।
বিরোধীদের প্রশ্ন, এত দিন ধরে বেআইনি ভাবে চলা এমন ঝুঁকির বিনোদন বন্ধ করার সাহস দেখায়নি কেন দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিএ), কেনই বা সব দেখেও নির্বিকার ছিল জেলা প্রশাসন?
উত্তরটা দিচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক তাবড় নেতা। বলছেন, ‘‘সাহস দেখাবে কী করে, রাজ্যের দুই মন্ত্রী নিজেরা এসে চালু করে গিয়েছিলেন প্যারাসেলিং-ওয়াটার স্কুটারের মতো স্পোর্টস। ডিএসডিএ ওই খেলা বন্ধ করার ঝুঁকি নেবে?’’
২০১১ সালের ডিসেম্বরে রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী দিঘায় প্যারাসেলিং, বিচ বাইক-সহ বেশ কিছু ওয়াটার স্পোর্টস চালু করে গিয়েছিলেন। মন্ত্রীদের সিলমোহর পড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই তার বৈধতা নিয়ে আর প্রশ্ন তোলার ঝুঁকি নেননি ডিএসডিএ-র কর্তারা।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য সোমবার বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসন এই ধরনের ওয়াটার স্পোর্টসের অনুমতি দেয়নি। কীভাবে সৈকতে এ সব হচ্ছিল জানি না। তবে রবিবারের ঘটনার পর সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, এ ব্যাপারে পরবর্তী সরকারি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সৈকতে সব রকম ওয়াটার স্পোর্টসের বন্ধ থাকবে। তাঁর দাবি, সৈকত জুড়ে যে ওই সব ওয়াটার স্পোর্টস চলছে তা ডিএসডিএ-র’ কর্তারাও জানতেন না।
রাজ্যের ক্রীড়া দফতরের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য কবুল করেছেন, ‘‘মন্দারমণিতে যে এ সব চলছে তা ক্রীড়া দফতরের অজানা ছিল। ক্রীড়া দফতর কোনও অনুমতি দেয়নি। কী করে এমন চলছিল তা জেলা প্রশাসনই বলতে পারবে।’’
তিনি জানান, এই ধরনের খেলাধুলো চালানোর জন্য ক্রীড়া দফতরের কাছে কোনও নির্দিষ্ট আইন-বিধিও নেই। ফলে দফতর প্রশাসনিক ভাবে এদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাহলে এই সব খেলার বৈধ ছাড়পত্র দেবে কে?
ক্রীড়া কর্তারা জানাচ্ছেন, এই ধরনের খেলাধুলো চালাতে গেলে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে, পূর্ত কর্তাদের সরজেমিন পরিদর্শনের পর তা চালু করার রীতি রয়েছে। তবে, কোনও নির্দিষ্ট অনুমতির ব্যবস্থা এ রাজ্যে নেই।
কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক এবং ফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস অবশ্য এ কথা বলছে না। জানা গিয়েছে, সৈকতে প্যরাসেলিং কিংবা বিচ বাইকিং চালাতে গেলে নির্দিষ্ট কতগুলি শর্ত মেনে চলা আবশ্যক। পর্যটন মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, ‘রাফ সি’ বা যে সব এলাকায় সমুদ্র উত্তাল সেখানে এই এই ধরনের খেলা একেবারেই নিষিদ্ধ। প্যরাসেলিংয়ের ক্ষেত্রে পাথুরে সৈকত হলে চলবে না। তা ছাড়া, সৈকতের ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনও উঁচু স্তম্ভ, বাড়ি এমনকী কাছাকাছি বিমান বন্দর থাকলেও প্যরাসেলিংয়ের অনুমোদন মিলবে না। ফেডারেশনের কর্তা বিনোদ শর্মা বলছেন, ‘‘এই ধরনের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের ক্ষেত্রে সৈকতে অবশ্যই মেডিক্যাল কিট, অ্যম্বুল্যান্স, এবং লাইফ জ্যকেট নিয়ে ডুবুরি থাকার কথা। থাকার কথা, এই ধরনের খেলায় প্রশিক্ষণ রয়েছে এমন বিশেষজ্ঞেরও।’’
মন্দারমণিতে অবশ্য এ সব শর্তের কোনটাই মেনে চলা হয়নি, ক্রীড়াকর্তারাই তা মেনে নিচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy