মহকুমা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও কেটেছে দীর্ঘ ১৪ বছর। অথচ পরিকাঠামো এখনও সেই তিমিরেই। অভিযোগ, স্বাস্থ্য, নিকাশি, রাস্তাঘাট কোনও ক্ষেত্রেই পরিষেবা পাচ্ছেন না চাঁচলের মানুষ। সংশোধনাগার, খাদ্য নিয়ামকের দফতর, পরিবহণ দফতরের অফিস হলেও আধিকারিক নিয়োগ না হওয়ায় প্রশাসনিক কাজেও অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। কবে হাল ফিরবে জেলা কর্তাদের বক্তব্যে তার দিশা মেলেনি।
২০০১-এর পয়লা এপ্রিল মহকুমা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল মালদহের চাঁচল। মহকুমা গঠন হতেই বিশেষ করে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন বাসিন্দারা। ভেবেছিলেন, কথায় কথায় তাঁদের ৭০ কিলোমিটার দূরে মালদহ হাসপাতালে ছুটতে হবে না। কিন্তু অভিযোগ, খাতায় কলমে মহকুমা হাসপাতাল হলেও বাড়েনি চিকিৎসক সংখ্যা। পরিকাঠামোও রয়ে গেছে একই জায়গায়। ফলে, সামান্য জটিল রোগেও রোগীদের রেফার করা হয় মালদহ মেডিক্যালে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, মহকুমা গঠনের পর চাঁচলে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই অতিরিক্ত আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকের দফতর হয়েছে। কিন্তু আধিকারিক পদে কেউ নিযুক্ত হননি। তাই কাজও হচ্ছে না। কোনও বাস টার্মিনাস না থাকায় সদরের সব ক’টি রাস্তা জুড়েই দাঁড়িয়ে থাকে বাস, ম্যাক্সি, ট্রেকার থেকে শুরু করে সব যানবাহন। সকাল থেকেই যানজটে জেরবার হতে হয় যাত্রীদের। বেহাল রাস্তাঘাটও। মহকুমাশাসকের বাংলোর রাস্তা, থানা, বিডিও অফিসের রাস্তা এতটাই বেহাল যে সামান্য বৃষ্টি হলেই ডোবায় পরিণত হয়। নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই জলে ভাসে সদরের পথঘাট। এই এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও কখনও মেরামত করা হয়নি ভগ্নপ্রায় বাজারগুলি। জেলা স্তর থেকে রাজ্য প্রশাসনের নানা স্তরে যোগাযোগ করে বাসিন্দারা দিনের পর দিন নানা আশ্বাস পেলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই।
মহকুমার পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো গড়ে না ওঠার জন্য সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রশাসনের কর্তাদেরও। যেমন মহকুমা সংশোধনাগার তৈরি না হওয়ায় আদালতে জামিন না পাওয়া বন্দিদের প্রতিদিন মালদহে নিয়ে যাওয়া ও নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হয়। এতে বাড়তি খরচের পাশাপাশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনকে। এখানে নেই মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের দফতর। মহকুমা আদালত চালু হলেও অতিরিক্ত জেলা জজের কোর্টও চালু হয়নি এখনও।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে অতীতে মালদহের জেলাশাসকেরা যা বলেন, বর্তমান ডিএম শরদ দ্বিবেদীও তার বাইরে যাননি। এই ব্যাপারে ডিএম-এর বক্তব্য, “চাঁচলে শীঘ্রই মহকুমা হাসপাতালের কাজ শুরু হবে। অন্য যে সব দফতর চালু হয়নি তা নিয়েও প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছে। বিভিন্ন দফতর যাতে চালু হয় সেই প্রস্তাব রাজ্যকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
চাঁচলের মহকুমাশাসক সঞ্জীব দে এই প্রসঙ্গে বলেন, “প্রশাসন বসে নেই। পূর্ণাঙ্গ মহকুমা গড়ার জন্য সব উদ্যোগই জারি রয়েছে।”
অর পাশাপাশি জারি রাজনৈতিক তরজাও। সিপিএমের চাঁচল জোনাল কমিটির সম্পাদক হামেদুর রহমান এ জন্য দুষছেন বর্তমান সরকারকে। তাঁর অভিযোগ, “চাঁচল পুরসভা হবে তা বাম আমলেই ঘোষিত। তৃণমূল সরকার ফের সেই ঘোষণা না করে তা রূপায়ণ করার ব্যবস্থা নিলে কাজের কাজ করা হতো।” চাঁচলের কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ মেহবুব অবশ্য বাম আমলের সঙ্গে তৃণমূল জমানার তেমন ফারাকা দেখতে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, “বাম আমলে বিধানসভায় বহু বার বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছি। চাঁচলের সমস্যা নিয়ে বামেদের মাথাব্যথা ছিল না। আর এখনকার রাজ্য সরকারেরও হেলদোল নেই।” আর তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মজিবর রহমান পাল্টা অভিযোগে বলেন, “সিপিএম ও কংগ্রেস চাঁচলের উন্নয়ন নিয়ে ভাবলে এ দশা হত না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy